Search

ফিরে পাওয়া

  • Share this:

সারাদিন কাঠ ফাটা রোদ সাথে প্রচন্ড গরম। কিন্তু বিকেল হতে না হতেই সব পাল্টে গেল। হঠাৎ কোত্থেকে মেঘের আনাগোনা, ঝোড়ো বাতাস, থেকে থেকে মেঘের গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ আর আচমকা আকাশ ফেটে বিদ্যুতের চমক। কে বলবে একটু আগেও যেখানে সূর্যের তাপে সব ঝলসে যাচ্ছিল এখন সেখানে সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে প্রশান্তি বিরাজ করছে!

.

সাবিহা হাতের কাজগুলো দ্রুত সেরে নিচ্ছে। এরকম আবহাওয়া তার খুব পছন্দ। আর সাথে যদি বৃষ্টি হয় তাহলেতো কোনো কথাই নেই!

তড়িঘড়ি করে কাজের বুয়াকে সব বুঝিয়ে দিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়েই সে চিরপরিচিত ছোট্ট ব্যালকনিটাতে চলে এলো। কতকাল পর ব্যালকনিটাও যেন তার প্রকৃত মালিককে খুজে পেল!

অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা তার প্রিয় গাছগুলোর মাঝ থেকে চেয়ার টেনে নিয়ে সে বসে পড়ল।

গাছগুলোর দিকে তাকাতেই তার মায়ের উপর খুব রাগ হচ্ছে কারণ সে বলেছিল গাছগুলোর যত্ন নিতে। অবশ্য তার মায়ের উপর পুরো দোষ দেওয়া যায়না কারণ সে প্রায়ই অসুস্থ থাকে। নয়ত বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেও তাকে রান্না করতে হয়নাকি?

হঠাৎ বহু কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি শুরু হল। আর সেই বৃষ্টির সাথে যেন তার সব রাগ, অভিযোগ ধুয়ে যেতে লাগলো। ঠোঁটে বাচ্চাদের মতো হাসি নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে মুখটা বাইরের দিকে এগিয়ে দিল। দমকা হাওয়ায় সাথের বৃষ্টির পানি তার মুখ এবং শরীরের বেশ কিছু অংশ ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু তার এই স্বর্গীয় সুখ নিমিষেই উবে গেল ব্যালকনির উত্তর দিকের রাস্তায় চোখ পড়তেই। হাস্যোজ্জ্বল চেহারা চোখের পলকে বিষন্নতায় ভরে গেল। অতীত হানা দিল সুখের দরজায়। মনে পড়ে গেল ৩ বছর, না ঠিক ৩ বছর নয়, ৩বছর ৪মাস আগের এমনই এক বৃষ্টিভেজা বিকেলের কথা।

.

প্রাইভেট পড়তে গিয়ে সায়েমের সাথে পরিচয় সাবিহার। দুজনেই ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি একটু কৌতুহলও ছিল। সেই কৌতূহল বস্তবে পরিনত হয় ক্লাসের নোট শেয়ারের মাধ্যমে। সেই থেকে হালকা কথাবার্তা তারপর বন্ধুত্ব। কিন্তু সেই সম্পর্ক আর বন্ধুত্বের থাকেনি।

সাবিহা যখন শয়তানের ধোকা বুঝতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। রবের কাছে কতবার ক্ষমা চেয়ে ফিরে এসে আবার ভুল করেছে। নিজেকে আটকানো শত চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বার বার ধোকায় পড়েছে।

বিগত এক মাস সাবিহা নিজের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করছে আর আল্লাহ সাহায্য চাইছে। না এবার সাবিহা পরাজিত হয়নি। কিন্তু সায়েম পরাজিত হয়ে চলে এসেছে তার বাসার নিচে দেখা করতে।

এমন সময় হঠাৎ আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলো সাবিহা ব্যালকনিতে এসে লুকিয়ে দেখে যে সায়েম এখনো সেখানে দাড়ানো। সে আর এক মুহূর্তও সেখানে দাড়াতে পারলনা, জায়নামাজ নিয়ে বসে পড়ল রবের দরবারে। তার কষ্টের কারণ গুলো মুছে দেওয়া জন্য দোয়া করল, শয়তানের ধোকা থেকে সাহায্য চাইল।

আল্লাহ হয়তো তার দোয়া কবুল করেছিল তাই নামাজ শেষেই সায়েমের মেসেজ, ' আমি চলে যাচ্ছি। আল্লাহ না চাইলে হয়ত আর কখনো আমাদের দেখা হবেনা। তবে আমি চেষ্টা করব এটা কে হালাল সম্পর্কে পরিনত করার ইনশাআল্লাহ।'

সায়েম এর এই মেসেজ তাকে সাময়িক ভাবে শান্তি দিলেও সে আবার চাইছিল তার সাথে দেখা করতে, একটু কথা বলতে। সাবিহা তার ব্যাপারে খোজও নিয়েছিল। সে নাকি তার বাবার ব্যবসার দেখভাল করার জন্য এই এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছে! সেদিন খুব কষ্ট হয়েছিল। কারণ তারপর থেকে তাদের আর কখনো দেখা হয়নি। কিন্তু মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়াও করেছিল কারণ আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

.

এগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ ছলছল করছিল, তখনই হঠাৎ পেছন থেকে কাধে উপর কারো স্পর্শ পেয়ে পুরো শরীর কাপুনি দিয়ে উঠল। পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখে তার অতীত রাজ্য থেকে ফিরে পাওয়া হারিয়ে যাওয়া সেই চিরপরিচিত মুখ।

হ্যা সায়েম কাধে হাত রেখেছে!

সাবিহা সায়েমের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করে শশব্যস্ত হয়ে ব্যালকনিতে রাখা গাছগুলোর পরিচর্যা করতে লাগল।

- 'এই যে মহারানী, আসরের নামাজ কি পড়া হয়েছে? মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে এলো যে!'

-'হ্যা হয়েছে। অনেক আগেই।'

-'একটু পরেই আজান দিবে এখনো এখানে বসে যে? নাকি বৃষ্টির মধ্যে হারিয়ে গিয়েছেন?'

-'উফ! তুমি সবসময় একটু বুঝ। দেখছ না কাজ করছি?'

-'আচ্ছা বাবা কাজ শেষ হলে দ্রুত এসো জান্নত ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।'

-'ও ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে?আগে বলনি কেন!'

এই বলে সাবিহা সেখান থেকে দ্রুত প্রস্থান করল। যাওয়া সময় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তার চোখের কোনের নোনা জল যেন অতি তুচ্ছ মুখের এই বিজয়ের হাসির কাছে।

.

হ্যা সায়েম ফিরে এসেছিল ৩ বছর পর তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। ততদিনে সবকিছু মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছিল। সে-ও বাবার ব্যবসার হাল খুব ভালোমতো ধরেছিল। দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছিল। তাদের ২বছরের একটা মেয়েও আছে।

.

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যেই হারাম সম্পর্ক ছেড়েছিল আল্লাহ সেই সম্পর্ককেই তাদের জন্য হালাল করে দিল! ভাবতেই কৃতজ্ঞতায় সাবিহার চোখ জলে ভিজে গেল, আল্লাহ কি না পারে!

অচিরেই তার মনে পড়ে গেল সুরা আনফাল এর ৩০ নম্বর আয়াতটি "নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। "

______________________

 

~ মারুফা আকিমি

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।