দুঃখ আর হতাশা একটা ছেলের জন্য যতটুকু সহনীয় মেয়েদের জন্য নাকি তা আরও বেশি সহনীয়।কিন্তু,এই কষ্ট..
সাব্বির দ্বাদশ শ্রেনিতে পড়ে,সে নম্র,ভদ্র এবং সুদর্শন ছেলে।পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ায় তার মা-বাবা কখনো তার কোনো কিছুর অভাব রাখে নি,সে যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।
কিন্তু এই মুহুর্তে সে একটি সুইসাইড নোট লিখছে।
,
২০১১ সালে সে ক্লাস সিক্সে পড়ত।তাদের ক্লাসে অনেক ছাত্রছাত্রী ছিল।তাদের মধ্যে একজন ছিল যার নাম সানজিদা।সে দেখতে তেমন সুন্দর না হলেও তার ব্যবহার ছিল খুব ভালো এবং নম্র।সবার সাথেই তার বন্ধুত্বপূর্ন স্বভাব সাব্বিরকে তার প্রতি আকর্ষন তৈরী করায়।ভালবাসা সম্পর্কে তেমন কোনো ধারনা ছিল না কিন্তু তবুও সাব্বিরের মনে হত সানজিদাকে সে ভালবাসে।একই শ্রেনীতে পড়ার কারনে তাদের মধ্যে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠে।
মধ্যবর্ষ পরীক্ষার পর সাব্বির সানজিদাকে প্রপোজ করে। সানজিদা তখন কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যায়।সাব্বির অপেক্ষায় ছিলো সানজিদা তার উত্তর দিবে।
.
এঘটনার পর তিনদিন সানজিদা স্কুলে আসেনি।তিনদিন পর সে স্কুলে আসে। ক্লাসে তাদের মধ্যে কথা হয় নি,সাব্বির সানজিদার সাথে কথা বলার জন্যে ছুটিরপর স্কুলের গেইটে দাঁরিয়ে থাকে। সানজিদা তাকে দেখে আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে তার পাশে দাড়ায়।
.
-কেমন অাছো? (সাব্বির)
-ভালো...তুমি কেমন আছো...?(সানজিদা)
-আমি ভালো না....!
-কেনো....?
-তুমি আমার উত্তর দিলে না তাই..
-ওহ...তাই...!
-তুমি কি আমাকে পছন্দ করো না
-নাহ্...
-নাহ্ মানে কি আমি বুঝে নিবো তুমি আমাকে ভালবাসো না...
-আমি কি বলছি.. তোমাকে আমি ভালবাসি না...
-তো,পছন্দ কর না বললে?
-এমনি,তবে আমি তোমাকে পছন্দ করি এবং ভালবাসি কিন্তু ভয় হয়!
-কিন্তু কেনও...
-আমাদের সম্পর্ক যদি কেউ মেনে না নেয় তাই।আমি দেখতে সুন্দর না যদি তোমার পরিবার মেনে না নেয়!
-পরিবারকে আমি ম্যানেজ করব,তাছাড়া আমার পরিবার আমার পছন্দের বিপক্ষে যাবে না,তুমি তা নিয়ে চিন্তা করো না।
-তবুও...
-তবুও কিছু না।আমি তোমাকে ভালবাসি তুমি আমাকে ভালবাসো কিনা বলো।
-আমি তোমাকে ভালবাসি।
তারপর থেকেই তাদের দুষ্টুমিষ্টি,মান-অভিমানের সমন্বয়ে ভালোবাসা চলতে থাকে।
এভাবে তাদের দিন কাটে.......।
.
