Search

গল্পঃ রাত

  • Share this:

তোমাকে আমি কখনোই ভালবাসি নি রাত।শুধু নিজের ফ্যামিলির জোরে বিয়ে করেছিলাম আর বিয়ের পর নিজের দায়িত্ব পালন করছিলাম।'

বিয়ের ১ বছর পর নিজের হাসব্যান্ড এর মুখে এমন কথা শুনে সেদিন রাত অনেকটা অবাক হয়েছিল।

.

আজ ১১ বছর পর রাতের প্রাক্তন স্বামীর সাথে দেখা হয়েছে।তার নাম 'তানজিলা রাত'।আর তার প্রাক্তন স্বামী 'রাইসান তাহমিদ'।আজকে বাহিরে যাওয়ার পর আসার সময় তার প্রাক্তন স্বামী রাইসানের সাথে দেখা হয়। রাত মনে করতে লাগলো তার অতীতের সেইদিনের কথা____

'আমি তোমার থেকে ডিভোর্স চাই রাত।'

রাইসানের এমন কথা শুনে হকচকিয়ে যায় রাত।রাত রাইসানের দিকে তাকাতেই রাইসান বললো,

'তোমাকে আমি চেয়েও ভালো বাসতে পারিনি ।আমাদের বিয়ের সবে এক বছর হয়েছে। এখনো চাইলে তুমি তোমার জীবন অন্য করো সাথে আর আমি আমার জীবন অন্য কারো সাথে সুখে শান্তিতে কাটাতে পারবো।'

রাত তাচ্ছিল্য ভাবে হেসে বললো,

'বলা যতটা সহজ, বাস্তবতা ততটাই কঠিন।'

রাইসান ভ্রু কুঁচকে বললো,

'তুমি কি আমাকে ডিভোর্স দিবে না তাহলে? আলমারিতে পেপার রাখা আছে।'

'যদি না দেই?'

রাইসান দাড়িয়ে গিয়ে বললো,

'রাত প্লিজ।আমার কথাটা অন্তত ভেবো।আমি আর পারছি না। মুক্তি চাই এইসব থেকে।

রাত একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হেসে বললো,

'সব সময় আমি কেনো অন্যের কথা ভাববো?আমার কথা তো কেউ ভাবে না।'

রাইসান উঠে চলে গেলো।রাত একটা হাফ ছাড়লো।তারপর মাথায় দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলো।রাইসান তার বাবার পরিচয় একজন কলিগের ছেলে। রাইসানের ফ্যামিলি অনেক রিচ হলেও রাইসান একজন বেকার সন্তান। রাইসানের বাবার একজন মেয়র।তাই খুব প্রভাবশালী তিনি।রাত বিয়ে করতে চায়নি। এক প্রকার তার বাবা তাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে দিয়েছিল।রাত চায়নি একটা এমন ছেলেকে বিয়ে করতে।কিন্তু তার বাবা বলেছিল ছেলের টাকা আছে,গাড়ি আছে,বাড়ি আছে আর কি লাগে?সুখী থাকার জন্য এ গুলোই যথেষ্ট।শেষমেশ নিজের ফ্যামিলির সাথে জোরে না চাওয়ার সত্বেও রাত রাজি হয়ে যায়।তারপর রাইসান আর রাতের বিয়ে হয়।বিয়ের পর রাত জানতে পারে রাইসানের আগের একটা বউ আছে যাকে রাইসান নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিল।কিন্তু রাইসানের ফ্যামিলি মেয়েটাকে মেনে নেয়নি।আর এই বিষয় গুলো বিয়ের আগে তাদের কাছে লুকিয়ে রেখেছিল।কিন্তু এখন নাকি সেই মেয়েটা প্রেগনেন্ট।তাই রাইসান বেশির ভাগ সময়ই তার কাছে থাকে। বিয়ের পর থেকেই রাইসান রাতের সাথে অনেক বাজে ব্যাবহার করতো।এক প্রকার মানসিক অত্যাচার করত তার উপর।তার উপর রাইসানের মায়ের খোঁচা মারা কথা তো ফ্রি আছে।টাকা দেখে বিয়ে করছে,ছোট লোকের বাচ্চা,আরো যতরকম কথা।কিন্তু সব সহ্য করে তাবা এখনো আছে।তার নিজের মধ্যের আত্মসম্মান টাকে যেনো সে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে।কিন্তু আর না এবার রাত আর থাকবে না নিজের আত্মসম্মান কে বিসর্জন দিয়ে।

