বৈশাখ গত হয়ে জৈষ্ঠ্যও প্রায় যাওয়ার পথে। কিন্তু এখনো আকাশে মেঘ জমে না। মাঠে কাঠফাটা রোদ। রোদের উত্তাপে কৃষকের চামরা পুড়ে খাক হয়ে গেছে। রোদের যেন বিরাম নেয়। ভোরে সূর্য উঁকি দেওয়ার পর যে শুরু হয় — সারাদিন গিয়ে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যার আগে ডুবে যাওয়ার আগপর্যন্ত একটানা চলতেই থাকে। সারাদিন পৃথিবীকে একবারও চোখের আড়াল হতে দেয়না। আড়াল হলেই যেন হারিয়ে যাবে কোন এক গুপ্ত কুঠুরিতে। আর একবার হারিয়ে গেলে কোনদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না।
রোদের উত্তাপে নাকি মাঠ ফেঠে চৌচির হয় ; কিন্তু এখানে ঘটনা ভিন্ন। উত্তাপে মাঠ ফেটে চৌচির না হয়ে, হয় ধুলো। শেষ কবে কাউখলা গ্রামে বৃষ্টি হয়েছে তা মনে পড়ে না। পানি — পানি দেখা যায়, ঐ দূরে যেন সহসা সেখানে একটি সাগর সৃষ্টি হয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে জমির মিয়ার চোখ অকস্মাৎ ছলছল করে উঠে। ‘ ইনো হানি কোনথন আইয়ে ’, রমজান মিয়ার দিকে চেয়ে আনমনেই যেন কথাটা বলে ফেলে। কিন্তু যখন বুঝতে পারে তখন লজ্জায় মাথা নত করে সে।
‘ কোনৎ হানি? ’, রমজান মিয়ার চোখ এক অপার আশায় তাকায় সে দিকে। মনের চরে যেন একটু আশার আলো জ্বলে। ‘ আল্লা আর ডাক পুরন করিয়ে ’ কিন্তু তার আশা ভরসা যেন সহসা পাঠ খড়ির মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় ‘ কোনৎ হানি? এ মরীচিকা এনা। ’
আহা! মরীচিকা।মরীচিকা দিয়ে কি আর ফসল ফলে! অভাব দুর হয়! তারা দুজন রাস্তার মোড়ের মাঝারি বটগাছটার নিচে স্তব্ধ জলাশয়ের মতো নিথর হয়ে বসে থাকে। সপ্নহীন দুইজোড়া চোখ তাকিয়ে থাকে সেই দিগন্তে। যেখানে মরীচিকারা আরো গাঢ় হয়। সেদিকে তাকিয়েই সপ্নহীন চোখ এক সুন্দর সপ্ন দেখে। দেখে যে ইশান কোন থেকে কলকলিয়ে টুকরো টুকরো কালো মেঘ ডেকে দেয় আকাশ৷ অন্ধকার ঘনিয়ে আসে পৃথিবীতে। জোর হাওয়া বয়। বজ্রপাতের গুড়ুম গুড়ুম শব্দ। সাথে দূর থেকে ভেসে আসে মানুষের আনন্দ ও উত্তেজনা মাখানো চিৎকার। ‘ ঐ গরু গুলান গরৎ নে.. মুরগী.. হাস.. ছাগল.... ’
সহসা যেন বহু প্রতিক্ষার বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে পড়ে আকাশ ফেটে। সেই বৃষ্টির ফোটায় তন্দ্রা অথবা ঘুম ভেঙে যায় জমির ও রমজানের। তারা দেখে বৃষ্টি, দেখে বৃষ্টির পানিতে খেত গুলোর প্রান ফিরে পাওয়া। মনে আনন্দ নিয়ে বুক উজাড় করে বৃষ্টিতে ভিজে। এবং কৃতজ্ঞতায় তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে পরে একটিই শব্দ ‘ আল্লাহ... ’
_____________________
মাহমুদুল হাসান মহসিন
২৩.০৫.২০২১ ইংরেজি
Comments (0)