মাঝ রাতে কানের কাছে ফিস ফিসিয়ে কথা শুনে আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো। তাকিয়ে দেখি আমার সদ্য বিবাহিতো স্ত্রী মিনু আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে খিলখিল করে হাসছে।
আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন কেনো?
হাসবো না কি করবো! আপ্নার মতো উদ্ভট চেহারার মানুষের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে, আপনার মুখ দেখলেই আমার হাসি পায়।
কিছুটা বিরক্তি মুখে বললাম; আমি এতই বাজে চেহারার তো আমায় বিয়ে করার কি দরকার ছিলো? আপনি বাসায় বলে দিতেন আমায় আপনার পছন্দ হয়নি।
আরে আপনাকে বাজে চেহারার বলি নি, বলছি উদ্ভট একটা চেহারা, দেখলেই হাসি পায়, আর আপনাকে খুব ভালো লেগেছিলো তাই বিয়ে করেছি, সারা জীবন হাসতে।
বলে কাপড় দিয়ে মুখ আড়াল করে হাসতে লাগলো, নিজের প্রতিই বিরক্ত হতে লাগলাম, কি মেয়ে বিয়ে করেছি যে কি না আমায় নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে।
এবার হাসি থামিয়ে দিয়ে বললো, আচ্ছা আপনি সিগারেট খান!
এবার বউ এর বিরক্তিকর প্রশ্নে মুখটা বাংলা পাঁচ এর মতো করে দিয়ে বললাম নাহ, সিগারেট একদম পছন্দ করি না।
আমি কিন্তু বহুবার সিগারেট খেয়েছি, সিগারেটের প্রতি টান যেনো অমৃতের সুধা!
আচ্ছা আপনি বাজে কথা রাখবেন, আমার ঘুম পেয়েছে একটু ঘুমাতে দিন দয়া করে।
নাহ আজকে আপনাকে ঘুমাতে দেবো না; আচ্ছা একটা কাজ করে দিতে পারবেন?
কি কাজ!
আমায় একটা সিগারেট আর একটা দিয়াশলাই এনে দিবেন; আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে একটা সিগারেট খাই।
আপনি কি পাগল! আপনার ভয় করছে না আমার সামনে আমায় বলছেন আপনাকে সিগারেট কিনে খাওয়াতে!
বাহ রে সিগারেট কি খুব খারাপ জিনিষ নাকি! আপনি জানেন উন্নত দেশের মেয়েরা সিগারেট খাওয়াকে স্মার্টনেস হিসাবে ধরে।
এইটা উন্নত দেশ না, এইটা বাংলাদেশ, আর আপনি যা ভাববেন সেটাই হবে না, আজেবাজে না বকে চুপচাপ ঘুমান , আর শোনেন এই বাজে অভ্যাস থাকলে আজ এখন থেকে পরিত্যাগ করে নিবেন , সমাজে আমাদের পরিবারের একটা আত্মসম্মান আছে, মানুষে আমাদের খুব বাজে ভাববে।
যাই ভাবুক আপনি এখন, এই মূহুর্তে আমায় সিগারেট এনে দিবেন নয়তো আপনাকে কি করবো ভেবেও পাবেন না।
আমি পারবো না বলে - শুয়ে পড়লাম,
বউ ন্যাকামো কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো ।
শেষ রাত্তিরে বউ কানের কাছে ফিস ফিস করে করে বললো এই আমি সিগারেট খাই না , আপনার সাথে একটু মজা নিচ্ছিলাম ।
ভালো এখন চুপচাপ ঘুমান একটু পরে সকাল হবে তখন আপনার সব কথা শোনবো।
আরে শোনেন না! আমার খুব ইচ্ছে করতেছে আইসক্রিম খেতে ।
ঘুম ঘুম চোখে বললাম শেষ রাত্রে কোনো দোকান খুলা পাবো না, সকাল হোক আমি আপনাকে আইসক্রিম কিনে খাওয়াবো ।
না এক্ষুনি আমি আইসক্রিম খাবো,!
আপনি তো খুব বিরক্তিকর, যত্ত সব উদ্ভট ইচ্ছে নিয়ে আসেন আমার কাছে!
আরে আপনি আমার বর আপনার কাছে ইচ্ছে নিয়ে যাবো না তো কার কাছে যাবো?
