Search

গল্পঃ Inverse PRANK

  • Share this:

তাসিন আজও একটা ছেলেকে মেরে আসলো। ছেলের অপরাধ সে মিহুর পিছু নিয়েছিলো তাকে দেখার জন্য এবং মিহুকে সে পছন্দও করে। কিন্তু তাসিন ছেলেটা ক্ষ্যাপাটে ধরণের। মিহুর পিছু নিয়েছে শোনার পর বেদম মেরেছে তাকে দলবল নিয়ে। ছেলেটার নাম রাশেদ। রাশেদ আর মিহুর বাসা একই এলাকায়। সে এখন হসপিটালে ভর্তি। প্রায় দিনই তাসিন এমন সব কাজ করে। মিহু কতো যে বারণ করে কিন্তু কে শোনে কার কথা। তাসিনের এক কথা "তুমি আমার, শুধু আমার। তোমার দিকে যে তাকাবে তার চোখই আমি তুইলা ফেলমু "

আজও তাসিন একটা ছেলেকে মেরেছে এটা শোনার পর মিহু ভীষণ রেগে গেলো। সে তাসিনকে ফোন করল...

"তোমাকে আর কতবার বললে তুমি শোনবা? আর কতদিন এসব কাজ করে বেড়াবা? " ( প্রচন্ড রাগে কেঁদে কেঁদে বলল মিহু)

"সরি মিহু, কিন্তু ও তোমার দিকে তাকিয়েছিলো, তোমার পিছু নিয়েছিলো" (তাসিন বললো)

"তাই বলে এমনভাবে মারবা? সে তো অন্যায় কিছু করে নাই। আমাকে বিরক্তও করে নাই। শুধু একদিন বলছিলো যে সে আমাকে ভালোবাসে আর আমি মানা করে দিছিলাম। তবে এটা বলার অধিকার সবারই আছে "

" না, নেই। তুমি আমার, শুধু আমা*"

"চুপ করো তুমি। প্রতিদিন তোমার এসব কাজ আর সহ্য করতে পারছি না। একদিন তোমার এসব কাজের জন্যই তুমি আমাকে হারাবা। মনে রাইখো কথাটা"

এই কথাটুকু বলেই ফোন কেটে দিলো মিহু। তবে শেষের কথাটা তাসিনের মনে খুব লাগলো। মিহুকে যে সে প্রচন্ড ভালোবাসে। কিভাবে থাকবে সে তাকে ছাড়া?

মিহু আর তাসিনের পরিচয় কলেজ থেকেই। মিহুর বেস্টফ্রেন্ড মিলির মাধ্যমেই পরিচয় হয় তাদের। তাসিন ছিলো মিলির খুব ভালো বন্ধু। মিলি তার বেস্টফ্রেন্ড মিহুর সাথে তাসিনের পরিচয় করিয়ে দেয় এবং একসময় তাসিন মিহুকে ভালোবেসে ফেলে। পরে মিলিই মিহুকে রাজি করায়। ভার্সিটিতে উঠে তারা সম্পর্কে জড়ায়। তারা দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের শিক্ষার্থী। ইসলামের ইতিহাস এ সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা করছে। তাসিন আবার পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখছে যাতে নিজের খরচটা নিজে চালাতে পারে। আর মিহু পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে। মিহুর আপনজন বলতে তার বেস্টফ্রেন্ড মিলি, তাসিন আর তার বাবা। এই তিনজনকে ঘিরেই তার জীবন। তাসিনের সাথে তার সম্পর্ক ভালোই কিন্তু তাসিন একটু ক্ষ্যাপাটে। কয়েকদিন পর পরই সে একটা কান্ড বাধিয়ে ফেলে। মিহু না করলেও সে শোনে না। মিহু বুঝে যে সে তাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু তবুও সে এসব ঝামেলা একদমই পছন্দ করে না।

ক্লাস শেষ করে ফেরার পথে তাসিন আর মিহু একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল। আজ তেমন লোকজন নেই, শান্ত পরিবেশে বেশ ভালোই লাগছে দুজনের। কিন্তু মিহু কিছুটা আনমনা। মুখোমুখি বসে আছে তারা। এরই মধ্যে কফি চলে আসল। কফি খেতে খেতে মিহু কেমন যেনো অন্যমনস্ক হয়ে গেলো। তাসিন সেটা লক্ষ্য করে মিহুর ডান হাতটা ধরে বলল, "কি হয়েছে তোমার হমম? মন খারাপ কেনো?"

" আমরা কবে এক হবো বলতো, তুমি আমার হবে তো? বাড়িতে বিয়ের সম্বন্ধ আসছে, এই পর্যন্ত তিনটে সম্বন্ধ ফিরিয়ে দিলাম, বাবাও আমার সাথে রাগ করে আছে। চলোনা আমরা বিয়ে করে ফেলি"

তাসিন দেখলো মিহুর চোখ পানিতে টলমল করছে। এই বুঝি সে কান্না করে দেবে। তাসিন দুহাত দিয়ে মিহুর চোখের পানি মুছে মিহুর দুহাতে হাত রেখে বললো, "চিন্তা করো না, আমি আছি তো। তোমাকে আমি অন্য কারো হতে দিবো না, তুমি শুধুই আমার। আমাকে শুধু আর কিছুদিন সময় দাও, একটা বছর শুধু। নিজের একটা অবস্থান তৈরি করি। শুধু একটা বছর আমাকে সময় দিতে পারবা না?

