ছেলেটা এতক্ষন ধরে পিছু নিয়েছে।মতলবটা কি এই ছেলের?এতক্ষনতো কিছুই মনে হয়নি।কিন্তু,এখনতো বেশ ভয় করছে।আকাশের অবস্থা ভাল
আজ অগ্নিদ্বীপের রাজপুত্রের বিয়ে। সমস্ত রাজ্যে তাই উৎসব, এমন সমারােহ কেউ কোনােদিন দেখেনি।
পাত্রী মরকতপুরের রাজকন্যা মণিমালা! আহা-কী তার রূপ! যেন আগুনের ফুল, যেন তারা দিয়ে গড়া মূর্তি। চোখ ঝলসে যায়। | আর রাজপুত্র প্রদীপকুমার? বীরের হাতের ঝকঝকে তলােয়ারের মত তার শরীরটি। বয়স তার অল্পই, কিন্তু বিদ্যায়। বীরত্বে এর মধ্যেই তিনি অদ্বিতীয় হয়ে উঠেছেন। এতদিনে এলাে সেই পরম শুভ দিন।
ভিড় করে দাড়িয়ে সব পথের দু'ধারে, এখনই শােভাযাত্রা করে রাজপুত্র নগর দেখতে বেরােবেন। সমস্ত প্রজারা চোখ ভরে তাকে দেখবে আজ, প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করবে।
দুশাে হাতী এলাে গম্ভীর পা ফেলে, পাঁচশাে ঘােড়া গেলাে টগবগিয়ে, রাজবাড়ির মেয়েরা গেলেন রঙের ঢেউ তুলে, তারপর সকলের শেষে আটটা ধবধবে সাদা ঘেড়ায় টানা গাড়িতে এলেন রাজপুত্র। একদিকে তার বুড়াে মন্ত্রীমশাই, অন্যদিকে সেনাপতি শার্দূলবিক্রম। আহা কী সুন্দর উজ্জ্বল কোমল মুখশ্রী।
বড়াে বড়াে রাস্তাগুলাে ঘুরে শােভাযাত্রার ফিরে যাবার কথা, কিন্তু বকুল-কুঞ্জের ধারে এসে প্রাসাদের দিকে যখন গাড়ি ঘুরছে, তখন প্রদীপকুমার বললেন, নগর তাে দেখা হল না।
মন্ত্রীমশাই বললেন, সবই তাে দেখা হলাে রাজপুত্র। চতুরঙ্গ পথ, মধুবনানী, পণ্যবিথিকা, ক্রীড়াকানন তারপর . রাজপুত্র বললেন, ‘ছেলেবেলা থেকে এ-সমস্ত জায়গা। কতবারইতাে দেখেছি। কোনােদিন আর কিছু দেখিনি। আজ আমি সমস্ত শহর দেখতে চাই- যেখানে প্রজারা থাকে'।
‘সেখানে কিছুই দেখবার নেই। ‘যা আছে তা-ই দেখবাে। নিয়ে চলুন আমাকে সেখানে।
একটা চলন্ত পাহাড়ের মতাে অতি সংকীর্ণ গুলিতে এসে ঢুকলাে। আট ঘােড়ার গাড়ি। আস্তে পা ফেলে-ফেলে ঘােড়াগুলাে চলেছে। ছােট্ট গায়ে-গা-লাগা বাড়িগুলাে জানলায়-জানলায় কত ভীরু। চোখের অগাধ কৌতুহল। প্রদীপকুমার বলে উঠলেন, 'এ কী! আমার সমস্ত রাজ্য এত সুন্দর, আর এ-সব জায়গা এত কুৎসতি কেন?
মন্ত্রী বললেন, ‘রাজপুত্র, এখানে যে গরিবরা থাকে। এর বেশি তারা কোথায় পাবে?'
এখানে যে নিঃশ্বাস নেয়া যায় না। মানুষ এখনে বাচে কেমন। করে?'
গলিঘুজি পার হয়ে গাড়ে প্রায় বেরিয়ে এসেছে, এমন সময়। হাওয়ায় জড়ানাে সেই মধুর সূর ছাপিয়ে আর একটা করুণ শব্দ রাজপুত্রের কানে পৌছলাে। বনের গভীর নির্জনতায় হঠাৎ তীর। খাওয়া হরিণের মতাে চমকে উঠলেন তিনি। এ কী! এ যে কান্না। কে কাঁদে? আজকের দিনে কে কাঁদে? রাজপুত্র বলে উঠলেন, ‘কে কাঁদে ওখানে?
অমনি ছুটলাে দশজন সেপাই হৈ-চৈ করে খানিক পরে ধরে। নিয়ে এলাে যাকে, তাকে দেখে রাজপুত্রের মুখ দিয়ে একটা অস্ফুট আতঙ্কের শব্দ বেরুলাে। উঃ, মানুষে এমন মূর্তি হয়!