পাঁচ বছর পর,
সাব্বির আর সানজিদা কলেজে উঠে,একই কলেজে দুজন ভর্তি হয়। এর মধ্যে সানজিদার পরিবার তাদের সম্পর্কের কথা জেনে যায়।
সানজিদা সাব্বিরকে বিয়ের জন্য পেশার দিচ্ছে। ওর পরিবার ওকে বিয়ে দিতে পাত্র খুঁজচ্ছে। সাব্বিরের পরিবারও সব জেনে যায়....। সানজিদার বাবা সাব্বিরের পরিবারে নালিশ দিয়েছিল তাই....।
সাব্বিরের আম্মু সাফ মানা করে দেয় ওই মেয়েকে আমি আমার বউ হিসেবে আনবো না কারন সে দেখতে সুন্দর না,তিনি তার ছেলের জন্য সুন্দরী বউ আনবে।তাছাড়া এতো অল্পবয়সে তিনি তার ছেলের বিয়ে দিতে চান না।
,
সাব্বির তার মাকে অনেক ভাবে বলেও মানাতে পারে না...।চিন্তা করে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলবে।কিন্তু সে বেকার আর হাতে তেমন টাকা-পয়সা নাই যে পালিয়ে যাবে।তার দুই বন্ধু রাকিব,রিমন ওদের কাছে কিছু সাহায্য চাইলো কিন্তু তারাও তার মত ছাত্র। তারা তাকে তিন হাজার টাকার বেশী যোগার করে দিতে পারে নি।
.
সানজিদার ফোন...
-Hello, কিছু একটা হলো.?
-নাহ.....!
-তুমি কিছু করো আর না হয় আমি মরে যাবো।বাসায় আজ আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে,প্লিজ তুমি কিছু একটা কর এই বলে কল কেটে দিলো।
সাব্বির কি করবে ভেবে পায় না।
এদিকে সানজিদাকে কলেজেও আসতে দেয় না তার পরিবার।
সাব্বিরের চোখে পানি এসে পড়ে সে আটকাতে পারে না। সে বাড়ি ফিরে রাতে না খেয়ে ঘরে দরজা লাগিয়ে কাঁদছে...।
সন্ধ্যার পর সানজিদা ফোন করে জানায়,
পাত্রপক্ষ তাকে পছন্দ করে ফেলেছে আগামী সপ্তাহে তার বিয়ের তারিখ ঠিক করে গেছে।
,
সাব্বির কাঁদছে আর ভাবছে সানজিদাকে ছাড়া সে বাঁচবে না আর সে বেচেঁ থাকতে সানজিদার অন্যকারো সাথে বিয়ে হতে দেখতে পারবে না।
তাই সে মধ্যরাতে চিঠি লিখতে বসে অর্থাৎ সুইসাইড নোট।
,
প্রিয় মা,
আপনি যখন আমার এই চিঠি পাবেন এতক্ষনে আমি হয়তো না ফেরার দেশে চলে গেছি। আমার সুইসাইডের জন্য তোমাদের কাউকে দায়ী ককরছি ননা।আমি পৃথিবীর নিয়ম এর কাছে হেরে গেছি, তাই আমি পৃথিবী থেকে চির-বিদায় নিচ্ছি।আচ্ছা পৃথিবীতে কেউ জন্ম নেয়ার আগে কি আল্লাহ্ তার কাছে জিজ্ঞাস করেন তুমি কি রং নিয়ে, কি মুখ নিয়ে, কি চুল নিয়ে,কতটুক উচ্চতা নিয়ে জন্ম নিবে...?
যদি তাই হতো তো কেউ পৃথিবীতে কালো আর খাটো হয়ে জন্ম নিতো না। আমি তো শুধু সানজিদাকে ভালোবেসেছিলাম ওর রুপকে নাহ। ও কালো কি ফর্সা আমি এটা দেখি নি। তোমাদের কাছে রুপই সবকিছু।
আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি আর পারছি না, সানজিদাকে আমি বেঁচে থাকতে অন্য কারো হতে দেখতে পারবো না, তাই বিদায় নিলাম!
.
(সমাপ্ত)
.
.
.
[বি:দ্র:- কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে লেখা এই গল্প।]
.
লেখক : সৈয়দ এস.এ.এ(অল্প কিছু গল্প)
Rakib Alom