অবনীকে তুমি কি বলেছো?
অয়ন্তিকার কথায় আমি ওর দিকে শান্ত চোখে তাকাই।নরম মেয়েটাকে আজ বেশ কঠিন রূপে দেখা যাচ্ছে।যে রূপ আমি আগে কখনও দেখিনি।অবশ্য এরকম রেগে থাকলে অয়ন্তিকাকে খুব একটা খারাপ দেখায় না।ভালই লাগে।আমার চুপ থাকায় অয়ন্তিকা আবারও বললো,
-তুমি অবনীকে কি বলেছো?
অয়ন্তিকার কথায় আমি এবার ওর দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে বলি,
-আমি!কোই কিছু না তো।
অয়ন্তিকা আমার কথায় চোখ রাঙিয়ে বলে,
-কিছুই বলোনি?
অয়ন্তিকার কথায় আমি আবারও চুপ করে থাকি।ভাবতে থাকি।কি বলেছিলাম।মনে পড়ছে না।মনে যে পড়ছে না, এটা ভুল।মনে করতে চাচ্ছি না।এই না চাওয়ার মাঝেই অয়ন্তিকা আবার ও ধমকে ওঠে।কোই বলো।আমি আবারও চুপ থাকি। আস্তে করে বলি,
-গতকালের কথা।সন্ধার দিকে আমি সিড়ি দিয়ে নামছিলাম আর অবনী উঠছিল।
-হু তারপর।
-আমাকে দেখেই বললো,ভাইয়া কেমন আছেন?দেখেছো কি বেয়াদব মেয়ে।
-এখানে বেয়াদবির কি হলো?
-সালাম দেয়নি যে।
আমার কথায় অয়ন্তিকা মনে হয় আরও একটু রেগে গেলো।যথেষ্ট শান্ত থাকার চেষ্টা করতে করতে বললো,
-তারপর?
-ভাব আদান প্রদান হচ্ছে।হুট করেই বললো,
-ভাইয়া রোজ ডে,চকলেট ডে তে তো গোলাপ চকলেট দিলেন।কোন তারপর তো আর টেডি দিলেন না।আমাকে আর আপুকে দুইটা টেডি দিয়েন।
আমার কথায় অয়ন্তিকা হুট করেই বলে উঠলো,
-হ্যা,খুবই উত্তম প্রস্তাব দিয়েছে।তুমি আমাদের টেডি দিতেই পারো।বাট এরপর কি বলেছো?
আমি অয়ন্তিকার দিকে ভিত চোখে তাকিয়ে আস্তে করে বলি,
-এই বয়সে টেডি।তোমার তো টেডি পাওয়ার বয়স চলে গেছে অনেক আগেই।আর তোমার আপু,সে তো হয়ে গেছে বুড়ি।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন্তিকা রাগে যেন ফেটে যাচ্ছিলো।কি করবে বুঝতে পারছে না হয়তো।আমি ছাদের কোনা থেকে মাঝখানে এসে দাড়ালাম।বলা তো যায় না,কখন ধাক্কা দিয়ে দেয়।তবে মাঝখানে কোন ভয় নেই।এই ভয় না পাওয়ার মাঝেই অয়ন্তিকা আমার পাশে এসে দাঁড়ায়।আস্তে করে বলে,
-আমি বুড়ি?ঠিক আছে।তাহলে এবার বাবার ঠিক করা বুড়োটাকেই বিয়ে করবো।তুমি বরং বাচ্চা কাউকে খুজে নিও।
কথাটি বলে অয়ন্তিকা আর দাঁড়ায় না।রেগে গেছে এটা বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছি।তবে শেষ কথাটা রেগে বললো নাকি সিরিয়াস আমি বুঝতে পারলাম না।মাথায় দু চার টোকা মেরেও কিছু বের করা গেলো না।হবে না,হচ্ছে না।
.
আজ সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেই অয়ন্তিকার সাথে আমার কথা না বলার সাত দিন পূর্ন হবে।যাকে বলে প্রায় এক সপ্তাহ।এই কয়েকদিনে অয়ন্তিকাকে আমি কতবার ফোন দিয়েছি আমার মনে নেই।অবশ্য ওদের ফ্লাটে গেলেও যাওয়া যেত।কিন্তু আমি সেটাও করিনি।কোন কারন ছাড়া যেয়ে কি ই বা বলবো।আমি ভাবতে থাকি।কি করা যায়।কি করা যেতে পারে।অয়ন্তিকাদের বাসায় কয়েকটা টেডি পাঠালে কেমন হয়।এই আইডিয়াটাও আমার কাছে খুব একটা কাজের মনে হচ্ছে না।এসব পুরোনো নিয়ম।আমি আর এই নিয়ম ভাবতে পারিনা।মাথা ভারি হয়ে আসে।রিফ্রেশমেন্ট দরকার।আমি আর কিছু ভাবতে পারিনা।রুম থেকে বের হয়ে সিড়ির দিকে পা বাড়াই।লিফট ছাড়া বাসা নেওয়ার এই একটা ঝামেলা।কষ্ট করে সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে হয়।এই ঝামেলার মাঝেই আমি আরও একটা ঝামেলা দেখতে পাই।অবনী।
আমি মেয়েটার পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই অবনী আমাকে ডাক দিয়ে বসে।মুচকি হেসে বলে,
-কি ভাইয়া,কিছু না বলে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন?