কঙ্কালসার একটা স্ত্রীলােক, মাথায় লালচে চুলগুলাে জট বাঁধা, চোখ কোথায় বসে গেছে বােঝাই যায় না। কান্নার চাপে মুখ তার। এমন কুৎসতি রকম বিকৃত যে দেখতে ভয় করে।
হাত জোড় করে বললে সেই স্ত্রীলােক, ‘ওগাে রাজপুত্র, আমার একটা ছেলে ছিলাে, তােমারই মতাে তার বয়স- পাথরের খাদে কাজ করতাে- একটাই ছেলে আমার অসুখ তার, অসুখ-চার মাস ধরে পড়ে আছে বিছানায়
সেনাপতি হুকুম দিলেন চালাও গাড়ি পুরােদমে, আর নয়।
ছুটলাে গাড়ি পুরােদমে, যেন পলক না-ফেলতে আবার এসে পড়লাে রাজপ্রাসাদে। প্রদীপকুমার গাড়ি থেকে নামলেন- আস্তে আস্তে শ্বেতপাথরের উজ্জ্বল সিঁড়ি বেয়ে উঠলেন প্রাসাদে, ঢুকলেন গিয়ে তার ঘরে। কারাে সঙ্গে একটা কথা বললেন না।
রাজা বললেন, প্রদীপের মুখ ম্লান দেখছি কেন?
মন্ত্রী বললেন, ‘রােদ লেগেছে ক্লান্ত হয়েছেন!
খানিক পরে তিনি গেলেন প্রদীপকুমারের ঘরে । রাজপুত্র জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে।
মন্ত্রী বললেন, ‘রাজপুত্র, মরকতপুরের পুরনারীরা এসেছেন। মাঙ্গলিক নিয়ে। একবার তােমাকে একটু আসতে হবে।'
তাদের চলে যেতে বলুন। রাজপুত্রের মুখের দিকে তাকিয়ে মন্ত্রীর কী মনে হল, তিনি গেলেন চলে। একটু পরে স্বয়ং আদিত্যবর্ণ সে ঘরে এসে ব্যস্তভাবে বললেন, ‘প্রদীপ, এ কী শুনছি?'
প্রদীপকুমার শান্তভাবে বললেন, 'বাবা, আজ আমার বিয়ে হবে না।'
‘এ কী কথা, প্রদীপ!
‘না- না, হবে না! যতদিন আমার এই রাজ্যে একজন মানুষও। কাঁদবে, ততদিন কোনাে উৎসব কোনাে আনন্দে আমার অংশ নেই।। তােমরা আমাকে এতদিন ঠকিয়ে এসেছাে, আর ঠকাতে পারবে না। আজ আমি নিজের চোখে দেখেছি, নিজের কানে শুনেছি। বন্ধ করে দাও সমস্ত উৎসব, ফিরিয়ে দাও মরকতপুরের উপটোকন- যতদিন। আমার রাজ্যে কেউ কাঁদবে ততদিন রাজপুত্র যেন আমাকে কেউ না
বলে।
প্রাসাদ ভবনে পান্না-বসানাে জানলায় ভােরের সূর্য ঠিকরে পড়েছে, শখের-কাজ করা দেয়ালে জ্বলে উঠেছে হাজার ছোট্ট ছােট রামধনু। সেই দিকে তাকিয়ে প্রদীপকুমার বললেন, 'বিষাণ’ এটা তােমাকে করতে হবে।'
শিউরে উঠে বিষাণনাথ বললেন, না না, প্রদীপ। তােমার জন্যে আমি সব পারি, কিন্তু এ আমি কিছুতেই পারবাে না।
রাজপুত্র বললেন, 'বিষাণ, ছেলেবেলা থেকে আমরা একসঙ্গে খেলছি, পড়ছি, বেড়িয়েছি। তােমার মতাে বন্ধু আমার কেউ নেই। তা ছাড়া তােমার সঙ্গে আমার চেহারার মিলও আশ্চর্য! রাত্রির তৃতীয় প্রহরে বিবাহের লগ্ন।
‘কিন্তু তারপর?
