Search

#আত্মার_উপলব্ধি

  • Share this:

তোমার মাকে ছাড়বে, না হলে আমাকে ছাড়বে দুইজন থেকে একজনকে বেছে নিতে হবে, এখন সিদ্ধান্ত তোমার তুমি কি করবে।

কথাগুলো একদমে বলে অবনী পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।

আমি তাকে কি করে বুঝাই তার জন্য মা-বাবাকে কিভাবে ছাড়বো যে বাবা-মা আমাকে এত কষ্ট করে মানুষ করেছে দশ মাস দশ দিন পেটে ধরেছে সে মাকে আমি কিভাবে পর করে দেবো স্ত্রীর জন্য। অন্যদিকে অবনীকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি তাকে ছাড়তে পারছিনা। আমার মায়ের সাথে অবনীর যে কি হিংসা সেটাই বুঝতে পারছিনা কেন সে আমার মায়ের পিছনে পড়ছে। ভালোবেসে মা-বাবার বিরুদ্ধে অবনীকে বিয়ে করেছি, প্রথম প্রথম মা বাবা মেনে নিতে চায়নি তারপরে আমার জন্য সবকিছু মেনে নিয়েছে একমাত্র ছেলে বলে। কিন্তু অবনীকে বাসায় নিয়ে আসার পর থেকে আমার মাকে দু চোখে দেখতে পারে না সব সময় আমার মায়ের নামে বদনাম করে। মা সেদিন কান্না করতে করতে বলল দেখ তুই পছন্দ করে বিয়ে করেছিস এখন তোর বউ আমাদেরকেও দেখতে পারে না, একথা যদি তোকে বলি তুই মনে করবি তোর বউয়ের সাথে হিংসা করে বলছি সত্যি আমরা তাকে মেয়ের মতো ভালোবাসি কিন্তু সে আমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করে। আমি আমার মায়ের কথার প্রতিবাদ করতে চেয়ে আজ অবনীর কাছ থেকে শুনতে হলো তাকে নয়তো আমার মাকে দুজনের একজনকে বেছে নিতে হবে। আমি তার কথাই নিশ্চুপ ছিলাম কিভাবে আমি আমার মাকে ছাড়ি, অবনীর এই অন্যায় আবদার কিছুতেই মানতে পারব না।

সকালে উঠে আম্মু নাস্তা রেডি করছে আর অবনী শুয়ে আছে, আমি অবনীকে বললাম আম্মু বয়স্ক মানুষ হয়ে নাস্তা রেডি করছে আমার অন্য আমি অফিসে যাবো বলে আর তুমি আরাম করে শুয়ে আছো।

অবনী যা বললো,

তোমার মায়ের সংসার সে নাস্তা বানাবে না তো কে বানাবে, আমার হাতে সংসার আসুক আমিও সকাল বেলা উঠে তোমাকে নাস্তা রেডি করে দেবো।

জানতে চাইলাম কিভাবে সংসার হাতে পেতে চাও তুমি।

আলাদা হবে আমাকে নিয়ে, আমি তোমার মায়ের সাথে এক বাসায় থাকবো না।

আমার পক্ষে সম্ভব না মা বাবাকে ছেড়ে অন্য কোথাও থাকা, আর নিজের বাসা থাকতে আমি এত টাকা খরচ করে ভাড়া থাকতে পারবো না।

ঠিক আছে থাকো তোমার মা বাবাকে নিয়ে, আমি চলে যাবো।

প্লিজ অবনী এমন কর না, আমি তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু তাই বলে তোমার জন্য মা বাবাকে ছাড়তে হবে এটা কেমন যুক্তি।

যা বলছি তাই করবে না হলে আমি এখানে থাকবো না।

আমি কথা না বাড়িয়ে নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে আসলাম, ঘন্টা দুই পর আব্বু ফোন করে বললো অবনী তার বাবার বাসায় চলে গেছে। আমি অবনীকে কল দিলাম, সে কল রিসিভ করে বললো যা বলছি করবে তার আগে আমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করবেনা। ফোন কেটে দিলো, খুব কষ্ট হচ্ছে অবনীর ব্যবহারের জন্য, সে এমন হবে জানলে কখনো তাকে এতটা ভালোবাসতাম না।