আচ্ছা হইছে এখন, ঘুমান যান;
না আমি আইসক্রিম খাবো ।
স্পষ্ট শোনতে পেলাম পাশের বাসার রফিক ভাই এর বউ রফিক ভাই এর সাথে আমাদের নিয়া হাসাহাসি করছে! খুব রাগ হচ্ছে বউ এর প্রতি, এই মেয়ে তো আমার মান ইজ্জত সব খেয়ে ফেলবে দেখছি , আশে পাশের মানুষ আমাদের নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে দিলো!
ভাবলাম আর কথা না বাড়িয়ে দেখি মোর্শেদ ভাই এর দোকান খুলা আছে কি না!
মোর্শেদ ভাই লোকটা ভিষণ হিসেবি , পাশের ফ্যক্টরিতে নাইট ডিউটি চালু থাকায় লোকজন সারা রাত দোকানে চা বিষ্কুট , খাওয়ার হিরিক লেগে থাকে সারারাত এই জন্য লোকটা সারারাত দোকান খুলে বসে থাকে , দিনের একভাগ ঘুমায় ।
শেষরাতে আরামের ঘুম ছেড়ে চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠলাম-
মোর্শেদ ভাই এর দোকান পনেরো মিনিটের রাস্তা, যেতে হবে হেটেই , শেষ রাতে তো আর কিছুই পাওয়া যাবে না।
একদম নিরিবিলি রাস্তা একটা কুকুর ও নেই, আশপাশ টা কেমন ভয়ানক লাগছে, অথচ এই রাস্তাটা আমার খুব পরিচিতো জন্মের পর থেকেই এখানে বড় হয়েছি।
হাটতে হাটতে মোর্শেদ ভাই এর দোকানে এসে দেখি দোকান বন্ধ , নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে এখন, কি মেয়ে বিয়ে করে ঘরে আনলাম , শেষ রাতে তার আইসক্রিম খাওয়ার শখ জাগে আর এই সময়টাতে মানুষ কুল না কীটপতঙ্গ গুলাও হয়তো ঘুমাচ্ছে।
কিছু না ভেবে বেঞ্চিতে শুয়ে পড়লাম চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি আচমকা রাহেলা আন্টির ডাক , কি রে আদনান তুই এখানে কি করিস!
কাঁচা ঘুম ভাঙতেই আন্টি কে দেখে ইস্তত বোধ করে বললাম আন্টি দোকানে আসছিলাম আইসক্রিম নিতে ।
বাব্বা, বউমার জন্য আইসক্রিম নিতে আসছিস বোধহয়! জানিস আমিও তোর কাকার কাছে আবদার করতাম, মানুষটা অনেক ভালো ছিলো ; যখন যা আবদার করতাম তখন তা কিনে দিতো।
এর মধ্যেই মোর্শেদ ভাই উপস্থিত, ভাই এর কাছ থেকে আইসক্রিম নিয়ে দ্রুত বাসার দিকে হাটতে লাগলাম, বাসায় পৌছাতেই হৈ রৈ কান্ড , ছোট বোন আমায় আড়ালে ডাক দিয়ে বললো ভাইয়া তুই নাকি গতরাতে বাসর ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলি?
আমি পালালে কি এখন আসতাম!
মিনু বাসার সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে আমি নাকি বাসর ঘর থেকে পালিয়েছি , বাসায় ঢুকতেই সবাই কেমন অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছিলো।
দাদি তো বলেই দিলো মেয়ে পছন্দ হয়নি তো বলে দিলেই পারতি কেনো এই মেয়েটাকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছিস!
আমি কারো কথা না শুনে চুপুচাপ আমার ঘরে ঢুকলাম ; ঢুকেই দেখি মিনু , জানালার পাশে বসে হাসছে ।
এই আপনি আমার নামে এইসব কি বলে বেড়াচ্ছেন?
কি বলছি সব পরে বলবো আগে আমার আইসক্রিম দেন ; বলে ছু মেরে আইসক্রিম নিয়ে গেলো।
আচ্ছা আপনি আমায় নিয়ে তামাশা শুরু করেছেন? আপনি মাঝরাতে উঠিয়ে আইসক্রিম খাবো, আইসক্রিম খাবো বলে চেচানো শুরু করলেন , সেই রাতে উঠে আইসক্রিম আনতে গেলাম আর আপনি সকালে উঠে আমার নামে বদনাম শুরু করছেন,!
