নাস্তায় দুইটা পরোটা আর এক কাপ চা খেলে যার পেট ভরে যেত আজকে সাতটা পরোটা খেয়েও তার পেট ভরছে না। আদিল তার স্ত্রী রিনাকে আরো তিন চারটা পরোটা বানিয়ে দিতে বলল।
স্ত্রী রান্নাঘর থেকে বলল,
-তোমার কি হয়েছে বলতো? এমনিতে দুইটা পরোটা খেলেই তোমার পেট ভরে যায়।
-জানিনা। খিদে মিটছে না কেন যেন। মনে হচ্ছে একটা আস্ত হাতি খেয়ে ফেলতে পারবো।
রিনা চিন্তিত মুখে আরো তিনটা পরোটা ভেজে দিলো। একে একে পনেরোটা পরোটা খেয়ে বের হলো সে।
অদ্ভুত ভাবে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার খিদে পেয়ে গেলো তার। খুব বেশি খিদে পেলে পেটে যেমন আওয়াজ হয় সেরকম আওয়াজ আসছে। অথচ ২০ মিনিট আগেই সে ১৫ টা পরোটা সাবাড় করে এসেছে। আশেপাশে খাবারের হোটেল খুঁজছে সে।
এতবার অর্ডার আসতে দেখে ওয়েটারটা অবাক হয়ে গেলো । এক টেবিল থেকে এত অর্ডার আগে কখনো আসেনি। আদিল আবার অর্ডার দেয়ার জন্য ওয়েটারকে ডাকলো।
ওয়েটার বলল,
-স্যার, আপনি খুব বেশি খেয়ে ফেলছেন। অসুস্থ হয়ে পড়বেন তো।
আদিল ফ্যালফ্যাল করে ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে বলল,
-আমি কি চলে যাবো তাহলে?
ওয়েটার লজ্জা পেয়ে বলল,
-আরে না স্যার৷ আপনার অর্ডারটা বলুন প্লিজ।
খাবারের অর্ডার নিয়ে সে ফিরলো। ম্যানেজার রাগী স্বরে বলল,
-কাস্টমার বেশি অর্ডার দিলে কি তোমার কোনো ক্ষতি আছে? এতে তো আমাদেরই লাভ। তাইনা?
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ম্যানেজারের বকা শুনলো সে।
হোটেল থেকে বের হয়ে অফিসের দিকে রওনা দিলো। অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে তার। তাড়াহুড়ো করে যাওয়ার সময় সেই ভিক্ষুকটার সাথে দেখা। যাকে দেখে সে কালকে বলেছিলো,
'এইযে মানুষের কাছে হাত পাতো, লজ্জা হয় না?'
ভিক্ষুকটা বলেছিল,
‘একদিন আমাগো মত খিদা আপনের লাগুক। পেটে খিদা, কিন্তুক ঘরে খাওন আর কাজ করনের ক্ষমতা নাই, তখন বুঝবেন।'
আদিল অনুভব করলো তার আবার ভীষণ খিদে পেয়ে গেছে। এই খিদে কোনো কিছুতেই যেন মিটবে না।
(সমাপ্তি)
অরণী মেঘ
Comments (0)