মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙতেই লক্ষ্য করলাম আমার পাশে কেউ একজন শুয়ে আছে।
ঘরে কোনো আলো নেই। পুরো ঘরটা জুড়েই অন্ধকারে ভরপুর। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গার পর একপাশ থেকে অন্যপাশ হওয়ার সময় হাতের সাথে কারো হাতের নখের স্পর্শ পেলাম। ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো। এত রাতে কে আমার ঘরে আসবে?
দরজা ছাড়া ঘরে ঢোকার মতোও কোনো মাধ্যম নেই। রুমে একটা দরজা আর দুইটা জানালা। সবগুলোই ভালোভাবে বন্ধ করা। তাহলে আমার পাশে যে শুয়ে আছে সে কিভাবে ঘরে ঢুকলো? মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গেলো।
তাহলে কি এটা কোনো খারাপ কিছু? এটা কি কোনো ভূত পেত্নী বা খারাপ কোনো জিন? এটা ভাবতেই ভয়ে গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেলো। সাথে সাথে ভয়ে বিড়ালের মতো লাফিয়ে উঠে বিছানার এক কোনে বসে কাঁপতে লাগলাম।
জীবনে অনেক ভূতপ্রেতের গল্প শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে কখনো দেখিনি। দেখার কোনো ইচ্ছাও ছিলো না। আমি তো কখনো কোনো ভূতের ক্ষতিও করিনি। তাহলে আমাকে ভয় দেখানোর জন্য আমার বিছানায় কেন আসতে হবে ভাই?
শুনেছি রাতে নাকি ভূত মানুষের ঘরে এসে নানান ভাবে ভয় দেখায়। কারো পাশে সাদা কাপড় পড়ে শুয়ে থাকে। আবার কারো ঘরের সিলিংয়ের সাথে লাশ হয়ে ঝুলে থাকে। সেই ছোট থেকেই ঘরে আমি একা থাকি। কখনই আমার সাথে এমন কিছুই ঘটেনি। তাই কারো এসব কথায় কখনো পাত্তাও দিতাম না। আজ দেখছি সত্যি সত্যি আমার পাশে এমন কিছু শুয়ে আছে।
অনেক সময় বিছানার কোনে এভাবে বসে থেকে দোয়া দরুদ পড়তে লাগলাম। এখনও ভূতটা শুয়ে আছে নাকি চলে গেছে, আঁধারের জন্য বুঝতেও পারছিনা। ভালোভাবে দোয়া কালাম পড়ে সাহস করে হাত বাড়িয়ে দিলাম বোঝার জন্য যে এখনও আছে কিনা।
হাত দিতেই হাতের সাথে খোলা চুলের স্পর্শ পেলাম। অনেক লম্বা চুল। সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিয়ে একেবারে কচ্ছপের মতো করে হাত, পা, মাথা শরীরের মধ্যে গুটিয়ে নিয়ে আরো বেশি কাঁপতে লাগলাম।
ভূতের মাথায় লম্বা চুল। তারমানে এটা মেয়ে ভূত অথবা কোনো পরী। শুনেছি ভালো ছেলেদের কাছে রাতের বেলায় পরী আসে। পরীরা নাকি সুন্দর চেহারার ছেলেদের সাথে প্রেম পিরিত করে। কিন্তু আমার যে চেহারা, এতে পরী কেন, আমাকে দেখে পেত্নীরাও ভয়ে পালাবে। তাহলে আমার কাছে কেন পরী আসবে?
একটু পরেই মনে পড়লো সাতদিন আগে আমি একটা ক্রিম কিনেছিলাম টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে। মাত্র ত্রিশ দিনে ফর্সা ও সুন্দর হওয়ার ক্রিম। সেটা মেখে মনে হয় কাজ হয়েছে। মাত্র সাতদিনেই সুন্দর হয়ে গেছি তাহলে? তার জন্যই হয়তো পরী এসেছে আমার কাছে।
কিন্তু আবার মনে পড়লো যে পরীরা যেখানে আসে, সেখানে নাকি অনেক আলোতে ঝলমল করে। এখানে তো কোনো আলো নেই, ঘোর অন্ধকার। তাহলে এটা কখনই পরী হতে পারেনা। নিশ্চয় এটা কোনো পেত্নী হবে।
মনে মনে বললাম, "রাফি আজ তুই শেষ"। আজ আমি কিভাবে এই ভূতের হাত থেকে বাঁচবো? ভাবতে ভাবতে ঠিক তখনই আবার মনে পড়লো যে ছোট বেলায় শুনেছি ভূত পেত্নীকে নাকি বাম পা দিয়ে লাথি মারলে তাদের সেই লাথি খুব লাগে। তখন নাকি ভূতেরাও ভয়ে মানুষের কাছে আসেনা।
যেই ভাবা সেই কাজ। বিসমিল্লাহ্ বলে সজোরে বাম পা দিয়ে মেরে দিলাম এক লাথি। এতোটাই জোরে মেরেছি যে ভূতটা ধপাস করে বিছানা থেকে নিচে পড়ে গেলো। সাথে সাথে "মা গো বাবা গো, কোমড় ভেঙ্গে গেলো গো, মরে গেলাম গো" বলে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। তখন আমি দৌড়ে গিয়ে রুমের লাইট অন করলাম। লাইট অন করার পর দেখলাম মেঝেতে সাজুগুজু করা এক সুন্দরী মেয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে পড়ে আছে।
ওরে... এটা কি করেছি আমি? এটা তো দেখি আমার বউ। নতুন বিয়ে করেছি। আর আজ আমাদের বাসর রাত। সাথে সাথে বউকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
আসলে দীর্ঘ পঁচিশ বছর সিঙ্গেল থাকার পর এভাবে হুট করে বিয়ে করেছি জন্য এই অবস্থা। ভুলেই গেছিলাম যে আমি বিয়ে করেছি। কাল সারাদিনের ব্যস্ততায় খুবই ক্লান্ত ছিলাম। তাই বাসর রাতেও এরকম জব্বর এক ঘুম দিয়েছি। আর ঘুম ভাঙ্গার পর এরকম হুট করে পাশে কাউকে দেখে ভয় পেয়েছি। তারপরই এই কান্ড।
এদিকে বউয়ের চিৎকার শুনে চারিদিক থেকে সবাই রুমে এসে হাজির। আমি সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না। এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকার মানে বুঝলাম না।
একটু পর মামি চাচি টাইপের মহিলা গুলো তাদের মুখে কাপড় দিয়ে লজ্জামুখ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আর ভাবি দুলাভাই টাইপের যারা ছিলো, তারা কেমন যেন বাঁকা হাসি দিয়ে সবাই রুম থেকে একএক করে বেরিয়ে গেলো। তাদের এরকম রিয়েকশন দেখে আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না তারা কি ভাবছে।
মনে মনে বললাম "আরে ভাই আমি লাত্থি মেরে কোমড় ভাঙ্গছি, তোরা যা ভাবছিস তা নয়"। কিন্তু কেউ আমার মনের কথা শুনতে পেলো না। মনের দুঃখ মনেই চেপে রেখে বিছানায় এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
সমাপ্ত।
#রম্যগল্প
#ভূত_বিভ্রাট
লেখা: #Rafi_Ahmed
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
Comments (0)