১.
আমার অপরাধ ছিল আমি আর পাঁচটা মানুষের মত রোজ স্নান করতাম। কি? অবাক হচ্ছেন শুনে? অবাক হবেন না। এইটাই বাস্তবতা।আমি মিথিলা। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আমাদের পাড়ার ঐ বকাটে ছেলে অপু, আমাকে অনেক বার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমি তাকে প্রতিবারই ফিরিয়ে দিয়েছি। আর একসময় আমার উপরে খেপে গিয়ে আমাকে বলে,
-"অনেক ভাব না তোর? তোর এই ভাব যদি আমি মাটিতে না মিশিয়ে দিয়েছি তো আমিও এক বাপের ছেলে না।"
আমি ওর কথায় পাত্তা দেইনি। ভেবেছিলাম কি এমন করবে?কতটুকুই বা ক্ষমতা থাকে ওদের মতো ছেলেদের? ওদের ঐ হুমকি টুকুই সব। কিন্তু না। ও প্রমান করেছে যে ও এক বাপের ছেলে। আমাকে ভরা বাজারে এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে।
অন্য দিনের মতো সেইদিনও আমি স্নান করতে বাথরুমে ঢুকেছিলাম। কিন্তু কখনো বুঝিনি আমারই বাড়িতে আমি নিরাপদ নই। কখন যেন লুকিয়ে লুকিয়ে ও আমার বাথরুমের ভেন্টিলেটরে ক্যামেরা রেখে গেছে। ছোট্ট একটা ক্যামেরা। যা আমি দেখতেও পারিনি। এই জায়গার সাথে আমার পনের বছরের সম্পর্ক তাও ধরতে পারিনি যে, এই এতো বড় পরিবর্তন এসেছে জায়গাটাতে।
তারপর আর কি। ভিডিও করে নিল সবকিছু। প্রথমে তা এলাকার ছেলেদের মধ্যে ছড়ালো। আর তারপর একটা এডাল্ট সাইটে। আমি কোন অপরাধ না করেও অপরাধি হয়ে গেলাম। পুরুষের স্পর্শ না পেয়েও হয়ে গেলাম বাজারি। তাই আজ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি। আমাকে মাফ করে দিয়ো বাবা মা। আমার স্নান করতে যাওয়াই ভুল হয়েছে। মাফ করে দিয়ো আমাকে। চললাম আমি।
-
২.
ভালবেসেছিলাম। আর এই ভালবাসাটাই আমার অপরাধ ছিল। হয়তো জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধ।
ভালবাসা নাকি মানুষকে পুর্ণাঙ্গ করে? ভালবাসলে নাকি মানুষ তার হারানো খন্ড খুঁজে পায়? কই? আমার সাথে তো এমনটা হল না। আমি তো উল্টো সর্বশান্ত হয়ে গেলেম। আমার সবকিছু যে শেষ হয়ে গেল।
ছেলেটার নাম মুহিত। দেড় বছরের সম্পর্ক আমাদের। হঠাৎ একদিন আমাকে বলল, আমি যে ওকে ভালবাসি তার প্রমান দিতে। আমিও হাসতে হাসতে বললাম,
-"বল কি প্রমাণ চাও"।
-"আমার সাথে হোটেলে যেতে হবে"।
-" সে তো প্রায়ই যাই। খাওয়াদাওয়া করি, চলে আসি। তা এতে কি প্রমাণ হয় ভালবাসি? তাহলে কিন্তু বেশ অনেকটাই ভালবাসি তোমাকে "
-" না। এতে প্রমাণ হয় না। এই জন্যই তো আমার সাথে হোটেলের রুমে যাবে"।
-" তুমি কি পাগল হয়েছো? এ কখনোই সম্ভব না।"
-" তাহলে আমার দ্বারা এই সম্পর্ক রাখাও সম্ভব না"।
তারপর কত কল দিলাম, কতভাবে বললাম। কিছুতেই রাগ ভাঙল না ওর। শেষে রাজি হলাম। বললাম ঠিক আছে,তবে এই শেষ। ওউ বললো ঠিক আছে,একবারেই শেষ। কিন্তু একবারেই শেষ হয়নি। প্রথম বারেই ও ক্যামেরাবন্দী করে নেয় আমাদের ভালবাসার মুহুর্তগুলো। তখন ওগুলো আমাদের ভালবাসার মুহুর্ত হলেও পরবর্তীতে আমার প্রান ভোমরাতে পরিনত হল আর যা ছিল মুহিতের হাতে। যখন তখন আমাকে ডাকতো আর যাব না বললেই ওগুলো ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখাতো।আমিও মানসম্মান বাচাতে যেতাম। তবে ধীরে ধীরে ওর প্রতি ভালবাসা একদম শেষ হয়ে গেছিলো। ঘৃণা হতো ওকে দেখলে। আর শেষদিন তো ও সব সীমা পার করে ফেলল, যেদিন সাথে করে ওর দুইজন বন্ধুকে নিয়ে আসল। আমি আর নিতে পারছি না। ভালবেসে ভুল করেছি আমি। তাই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তবে যাওয়ার আগে বলে যাই,"কাউকে বিশ্বাস করবেন না এতো সহযে। মানুষ বদলাতে সময় লাগেনা। আর সবার মধ্যে মনুষ্যত্বও থাকে না।"
-
৩.