‘কিছু ভয় নেই। তুমি আমার চেয়ে অযােগ্য কিসে? অগ্নিদ্বীপ আর মরকতপুর তােমাকে নিয়েই ধন্য হবে।
মনে-মনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বিষাণনাথ বলেন, আর তুমি? ‘আমি মানুষের কান্না শুনেছি, মানুষের কান্না আমি থামাবাে। প্রদীপকুমার বিষাণনাথের হাত ধরে বললেন, ‘পারবে না বন্ধু? ক্ষণেক ইতস্ততঃ করে বিষাণনাথ বললেন, ‘পারবাে।'
সন্ধ্যার পরে রাজপুত্র প্রদীপকুমার একা চলেছেন পথ দিয়ে হেঁটে। পরনে তার সাধারণ পােশাক, লক্ষ্য প্রদীপ জ্বলে উঠেছে নগরে, পথে হাজার হাজার মেয়ে পুরুষের ভিড়। তাদের মুখে চোখে একটা লােলুপ ফুর্তি, একমাস ধরে তারা পেট ভরে খাবে । উজ্জ্বল আলােয় ভিড় ঠেলে চলেছেন রাজপুত্র; কেউ তাকে চিনছে
। আমার কোন পরিচয় নেই’, রাজপুত্র মনে মনে বললেন, আমার রাজবেশই আমার পরিচয়।
গেলেন তিনি বকুল-কুঞ্জ ছাড়িয়ে ঢুকলেন তিনি গরিবদের পাড়ায়! বেশির ভাগ বাড়ি অন্ধকার, সবাই গেছে রাজবাড়ির উৎসবে।
অন্ধকার গলিতে ঘুরতে-ঘুরতে হঠাৎ তার চোখে পড়লাে, ছােট একটি মেয়ে রাস্তার উপরেই বসে পড়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। নিচু হয়ে তার গায়ে হাত দিতেই সে চমকে তাকালাে, তারপর এক নিঃশ্বাসে তার কান্না থামিযে হাসবার চেষ্টায় মুখখানা তার বীভৎস হয়ে উঠলাে।
‘ওগাে আমায় মেরাে না, আর কাদবাে না আমি।' ‘তােমাকে আমি মারবাে কেন?'
‘জানাে না, মেয়েটি ফিসফিস করে বললে, আমাদের রাজার হুকুম হয়েছে, আজ থেকে এক মাসের মধ্যে এই রাজ্যের যে কাদবে তার আর রক্ষে নেই।
কে আমাকে নিয়ে যাবে? আমার মা নেই, এক শ্ৰেষ্ঠীর বাড়িতে দাসীর কাজ করি। ওরা সবাই গেলাে, ছেলে মেয়েরা সেজেগুজে হাসতে হাসতে গেলাে, আমি যেতে চেয়েছিলুম- ওরা বললে, “ইস, খোড়ার আস্পর্ধা দ্যাখ । উনি যাবেন!” নিয়ে গেলাে না আমাকে।
রাজপুত্র বললেন, এখানে একজন বুড়ি থাকে, তার ছেলের খুব। অসুখ, চেনাে তাকে?
‘কত বুড়িই তাে আছে, কত লােকেরই অসুখ, কার কথা। বলছাে?'
‘পাথরের খাদে কাজ করতাে ছেলে‘ও আমাদের সােলার কথা বলছাে? ও তাে আজ সকালে মরে। গেছে, মা টা গেছে পাগল হয়ে ।
‘একটা কাজ করবে তুমি? এই থলিটা দিয়ে এসাে ভেসালার। মাকে, পারবে না?' ‘খুব পারবাে। কী আছে এই থলিতে?’ ‘সােনা। ‘সােনা! এত সােনা ওকে দিচ্ছ?' ‘এ সমস্ত সােনাই ওর। ওর পাওনা ছিলাে আমার কাছে। ‘তুমি- তুমি কে?' ‘আমি তােমাদের রাজপুত্র।
খিলখিল করে হেসে উঠলাে মেয়েটা। ওঃ তােমার সাহাস তাে দেখছি কম নয়! আমাদের রাজপুত্রের কানে একথা গেলে তােমার হয় তাে ফাসিই হয়ে যাবে।'
যাও, দিয়ে এসাে। আমি এখানে দাঁড়াচ্ছি।'
খানিক পরে মেয়েটা ফিরে এলাে-ও নিলে না, ছুঁড়ে ফেলে দিলে! হী হী করে হাসছে- এমন ভয় করছিলাে আমার! এক্কেবারে পাগল হয়ে গেছে।
রাস্তার উপরে জোয়ান কয়েকটা পুরুষ মানুষ উবু-হাঁটু হয়ে বসে। ঘরের দরজায় দু একজন স্ত্রীলােক ছায়ার মতাে দাঁড়িয়ে। রাজপুত্রকে আসতে দেখেই একজন ফিসফিস করে বললে, ‘ঐরে, আসছে গুপ্তচর।'
রাজপুত্র তাদের কাছে এসে বললেন, 'আজ এই উৎসবের দিনে তােমরা এখানে বসে কী করছাে?
একজন মােটা গলায় বললে, ‘দু'মাস না খেয়ে আছি, আরাে। একমাস না খেয়ে থাকতে পারবাে।'
কী হয়েছে তােমাদের ?