আপনাকে নিয়ে তামাশা করবো কেনো ; কেউ নিজের বরকে নিয়ে তামাশা করে? আপনি বিপদে পড়লে বিধ্বস্ত মুখটা দেখলে আমার আরো হাসি পায়।
একদম চুপ!
আমার ধমকে মেয়েটা একদম চুপ হয়ে গেলো!
দরজার পাশ থেকে দাদি এসে , আমায় হুট করেই ধমক দিয়ে বলল বেয়াদব , নতুন বউকে ধমক মারিস কত্ত বড় সাহস তোর,!
আমি সব শুনেছি ; তুই ওর বর, তোর সাথে মজা করবে না তো কার সাথে মজা করবে , আর ওর ইচ্ছে অনিচ্ছে গুলা তোর সাথে বলবে না তো কার সাথে বলবে?
আর তোর সাথে যা করেছে সব আমার প্লেন মতোই করেছে; তোরা একজন আরেক জন কে চিনিস না জানিস না ; মেয়েটা তোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে, তোকে জানতে বুঝতে চাচ্ছে।
দুপুরে খাওয়ার সময় সে কথা বললো না
রাতে , এসে বললো দাদিমা আপনাকে খেতে ডাকছে!
রাতে ঘুমানোর সময় দেখি সে বিছানায় নেই।
আমি বারান্দায় পায়চারি করছিলাম , ভাবলাম দাদির ঘরে দেখি সে আছে কি না! গিয়ে দেখি দাদির সাথে শুয়ে আছে। আমি যেতেই দাদি বললো তুই এত রাতে আমার ঘরে কি?
দাদি মিনু -
মিনুর সাথে তোর কি?
দাদি আমি স্যরি:
আমি কি করলাম আবার আমায় স্যরি বলছিস কেনো? যার সাথে বাজে ব্যবহার করছিস তারে স্যরি বল ; কিন্তু আমার সামনে না ঘরে নিয়ে গিয়ে বলবি! আর কখনো যেনো এইসব না শুনি বলে দাদিমা কড়া কথা শুনিয়ে দিলো।
মিনু চুপচাপ ঘরের দিকে চলে গেলো।
আমিও তার পিঁছু পিঁছু রুমে গেলাম, এই শোনেন!
জ্বী বলেন;
স্যরি , আপনাকে ধমক দেয়ার জন্য।
মিনু হাসি দিয়ে বললো, এইবার না আপনাকে দেখে আরো হাসি পাচ্ছে।
কেনো?
এইযে গতকাল আমাদের বিয়ে হলো আজ থেকে ই আমায় ভয় পাচ্ছেন , ।
আপ্নাকে কই ভয় পেলাম?
আমি কি কি দাদিমা কে ডাকবো?
আরে না , বলে মিনুর মুখ চেপে ধরলাম।
এই ছাড়ুন আপ্নি তো দেখছি আমায় খুব ভয় পান।
একটুও ভয় পাই না।
ডাকবো কি?
না , ডাকার দরকার নেই;
তা হলে আপনি স্বীকার করুন আমায় ভয় পান।
কি অদ্ভুত মেয়ে রে বাবা, আজ পর্যন্ত এই বাড়ির একটা লোক পর্যন্ত আমায় কথা শোনাতে পারে নাই , এই মেয়ে এসেই কথা শুনিয়েছে , আবার ভয় ও দেখাচ্ছে ।
কি ভাবছেন স্বীকার করে নেন।
আচ্ছা স্বীকার করে নিলাম, আপনাকে ভয় পাই ।
আপনি আমায় আপনি করে বলেন কেনো? /
আপনিও তো আমায় আপনি করে বলেন তো কি বলবো?
আচ্ছা দুইজন ই তুমি করে বলবো?
আচ্ছা তুমি আমার সাথে এমন করলে কেনো?
তোমাকে পরিক্ষা করেছিলাম।
কি পরিক্ষা?
ধৈর্য আর ভালোবাসা পরিক্ষা।
পাশ করতে পেরেছি কি?
হু _
বলে মুখ লুকিয়ে নিলো।
লেখায়ঃআদনান
Comments (0)