আর আমার অপরাধ? আমি পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম। শহরের সব থেকে বড়,নামকরা শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করতে গেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি শিক্ষক ছিলেন না। ছিলেন মানুষরুপী হায়না।
পড়ানোর সময় ইচ্ছা করে গায়ে হাত দেওয়া তার স্বভাব ছিল। প্রথম দিকে না দেখার চেস্টা করলেও একটা সময় অসহ্য লাগতে শুরু হলো। একদিন না পেরে মুখের উপরেই বলে দিলাম,
-"স্যার আমার গায়ে হাত দিবেন না"
উনি সামান্য ভ্রু কুচকিয়ে অন্যদিকে চলে গেলেও বেশ বুঝেছিলাম আমার কপালে দুঃখ আছে।
তাই হলো। আমার কিছু অপ্রীতিকর ছবি আমার ক্লাসের ছেলেদের কাছে ছড়িয়ে দিল। খুব ভাল করেই বোঝা যাচ্ছিলো ছবিগুলো ফটোশপ করা। কিন্তু তাও ছেলেগুলো আমার দিকে কি বাজে ভাবে তাকাতো! কি যে বাজে মন্তব্য করতো! তা আমি মুখেও আনতে পারব না।আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই চলে যাচ্ছি। সব ছেড়ে। আত্মহত্যাই আমার একমাত্র বাঁচার রাস্তা।
-
গল্পগুলো কাল্পনিক হলেও আমাদের সমাজে কিন্তু এইগুলো অহরহ হচ্ছে। প্রতিদিনই হচ্ছে।আমি আপনি চাইলেই কিন্তু মেয়ে তিনজনকে বাঁচাতে পারি। কিভাবে? ওদের এই খারাপ সময়টাতে ওদের পাশে দাঁড়িয়ে। ওদেরকে মেন্টাল সাপোর্ট দিয়ে। আপনি আমিই পারি ওদের ভাইরাল হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে। ওদের ঐ ছবিগুলো যখন কারো ইনবক্সে যায় সে তখন আরও পাঁচজনকে ছবিগুলো পাঠায়। সেই পাঁচজন প্রত্যেকে আরো পাঁচজন অর্থাৎ মোট পঁচিশজনকে পাঠায়। এইভাবেই এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাই আপনার ইনবক্সে যখন ছবিগুলো আসে, ঐ খানেই থেমে যান। আপনি আর শেয়ার করবেন না ছবিগুলো। আমাদের এইটুকু সাহায্য পারে ওদের জীবন বাঁচাতে। সাথে আইনের সহায়তা তো আছেই। তাদের পাশে থেকে তাদের সাহায্য করা ঐ মুহূর্তে আমাদের সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব, মানিবিক কর্তব্য।
আসুন একটু মানবিক হই, মানুষের পাশে দাঁড়িয়। দিনশেষে আমরাও মানুষ। আমাদেরও তাদেরকে প্রয়োজন।
আরাধ্য ইসলাম
Comments (0)