-তোমাকে খুব মিস করব আব্বু,উপরে ভালো থেক।
হুট করে খালাতো বোনের আইডি থেকে এমন পোষ্ট দেখে চোখ আটকে গেল।কাল খালুর ডুবাই যাওয়ার ফ্লাইট।সকালেও দেখা হয়েছিলো বলেছি ডুবাই থেকে একটা পোষা সিংহ নিয়ে আসতে।বিকেল হতে না হতেই তিনি ওপারে চলে গেলেন,এখন আমার পোষা সিংহ'র কি হবে ভাবতেই দু-চোখ ভিজে গেলো।ভরাক্রান্ত মনে কমেন্ট করলাম.......
-আল্লা আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুক,খালু।আপনাকে আমি কোনদিন ভুলব না।সিংহ দেখলেই আপনার কথা মনে পরবে।
কমেন্ট করে খালা'কে সান্ত্বনা দিতে তাদের বাসার দিকে হাঁটা দিলাম।পাশা পাশি বাসা,মিনিট দু-একের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম।কলিং বেল এ চাপ দিতেই তাদের কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিলো।আমি সরাসরি খালার সামনে গিয়ে তার হাত দুটো ধরে কাঁদতে শুরু করলাম......
-ও খালা গোওও,আপনে কোন চিন্তা করবেন না গোওওও,খালু নাই তো কি হয়েছে আমি তো আছি।
বলেই পাশে ঘুরে পরীকে জরিয়ে ধরে বললাম....
-তুই কোন চিন্তা করবি না পরী,তোর আব্বু মরছে তো কি হইছে আজ থেকে আমিই তোর.....
বলতে বলতে পরীর মুখের দিকে তাকাতেই দেখি হাতে ঝাড়ু নিয়ে বসে রাগে গজগজ করছে,ঘুরে খালার দিকে তাকাতেই দেখি হাতে বটি নিয়ে রেগে ফোস ফোস করে নাক-কান দিকে ধোঁয়া বের করছে।
জান নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে একটু একটু শুনতে পেলাম খালা চিৎকার করে বলছে.....
-ফের যদি তোর বডি এবাড়িতে দেহি,তাইলে তোর বডিরে এই বটি দিয়ে কোপামু।
খালাতো বোন কে বলতে শুনলাম.....
-আবার আসলে এই ঝাড়ু দিয়ে তোমার ভূত তাড়াবো।
কি হলো বুঝতে পারলাম না।আমি গেলাম সান্ত্বনা দিতে তারা আমারে দাবড়ানি দিলো।বাজারের দিকে রওনা দিলাম মাঝ পথে আঁখি বাসা থেকে ফোন দিলো......
-এ্যই বদের হাড্ডি,শয়তান বেটা।তুমি কি জীবনে মানুষ হবা না?তোমার খালু ডুবাই যাবে,সে যখন প্লেনে করে আকাশে থাকবে তখন যেন ভালো থাকে সেই কমনা করে তোমার বোন পোষ্ট করেছে আর তুমি এ কি কমেন্ট করেছ?ফালতু বেটা।
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে কল কেটে দিল।এতোক্ষণে দৌড়ানির রহস্য বুঝতে পারলাম।লেখছে উপরে আমি পড়ছি ওপারে।নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে চার দোকানে গিয়ে চা'য়ের অডার দিলাম।হুট করে দেখি এলাকার ছোট ভাই পোষ্ট করছে.....
-তুমি আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছ।আজ মুক্তি পেলাম।এবার শান্তিতে একটা ঘুম দেব।
সে একটা মেয়ে'কে ভালোবাসে,আমি ছাড়া তেমন কেউ জানে না।মেয়েটা নাকি তাকে খুব যন্ত্রণা করে।আজ মনে হয় মেয়েটা তাকে ছেড়ে চলে গেছে তাই এমন পোষ্ট।কমেন্টে একটু মোটিভেশন দিলাম.....
-ছোট ভাই আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়।একটা মেয়ে গেছে আরেকটা মেয়ে আসবে।তাই বলে তুমি জীবন দিয়ে দিবা,ভুলেও এ কাজ করো না।তোমার বাবা মায়ের কথা একটু ভাব।
একটু পরে সেই ছোট ভাই ফোন দিলো....
-ওই মিয়া মশকারা মারাও?আমি ছ্যাক খাইছি তোমারে কইল কেডা?পরিক্ষার প্যারায় ছিলাম এতো দিন আজ পরিক্ষা শেষ তাই চাপ মুক্ত।সেই জন্য শান্তিতে একটা ঘুম দেব বলছি।মোটিভেশন মারাইছে আব্বা আমার প্রেমের খবর জেনে বাসা থেকে বের করে দিছে।তোমারে পাইলে.....
তাড়া তাড়ি করে কল কেটে ফোন অফ করে পকেটে রেখে চা খাওয়ায় মন দিলাম।চা শেষ করে ফোন অন করে ফেসবুকে ঢুকলাম।দেখি শ্বশুর পোষ্ট করছে.....
-যখন তুমি ছ্যাকা দেবে ঠিক করেই আমার কাছে হাজির হয়েছিলে তাহলে কেন এতো মিষ্টি মধুর কথা বলে আমার মন ভুলালে।
পোষ্টটা দেখে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।আমার শ্বাশুরি যথেষ্ট রূপবতী।তাকে রেখে শ্বশুর আব্ব কার কাছ থেকে ছ্যাকা খেয়ে আসল।কমেন্টে জিজ্ঞেস করলাম.....
-আব্বা আম্মার মতো এতো সুন্দর বউ থাকতে কার কাছ থেকে এমন ছ্যাকা খেয়ে এলেন?এই বয়সে আপনার এসব সোভা পায়?
কমেন্ট করে শ্বশুর বাড়ির দিকে রওনা দিলাম,আব্বারে সান্ত্বনা দিতে।তখনই আঁখি কল দিয়ে বলল.....
-আজ বাসায় আসো শুধু তোমাকে যদি আমি গরম চা দিয়ে গোসল না করাই তাহলে আমার নাম বদলে ফেলব।
বলে কল কেটে দিলো, কি হলো বুঝতে পারলাম না।তখনই শ্বশুর আব্বা ফোন দিল.....
-বাবা!এইডা কি করলা?আমি বিকালে পার্কে জগিং করতে গেছিলাম, এক চা-ওয়ালা আমার কাছে এসে বলল"কাকা চা দেব,মধুর মতো মিষ্টি চা?আমি বললাম হালকা গরম হলে এক কাপ দে।সে হাসি মুখে বলল"কাকা উষ্ণ গরম চা খান মজা পাবেন।তার কথা বিশ্বাস করে যেই না কাপে চুমুক দিছি অমনি গরমে জিব্বা পুরে গেলো।তাই পোষ্ট করছি।আর তুমি এ কি কমেন্ট করছ?তোমার আম্মা দেখে সেই তখন থেকে কান্না কাটি করে বুক ভাসাচ্ছে।
বলে একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে ফোন কেটে দিলো।আঁখির থ্রেড দেওয়ার কারণ পরিষ্কার হলো।আমার কি দোষ, সবাই যদি কবি হয়ে ফেসবুকে সাহিত্য রচনা করে তাহলে আমার মতো নাদান মানুষের একটু আদটু ভুল তো হবেই।
আসাদ আরীয়ান
Comments (0)