অবনীর কথায় আমি কি বলবো ভেবে পাই না।অবশ্য ওকে এড়িয়ে যাওয়ার কারনও আছে।মেয়েটা আমাকে বারবার ঝামেলায় ফেলে দেয়।কখন কি বলে ফেলি সেটাই ওর বোনকে গিয়ে বলে দেয়।বিপদে পড়ে যাই আমি।আমি মুখে যথেষ্ট হাসিভাব রেখে আস্তে করে বলি,
-খেয়াল করিনি।কেমন আছো?
আমার কথায় অবনী মুচকি হাসে।যে হাসি স্পষ্ট বলে দিচ্ছে তাচ্ছিল্যের সুর।অবনী মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
-আপনার জন্যে একটা সুখবর আছে।আপুর বিয়েটা দ্রুতই হচ্ছে।আপনি কিন্তু অবশ্যই আসবেন।কথাটি বলে অবনী আর দাঁড়ায় না।সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই আমি ডাক দেই।অবনী।আমার কথায় অবনী দাঁড়ায়।মাথা বাকিয়ে বলে,
-কিছু বলবেন?
আমি অবনীর কথায় আস্তে করে বলি,
-তোমার জন্যেও একটা সুখবর আছে।খোলা রাস্তায় রিক্সায় চেপে বসা।হাতে রাখা হাত।আমার কিন্তু চোখ এড়ায়নি।
কথাটি বলে আমিও আর দাড়াই না।নিচে নেমে আসতে আসতে আবারও মুচকি হাসি।অবশেষে মেয়েটাকে জব্দ করা গেছে।রাস্তায় বের হলে এদিক ওদিক তাকানোর সুফলটা আজ ঢের টের পাচ্ছি।তবে এ অবস্থায় অবনীর মুখটা দেখার ইচ্ছে হলেও সেটা পারছি না।হয়তো মেয়েটা এখনও ফ্যালফ্যাল করে ওভাবেই তাকিয়ে আছে।ভাবছে নানান কিছু।তার মধ্যে একটা হলো, রিক্সায় বসে বফের হাত ধরার খবর এ ভদ্রলোক জানলো কিভাবে?কিভাবে!
ঘড়িতে রাত নয়টা বেজে ত্রিশ মিনিট।কিছুক্ষন আগেই বৃষ্টি হয়েছে।ঝিরিঝিরি ঠান্ডা বাতাসে শীত লেগে যাচ্ছে বারবার।আমি দাঁড়িয়ে আছি ছাদের মাঝ বরাবর।আমার পাশেই দাঁড়িয়ে অয়ন্তিকা।তার ও যে শীত লাগছে এটা আমি বুঝতে পারলেও কিছু করতে পারছি না।শীতের দিন হলে গায়ের চাদরটা ওর গায়ে জড়িয়ে দিতাম।কিন্তু সেটাও পারছি না।আমি নীরবতা ভেঙে অয়ন্তিকার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম,
-এতদিন পর হুট করে ছাদে ডাকলে যে?
আমার কথায় অয়ন্তিকা কিছু বললো না।আরও কিছুক্ষন চুপ করে রইলো।নীরবতায় আবারও ভারী হয়ে গেলো চারপাশ।তবে এ নীরবতা অয়ন্তিকা নিজেই কাটিয়ে দিলো।নরম গলায় বললো,
-কেন,ডাকতে পারিনা?এ কয়েকদিনেই কি অধিকার হারিয়ে ফেললাম?
অয়ন্তিকার কথায় আমি কিছু বললাম না।মেয়েটা আবারও বললো,
-বিয়ের কথাটা মিথ্যে বলেছিলাম।আর তোমার সাথে ঝগড়ার বিষয়টাও ছিল অবনীর জন্যে।অবনী আমাকে ভুলভাবে বুঝিয়েছিল।আজ ফাজিলটা স্বীকার করেছে।
অয়ন্তিকার কথায় আমি মুচকি হাসি।অট্টহাসির ইচ্ছে থাকলেও সেটা পারি না।তারমানে সিড়িতে দাঁড়িয়ে অবনীকে বলা কথাটা কাজে এসেছে।মেয়েটা ভয় পেয়ে গেছে।আমি এসব আর ভাবি না।ভাবতে চাই না।অয়ন্তিকার দিকে একটা টেডি বাড়িয়ে দিয়ে বলি, তোমার জন্যে।
আমার কথায় অয়ন্তিকা কিছু বলে না।টেডিটা হাতে নিয়ে একটু চুপ থেকে বলে,
-এত ছোট?
অয়ন্তিকার কথায় আমি আবারো মুচকি হাসি।মুচকি হেসে বলি,
-এটা নিয়েই তো এত ঝামেলা।তাই ঝামেলা যত ছোট হয় ততই ভাল।
আমার কথায় অয়ন্তিকাও হাসে।হাসতে হাসতে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে।চারপাশে বাতাসের গতি যেন হুট করেই বেড়ে যায়।আকাশে মেঘ গর্জনের ডাক।এ ডাকে মেয়েরা ভয় পায়।সে হিসেবে অয়ন্তিকাও এখন ভয় পাবে।আর ভয় কাটানোর জন্যে আমাকে জড়িয়ে ধরবে। শক্ত করে। আমি আর ভাবতে পারি না।পারছি না।চাচ্ছিও না।অপেক্ষা এখন মেঘ গর্জনের।
.
লেখায়, Abdul Ahad
Comments (0)