ব্যাঘবনের ভিতরে দিয়ে রাস্তা খোঁড়বার কাজ ছিল আমাদের। সাতজনকে বাঘে খেয়েছে। তাদের স্ত্রী-পুত্রদের আমরাই খাওয়াতে পারতুম। কাজ থাকলেই আমরা খুশি, কাজটা যাই হােক। এখন রাজপুত্রের বিবাহে অনেক খরচ হচ্ছে কিনা- তাই ঐ রাস্তা খোড়ার কাজ দু'মাস আগে থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। তার উপর আমাদের প্রত্যেকের উপর কর বসানাে হয়েছে- মরীয়া হয়ে তাও দিয়েছি, নয়তাে মারধাের করে। কিন্তু রাজবাড়ির নেমন্তনে যেতে পারবাে না....।।
“কেন, রাজার কিসের অভাব যে তােমাদের কাছে হাত পেতেছেন, রাজপুত্রের বিয়ের খরচের জন্য?
হাে-হাে করে হেসে উঠলাে লােকগুলাে কোথাকার লােক হে তুমি? রাজার এত ঐশ্বর্য এদের কাছ থেকে নিয়ে! কই, আমাকে তাে কেউ কোনাে দিন সে-কথা বলে নি। তারপর ওদের মাঝখানে। দাড়িয়ে তিনি বললেন, ‘শােনাে, এই নাও তােমরা; এর মধ্যে সােনা। আছে। এই নাও, এই নাও।' রাশি রাশি সােনা বার করে ওদের মধ্যে ছড়িয়ে দিলেন তিনি।
লােকগুলাে হকচকিয়ে গিয়ে বললেন, কে তুমি? এত মােহর কোথায় পেলে?
আমি তােমাদের রাজপুত্র। বিকট অট্টহাস্য করে উঠল লােকগুলাে। একজন প্রচণ্ড আওয়াজে বলে উঠল, ‘চালাকি পেয়েছ তুমি? আমাদের রাজপুত্র সেজে ঠকাতে এসেছাে তুমি? কোথায় পেলে এত মােহর শিগগির বলে।!
‘এ সমস্ত রাজকোষের! আমি তােমাদের রাজপুত্র!’ মােটা একটা জোয়ান লােক খপ করে রাজপুত্রের হাত ধরে
ফেললাে।
রাজপুত্র বললাে, “উঃ! হাত ছাড়াে!'
‘জোচ্চর! ঠগ! শয়তান! বলাে কত চুরি করেছ রাজকোষ থেকে?
রাজপুত্র বললেন, ‘চুরি আমি করেছিলাম, এই বার ফিরিয়ে। দিতে এসেছি!’
একজন বললেন, হ্য! হ্য! উনি রাজপুত্র। পাগল। ছেড়ে দে ওকে দুটো ঘুসি দিয়ে।'
| ছােট মেয়েটি বললে, “আহা! ওকে মেরাে না, বড় ভাল। কিন্তু তার আগেই রাজপুত্রের নাকের ওপর এক প্রচণ্ড ঘুসি পড়েছে। দরদর করে রক্ত পড়তে লাগলাে মুখ বেয়ে। মেয়েটা হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলাে।
চরদিক থেকে একটা কলরোল উঠলো, 'চোর চোর। মার ব্যাটাকে মার। মেরে পুতে ফলি।
ছােট মেয়েটা কাদতে দিতে বললে, 'মেরে মেরােনা ওকে। কিন্তু কে কার কথা শােনে? মেয়েটা ওদের পায়ে লুটিয়ে বললেন, ‘মেরোনা ওকে।' কিন্তু চার পাঁচ জন জোয়ান ওকে পায়ের নিচে মাড়িয়ে এগিয়ে গেলাে খুঁসি উঠিয়ে । মার খেতে খেতে রাজপুত্র মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন।
খানিক পরে সব ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। চারদিক চুপচাপ অন্ধকার!
এর থেকে হাওয়ায় ভেসে আসছে উৎসবের শব্দ । রাত্রির শেষ প্রহরে প্রহরী নগরের পথে পথে বেরুলো। হঠাৎ একটা অন্ধকার গলিতে তাদের একজন দেখলে, একটা লােক রাস্তার উপরে পড়ে রয়েছে, রক্ত পড়ে তার গায়ে কালাে হয়ে জমে আছে, মাথাটা অনেক জায়গায় ফাটা। আর তার পাশেই ছােট্ট একটি মেয়ে বসে আছে।
তারপর....।
প্রহরীদের হুকুমে চারজন ডােম এসে প্রদীপ কুমারকে আর সেই ছােট্ট মেয়েটাকে নিয়ে গেলাে ।
0 Comments Here
Authentication required
You must log in to post a comment.
Log in