আমিও আর যোগাযোগ করতে চাইনি, যে এত বড় অন্যায় আবদার করতে পারে, তার জন্য কিভাবে মাকে ছাড়ি। সাতদিন হতে চলছে অবনীকে ছাড়া, বুকের ভিতর খুব কষ্ট হয়, কিভাবে সে আমাকে ছেড়ে থাকতে পারছে, দিনে অফিসে থাকি রাতে তার শূন্যতা অনুভব করি অনেক বেশি। আমার মনমরা অবস্থা দেখে আব্বু আম্মু বললো, আমাদের জন্য কেন তুই নিজের স্ত্রীকে দূরে সরিয়ে রাখবি আমরা আর কয়দিন বেঁচে থাকবো, তুই অবনীকে নিয়ে অন্য কোথাও বাসা ভাড়া থাক। আমি কিছুতেই রাজি হলাম না, কিন্তু আম্মু আমাকে কসম দিয়ে দিল, তারপর আর কি বাধ্য হয়ে অবনীকে নিয়ে আমাদের বাসার কয়েক বাসা দূরে ফ্ল্যাট ভাড়া নিলাম। আমি প্রতিদিন সকালে আর বিকালে আম্মুর সাথে দেখা করে যাই, কষ্টে আমার বুক পাজরে চিনচিন করে সবসময়। আমার মা বাবা আমাকে ছেড়ে কিভাবে আছে আল্লাহ মালুম, তাদের চোখ দেখলে বুঝা যায় সবসময় কান্না করে, কিন্তু আমাকে দেখলে হাসি মুখে কথা বলে। অবনী প্রেগন্যান্ট তাই সে এখন তার বাবার বাসায় থাকে ডাক্তার বলেছে রেস্ট নিতে। আমাকে বলেছিল তার সাথে তার বাবার বাসায় থাকতে আমি তাতে রাজি হইনি বলছি তুমি তোমার বাসায় থাকো আমি আমার বাসায় গিয়ে থাকি, সে এখন কিছু বলেনি হয়ত ভাবছে যদি আমার বাবা মায়ের অভিশাপ লাগে। আমি আল্লাহর কাছে চাইছিলাম আমার যেন ছেলে সন্তান হয়, আমার ছেলে সন্তান হলো তার কিছুদিন পর ভাড়া বাসায় উঠলাম। বাচ্চার বয়স যখন ছয় মাস, অবনী সকালে ঘুমিয়ে ছিল আমি আমার ছেলে সাদাফকে কোলে নিয়ে আমার বাসায় চলে আসলাম। আম্মুকে বললাম আমার ছেলেকে তুমি লালন পালন করবে তোমার ছেলে অবনী কেড়ে নিয়েছে তার ছেলেকে তুমি রেখে দাও। আম্মু প্রথমে রাজি হলো না আমি জোর করে আম্মুর কাছে রেখে গেলাম সাদাফকে। অবনী বারবার ফোন করে বলছে আমার ছেলে কোথায়, আমি তখনই বাসায় গেলাম তাকে বললাম তোমার ছেলে আমার আম্মুর কাছে তার ছেলেকে তুমি কেড়ে নিয়েছো তোমার ছেলেকে সে নিয়েছে অবনী কান্না করতে করতে বলল প্লিজ তুমি আমার ছেলেকে এখানে এনে দাও তাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না আমার দুধের বাচ্চা।

চিন্তা করো না আমার মা তোমার চেয়ে আরো ভালো ভাবে আমার ছেলেকে রাখবে, তুমি কি আমাকে অযত্নে রেখেছো নাকি। তুমি কি করেছ কেমন লেগেছে আমার মায়ের। অবনী রেগে গিয়ে বলল তুমি যদি এমন করো আমি কিন্তু পুলিশকে জানাবো শিশু বাচ্চাকে কেউ মায়ের কাছ থেকে কেড়ে নেয়।

হ্যাঁ যাও যাও আমার নামে মামলা কর, আমি থানায় বলবো আমার মায়ের একমাত্র সন্তানকে তুমি কেড়ে নিয়ে চলে আসছ, কোন আদালতে আছে সন্তানকে মা থেকে আলাদা করা সন্তান যতই বড় হোক মায়ের কাছে ছোট সে যদি তার সন্তান ছাড়া না বাঁচে আমার মা কিভাবে বেঁচে আছে।

অবনী দৌড়ে আমার বাসায় চলে আসলো আমার মায়ের পায়ে ধরে ক্ষমা চাচ্ছে সে বুঝতে পারছে তার ভুল হয়েছে মা সন্তান ছাড়া থাকা যে কি কষ্ট সেটা বুঝতে পারছে। আজ যদি অবনী মা না হতো হয়তো তাহলে সে বুঝতো না, সে তার ভুল বুঝতে পারছে আমি তাকে বললাম এই দুই ঘন্টা ছেলেকে ছাড়া থাকতে পারলে না যখন তোমার ছেলে বড় হবে, তোমার মত কোন এক বউ হবে তখন সেই বউ যখন তোমাকে ছাড়তে বলবে তোমার ছেলে তোমাকে ছেড়ে অন্য বাসায় চলে যাবে তখন তোমাকে কেমন কষ্ট হবে একটু বুঝতে চেষ্টা করো। অবনী আর কোনো কথা বলল না, কিছুক্ষণ পর বললো আমি এখানে থাকবো আর কোথাও যাব না কখনো। আমি বুঝতে পারছি আমি অনেক বড় ভুল করেছি আমার মত ভুল যেন আর কেউ না করে, আজ আমি মা হয়ে বুঝতে পারলাম সন্তানের জন্য কি কষ্ট, একদিন তো আমিও শাশুড়ি হব আমার ছেলের বউ যদি আমার সাথে এরকম করে আমার ছেলেকে নিয়ে চলে যায়, না না আর না আর কোন ছেলের বউ যেন এমন না করে। সময় কিন্তু একদিন তাদের এই অন্যায়ের বদলা অবশ্যই নিবে যারা আজ শাশুড়িকে ফেলে স্বামীকে নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে আছে, একদিন সেই ভুলের মাশুল গুনতে হবে।

#সাদমান_হাসিব

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।