" আমি তো চেষ্টা করছি অনেক বাবাকে বুঝানোর। তোমার জন্য আমি এক বছর কি, সবসময় অপেক্ষা করতে পারব কিন্তু আমি সত্যিই এখন খুব চিন্তায় আছি জানো। আমার ভয় হয় যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি। আমার বাবা আমাকে প্রেশার দিচ্ছে খুব, তবুও আমি বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করব। তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি কিছু একটা করো, আমার জন্য হলেও প্লিজ" (এতটুকু বলে কেঁদে ফেলল মিহু)

"এইযে কাঁদে না সোনা, আমি আছি তো। দেখি এদিকে তাকাও, একদম কাঁদবা না "

মিহু ভালোবাসার স্পর্শে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।

দুই-তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলো। আজ শুক্রবার, ছুটির দিন। মিহু তাসিনকে বলেছিলো আজ তাকে দেখতে আসবে আর সে কিছু একটা বলে সম্বন্ধ ফিরিয়ে দেবে। তাসিন রাতের খাবার খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। কাজ করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে অনেক রাত জাগতে হয়। রাত প্রায় বারোটার দিকে মিহুর কল এলো। এতো রাতে মিহুর কল দেখে তাসিন কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে মিহু বলে উঠল,

"তাসিন ভালো থেকো, নিজের খেয়াল রেখো। আর হয়তো তোমার সাথে কথা হবে না। তোমাকে আর নিজের করে পেলাম না" ( বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো মিহু)

তাসিন ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো। সে বললো, "এই ক-কি বলছো তুমি? মিহু, মিহু" (তাসিনের গলা জড়িয়ে এলো কান্নায়)

"তাসিন আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আজকে যেই ছেলের পরিবার দেখতে আসছিলো ওই ছেলের সাথেই বিয়ে দিছে বাবা। বিশ্বাস করো আমার কিচ্ছু করার ছিলো না। আমি অনেক কান্না করেছি, বাবার পায়ে ধরে বলেছি কিন্তু বাবা নারাজ। বলছে এই ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে, বিয়ে না করলে বাবার মরা মুখ দেখতে হবে। আমি কি করতাম বলো। আমার কিছু করার ছিলো না তাসিন। আমাকে মাফ করে দিও, নিজের যত্ন নিও আর পারলে আমাকে ভুলে যেও। আমি মিলিকেও জানিয়েছি। ভালো থেকো তাসিন, "তাসিনে

"হ্যালো মিহু, মি***"

ফোন কেটে গেলো। তাসিন কি করবে ভেবে পেলো না। সে চারিদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলো। মিহু নেই তো কিছু নেই। তার হৃদয় চিরে চিৎকার আসছে। সে চিৎকারে গগণ বিদীর্ণ হয়ে যায়। হৃদয় হাহাকার করে উঠে। কলিজা চিরে একটি কথাই যেনো বের হয় শুধু "মিহু, তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে অন্য কারো হতে পারো না মিহু"। তাসিন এখন মুমূর্ষপ্রায়। তার জীবনে মিহু নেই, এ জীবন রেখে কি হবে? রাখবে না সে এ জীবন। সে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। ফ্যান ঘুরছে, সে ফ্যান বন্ধ করল। ফ্যান থেকে একটি পাকানো রশি নেমে এলো। তাসিনের হাতে মিহুর একটি ছবি, অপলক তাকিয়ে রইলো সে...

পরদিন সকাল হতেই মিহু খবর পেলো তাসিন মারা গেছে। গতকাল রাতে আত্নহত্যা করেছে সে। হাতে ছিলো মিহুর একটি ছবি। খবরটি অনেকের কাছেই ছড়িয়ে পড়েছে। মিহুর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ল। সে কিছু বলতে পারলো না, তার ভাষা হারিয়ে গেছে। সে শুধু " তাসিন" বলে চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। তার জ্ঞান ফিরলো সন্ধ্যায়। জ্ঞান যখন ফিরলো তখন সে দেখলো তার পাশে তার বাবা আর মিলি বসা, তার বাবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মিলি কান্না করছে। মিলি বললো, "আঙ্কেল, আপনি কিছুক্ষণ আমাদের দুজনকে একা থাকতে দিন প্লিজ"। মিহুর বাবা তাদের দুজনকে একা থাকতে দিয়ে পাশের ঘরে চলে গেলো। এখন মিহু আর মিলি দুজনেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। কালকের বিয়ের ঘটনাটা ছিরো সম্পূর্ণ একটা সাজানো নাটক, PRANK.. মিহু আর মিলি দুজনে মিলে এই prank টা সাজিয়েছে। মিহু দেখতে চাচ্ছিলো তাসিন তাকে কতোটা ভালোবাসে। কিন্তু এই মজাটা করতে গিয়ে যে মিহু চিরদিনের জন্য তাসিনকে হারাবে তা সে বুঝতে পারে নি। এটা কি করলো সে? এখন তারা নিজেদের কিভাবে ক্ষমা করবে? মিহু কিভাবে থাকবে তাসিনকে ছাড়া। সেও যে ভীষণ ভালোবাসে তাসিনকে। মিহু মিলিকে প্রচন্ড জোড়ে থাপ্পড় দিয়ে বকাঝকা করে বললো, "বেরিয়ে যা, তোর জন্যই আজ এমনটা হইছে। তুই আমাকে শেষ করে দিলি। বেরিয়ে যা তুই"। মিলিও অনেক কান্না করলো, মিহুর কাছে সে ক্ষমা চাইতে গিয়েও পারল না। কোন মুখে সে ক্ষমা চাইবে? সে বেরিয়ে এলো তাদের বাসা থেকে।