___________

অতীত থেকে বেরিয়ে এলো রাত।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ডিভোর্স এর পর নিজের বাড়িতেও জায়গা পায়নি। গেয়েছিল সেখানে কিন্তু প্রতি নিয়ত তার বাবার কটূক্তি কথা,গালিগালাজ,সমাজ কি বলবে? প্রতিবেশী দের নানান ধরনের আজেবাজে কথা যে,'বড়ো লোক দেখে বিয়ে দিয়েছে আর সেই ছেলে দু একদিন ফুর্তি করে ছেড়ে দিয়েছে'।এইসব সহ্য করতে না পেরে রাত। ডিসিশন নিয়েছিল আত্মহত্যার কিন্তু এটা তো মহা পাপ।তাই আর না করে এখান থেকে দূরে চলে গেছে। রাতের শুধু মনে হয় তার বাবা যদি টাকা না দেখে ভালো ছেলেকে দেখত তাহলে হয়তো সে সুখী থাকতে পারতো। কিন্তু কিছুকিছু মানুষ মনে করেন ছেলের টাকা থাকলে আর মেয়েদের রূপ থাকলেই সুখ পাওয়া যায়।পরের দিন রাত বের হয়েই দেখে রাইসান দাড়িয়ে।রাতকে রাইসান দেখতেই তার পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইতে লাগলো।তারপর সেদিন রাত চলে যাওয়ার পর যা হয়েছিল সব বলতে লাগলো রাইসান _______

সকালের দিকে রাইসান বাড়িতে ফিরতেই শুনতে পারে রাতকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।রাইসান একটা স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। রাইসান বুঝতে পেরেছে রাত শেষমেশ চলে গেছে। রাইসান খুব খুশি।এভাবে দেখতে দেখতে কেটে যায় দিন। কিন্তু রাতের খোঁজ কোথাও পাওয়া যায়না।কোথায় গেছে কেউ জানে না।প্রায় কেটে যায় এক মাসের মত।মাসের শেষে রাইসান একটা সত্য জানতে পারে যে,তার আগের বউ মেঘলা সে একজন ক্যারেক্টার লেস মেয়ে।অনেক গুলো ছেলের সাথে অ্যাফেয়ার আছে তার।আর মেঘলা কখনোই প্রেগনেন্ট ছিল না।সেটা তার একটা নাটক ছিল রাইসানের কাছ থেকে বেশী বেশি টাকা নেওয়ার জন্য।কিন্তু প্রেগনেন্ট শোনার পর থেকে রাইসান মেঘলার কাছে বেশি সময় ই থাকত।তাই রাইসান জানতে পেরেছে সব সত্যি। রাইসান এখন রাতের খোঁজে ব্যাস্ত। খোঁজ নিতে জানতে পেরেছে রাত তার বাবার বাসা গেছিল তারপর কোথায় গেছে কেউ জানে না। রাইসান নিজের ভুল উপলব্ধি করতে পারছে।রূপের পিছনে না ছুটে যদি গুণের পিছনে ছুটতো তাহলে তার জীবন টা এক অন্য মোড়ে যেত।রাইসান এতদিন ভালো মত নিজের রুমে থাকতো।সব জানার পর রাইসান রুমের এক কোনে ডায়েরি পায়। ডায়েরী টা রাতের।ডায়েরির একটা পাতায় রাইসানের চোখ আটকে যায়।তারিখ টা সেই দিনের যেদিন রাইসান ডিভোর্স চেয়েছিল।ডায়েরির ওই পাতায় লেখা,

মুক্তি চাও?

নেও আজ থেকে তোমাকে মুক্তি দিলাম

একা একা যখন তুমি দেখবে আকাশ,

দেখবে আমি তোমার আকাশ ছিলাম...🥀

এটা পড়ে রাইসানের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।সত্যি আজ তাই মনে হচ্ছে।রাইসান কি করবে বুঝতে পারছে না।সে তার ভুল বুঝতে পারছে। রাইসান নিজের টেবিলে গিয়ে বসতেই অনেক গুলো নিউজ পেপার দেখলো আজকের। মূলত রাত নিউজ পেপার পড়ত। আজকের পেপার সহ এক মাস আগের পেপার।রাইসান্ পেপার গুলোকে পাল্টাতে লাগলো।হটাৎ একটা পেপারের হেডলাইন এ তার চোখ আটকে গেলো।পেপার টা সেদিনের যেদিন রাতকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না মানে ডিভোর্স চাওয়ার কয়েকদিন পরের।সেখানে লেখা 'আবারো ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনা। বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষ। নিহিত ১৬ জন আহত অনেকে।' খবরটার বিস্তারিত তে জানতে পারলো ,নিহিত ৪ জনের মধ্যে দুজননের পরিচয় জানা যায়নি।রাইসানের মনে কেমন একটা আঘাত লাগলো।কেনো জানি তার মনে হচ্ছে তার রাতও কি মারা___!!আবার ভাবছে,না না এমন হতে পারে না।এভাবে যাচ্ছিল দিন কিন্তু মেঘলা থানায় কেস করে যে রাইসান তাকে নানা রকম অত্যাচার নির্যাতন করছে।আর নারী নির্যাতন এর মামলায় রাইসানকে জেলে যেতে হয়। এভাবেই কেটে যায় কয়েক বছর। রাইসান নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।সে রাতের মধ্যে সবসময় সৌন্দর্য খুঁজত। কিন্তু রাত তো অতটাও সুন্দর ছিল না।মেঘলা ছিল অনেক সুন্দর তাই সবসময় মেঘলাকে বেশি কেয়ার করত রাইসান ।গুণের পিছনে না ছুটে রূপের পিছনে ছুটলে যেমন হয়।

____

রাইসানের কথা শোনার পর রাত কিছুক্ষন চুপ থেকে শুধু ছোট করে 'ওহ' বললো।

'আমাকে মাফ করে দেও রাত।তোমার প্রতি করা অন্যায় জন্যই হয়তো আল্লাহ আমাদের এ শাস্তি দিছেন।'

রাত নিজের চোখের পানি মুছে বললো,

'আপনার প্রতি আমার কোনো রাগ বা কোনো অভিযোগ নেই।তাহলে সে ক্ষেত্রে ক্ষমার কোনো কথাই আসে না।'

রাইসানও নিজের চোখের পানি মুছে খুশি হয়ে বলল,

'তাহলে তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে?'