চারিদিকে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে আজ। আকাশ যেনো কোন এক অজানা সুরে করুণ ভাবে কান্না করছে, প্রকৃতিও যেনো নির্বাক, সময় যেনো থেমে গেছে। এই থমকে দাড়ানো প্রকৃতির মাঝে আজ নিজেকে থামিয়ে দিবে মিহু। সে পারছে না নিজেকে ক্ষমা করতে। অনুশোচনা ও বিরহ ব্যথা তার গলা চেপে ধরেছে, তার শ্বাস রুদ্ধ করে দিয়েছে। তার হৃদয়ে বাজছে বিরহের সুর, কানে বাজছে তাসিনের করুণ আর্তনাদ। মিহু কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসে গেলো। আর তার কখনো লিখা হবে না। মিহুর হাতেও তাসিনের একটা ছবি। ছবিতে তাসিন হাসছে। কাগজ-কলমের পাশেই বিষের ছোট্ট শিশি। আর কিছু সময় পর থেমে যাবে সব। এমন সময় মিহুর ফোন বেজে উঠল, অচেনা নাম্বার। মিহু ভাবলো ফোন ধরবে না, কিন্তু কি ভেবে যেনো ফোনটা ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো। আজকের পর আর তো কখনো কারো সাথে কথা হবে না। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে অনেক দিনের চেনা এক কন্ঠস্বর ভেসে উঠলো,

" মিহু কেমন আছো? খাইছো কিছু? একদম উল্টাপাল্টা কিছু করবা না খবরদার। "

মিহু কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলো, তার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় জল পরতে লাগলো। সে কান্না করে দিয়ে বললো, "তাসিন, তুমি কিভাবে?

" হা হা হা, আরে বোকা কালকে তুমি আমারে ভয় পাইয়ে দিছিলা। আমি সত্যিই নিজের জীবন শেষ করে দিতাম যদি তোমার কথা সত্যি হতো। তুমি কল করে বলার পর আমি এতোটাই ভেঙে পড়ছিলাম যে আমি সত্যিই সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিছিলাম। তাও আমি রাশেদকে ফোন করে খবর নিয়ে আমাকে জানাতে বলছিলাম যে তুমি যা বলছ তা সত্যি কিনা। আমার সন্দেহ হচ্ছিল, কারণ আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি এভাবে আমাকে ছাড়তে পারো না। "

"রাশেদকে না তুমি ***"

"হ্যা হ্যা রাশেদকে আমি দলবল সহ মারছিলাম। ওয় হাসপাতালে ছিলো অনেকদিন। তুমি ওইদিন আমাকে অনেক বকছিলা আর বলছিলা যে আমি এসব কাজের জন্যই তোমাকে হারাবো। অনেক কষ্ট পাইছিলাম ওদিন। আর হাসপাতালে রাশেদের অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। রক্তের প্রয়োজন ছিলো কয়েক ব্যাগ। আমার আর ওর রক্তের গ্রুপ এক ছিলো। আমি নিজে গিয়ে রক্ত দিছিলাম আর ওর সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তার সম্পূর্ণ চিকিৎসার খরচ আমি দিছি আর পরে ওর কাছে মাফও চাইছি। এরপর থেকে আমরা অনেক ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম"

(মিহু চুপ করে শুনেই যাচ্ছে, আর তাসিন বলছে)

"পরে ভাবলাম তুমি যেহেতু আমার সাথে prank করছো আমারও তাইলে উল্টা prank করে তোমাকে একটা শিক্ষা দেয়া দরকার যাতে ভবিষ্যতে এমন কাজ আর না করো। পরে আমি আর রাশেদ আমার সুইসাইডের নাটকটা সাজাইছি। বুঝছো বাবু? হা, হা হা "

"তুমি একটা খারাপ, একটা কুত্তা। আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিলো জানো? যাও কথা বলবা না আমার সাথে"

"আরে এই শুনো..."

(সমাপ্ত)

#থ_তে_thriller - ৪

ইসতিয়াক খান বাঁধন

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।