রাত কথাটা শুনে একটু হাসলো। রাইসান ঠিক বুঝতে পারলো না।

'আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।তাই ক্ষমার কোনো কথা নেই।কিন্তু তার মানে এই না যে আমি আপনার কাছে ফিরতে চাই!'

'রাত প্লিজ।আই লাভ ইউ ।'

রাত আবারো হাসলো।

'এই ভালোবাসেটা যদি যেদিন দেখাতেন তাহলে হয়তো আসার কথা ভাবা যেত।'

রাইসান চোখ তুলে তাকালো।

'আমি এটা বলার চেষ্টা করছি না ,আমাকে আপনি নিজের কাছে রাখেন নি।আমি এটা বলতে চাচ্ছি যে,ভালোবাসা কাকে বলে সেটাকে আগে বোঝার চেষ্টা করেন।'

রাইসান মাথা আবারো নিচু করে চোখের পানি ফেলে তারপর সে কিছু বলতে যাবে তার আগে রাত বলে উঠে,

'আচ্ছা এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিলাম।ভুল মানুষের দাড়ায় হয়।কেউ ফেরেশতা নয়।কিন্তু একবারো সত্যটাকে দেখার চেষ্টা করলেন না?'

'আ'ম সরি রাত।'

'কিন্তু তবুও আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। ভূলে এইসব করেছেন যার জন্য আপনি এখন অনুতপ্ত।আর থাকলো ক্ষমার বিষয়।আপনি যেহেতু আমার সাথে একবছরের মতো থেকেছেন সেহেতু এতটুকু তো বুঝেছিলেন যে আমি কখনো কারো প্রতি রাগ ধরে থাকি না।তাকে সেদিনই ক্ষমা করে দেই।কারণ আমরা যদি আমাদের ক্ষমা না করি তবে আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের গুনাহ এর জন্য কখনোই ক্ষমা করবে না।আর আমি আপনাকে ক্ষমা করার কেউ নই,সব আল্লাহর হাতে।'

রাত একটা হাফ ছাড়লো।তারপর শেষ কথা বললো।

'আমি আপনার কাছে ফিরে যেতে পারবো না।কারণ আপনার আমার ডিভোর্স হয়েছে।আপনি আমার কেউ নন আর আমি আপনার কেউ নই।আপনি আমার জন্য পর পুরুষ আর আমি আপনার জন্য।আত্মসমান বলতে কিছু একটা আছে।আর নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে আপনার কাছে ফিরে যাওয়া অসম্ভব।'

'তাহলে এভাবেই রেখে যাবে?

'রাইসান যদি কখনো একটুকুও ভালোবেসে থাকেন আর নিজের ভুল বুঝতে পারেন তবে আমার সামনে কখনো আর আসবেন না আমি অনেক ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।আর ইন শা আল্লাহ থাকবো।আমি কখনোই আপনার অমঙ্গল চাইনি,আপনি মেঘলার সাথে ভালো থাকেন চেয়েছি।আর এখনো চাইবো আপনি যেনো ভবিষ্যতে ভালো থাকেন ইন শা আল্লাহ।আর আপনার প্রতি যদি কখনো কোনো অন্যায় , দুর্ব্যবহার করে থাকি আর বাকিসব আমার ভুল ত্রুটি জন্য আমি ক্ষমা প্রাপ্তি। অস্টাওদিল্লাহ।

নিজের আত্মসম্মান কে বিসর্জন দিয়ে তার কাছে ফিরে যাওয়াটা অসম্ভব।আর যেহেতু তাদের ডিভোর্স হয়েছে সেহেতু কোনো কথাই উঠে না।রাত যদি আজ ফিরে গেলে হেরে যাবেন একজন মেয়ে,হেরে যাবে সে তার আত্মসম্মানের কাছে,হেরে যাবে সে নিজের কাছেই।ফিরে আসবে না রাত সেই কষ্টের দিন গুলো।কতই না কেঁদেছিল সে কতই না কষ্ট পেয়েছিল সে।আজও কষ্ট পায় সেদিন গুলোর কথা ভেবে।রাইসান রাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।আজ নিজের বলা প্রতি কথা, প্রতিটি কাজের উপর খুব রাগ ঘৃণ্য লাগছে রাইসানের।এমনি হয় রুপের পিছনে ছুটলে।

 

তানজিলা_তাবাচ্ছুম(রাত)❤️

____________সমাপ্ত__________

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।