Search

গল্পঃ আমার মোটুকে দেখতে লাগলাম

  • Share this:

সারাদিনে ৫ টা টিউশনি করি, টিউশনিতে স্টুডেন্টের আম্মুগুলো আমার নাম কে নামের হালে রাখে নাই।

একেকটা টিউশনিতে একেক নামে ডাকে। এই নিয়ে অনেকবার বলা হয়ছে যে আমার নাম মোরশেদ, মোরশেদ! কে শুনে কার কথা!

উনারা উনাদের মত ডাকতে থাকে।

একদিন একটা টিউশনিতে বললাম যে মোরশেদ নামটা মুখে না আসলে " রাজ " নামে ডাকবেন আন্টি। পরদিন গিয়ে দেখি আন্টি " রাজা " নামে ডাকা শুরু করছে। পরে মানসম্মান রক্ষার জন্য আন্টিকে বললাম "এ নামে ডাকার দরকার নাই আগের নামে ডাকতে থাকেন ।

★ সকালে যেটা পড়াই সেটাতে ডাকে মোশারফ

★ দুপুরে যেটা পড়াই সেটাতে ডাকে মুশফিক

★ বিকালে যেটা পড়াই সেটাতে ডাকে মুক্তাদির

★ সন্ধ্যায় যেটা পড়াই সেটাতে ডাকে মুর্শিদ বলে।

★রাতে যেটা পড়াই সেটাতে ডাকে মুরিদ

আমার নামটার কি একটা অবস্থা করল! ওফ,

যাক, স্টুর আম্মুরা এত নামে ডাকার পরও তেমন খারাপ লাগে না, যতটা খারাপ লাগে গার্লফ্রেন্ডের দেওয়া নামটা শুনলে। গার্লফ্রেন্ড আমাকে Blackberry ডাকে। গায়ের রং একটু কালো হতে পারে তারমানে এই নয় যে আমি Blackberry বা কালোজাম।

আমার গার্লফ্রেন্ডের নাম সুজনা। দেখতে অনেকটা হাতির মত। হাতি যেমন বড় বড় কানের কারণে নিজের শরীর দেখতে পাই না সুজনা ও ঠিক তেমন। বড় আয়নার অভাবে সে নিজের পুরা শরীর দেখতে পায় না। যদিও মোটা মেয়ে আমার পছন্দ। সে যে এত মোটা সেটা আমি মুখ ফোটে বলতেও পারিনা কারণ বলতে গেলে আমার রিলেশনের ১২টা।

একদিন রিক্সায় করে ঘুরতে যাওয়ার সময় তাকে বললাম একটু ছোট হয়ে বস?

পুরা রিক্সায় তো আমাকে দেখা যাচ্ছে না।

কথাটা বলার সাথে সাথে সে আমাকে এক ঘুষি দিয়ে রিক্সা থেকে ফেলে দিল। রাগে বাসায় চলে গেল। আমি নিরিহ প্রাণীর মত থাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে পারি নি। তার মনে কখন কি চায় সেটা আমি বুঝে উঠতে পারি না। তার মুখের উপর কিছু বলারও সাহস পাই না।

বাসায় পৌঁছে কল দিয়ে বলল রিলেশন Break up। এটা বলে সাথে সাথে কল কেটে দিল। আমি কল দিতে গিয়ে দেখি ততক্ষণে আমার নাম্বার ব্ল্যাকলিস্টে। ফেসবুকে ডুকে দেখি সেখানেও ব্লক।

আমি বাসায় এসে রাতে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরি। রাত ১২টায় সুজনার কল

Oii Blackberry!!!! তুমি আমাকে কল দাও নি কেন? তুমি জানো না আমি ব্লক খুলে দিছি?

কেমনে জানবো তুমি Block খুলছো?

কেন জানবে না! তুমি মিনিট পর পর কল দিয়ে চেক করো নি কেন? আমি জানতাম আমার চলে যাওয়াতে তুমি খুশি হবা। সব ছেলেরা এক। ওকে ভাল থেকো Bye!

আর কখনো আমাকে কল দিবে না!

এই বলে আবারও নাম্বারটা আগের জায়গায় ডুকায় দিছে।

রাত ২টায় আবার কল।

কিছুক্ষণ শান্ত শিষ্ট হয়ে কথা বলার পর রিলেশনকে আবার আগের জায়গায় নিয়ে গেলাম।

সম্পর্ক বেবি! জান! সোনা! বাবু তে রূপান্তর হল।

এভাবে ঘণ্টা দু-এক কথা বলারর পর Ummahh, Love u, Miss You, Good Nyt বলে দুইজনই ঘুমিয়ে পরি।

সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হলাম। ১১টা বাঁজে সুজনার কল। কল দেখে বুঝতে পারি যে রিলেশন আবারও Break up হবে কারণ গুড মর্নিং জানানো হয়নি এবং কোন কলও দেই নি। বন্ধুদের আড্ডায় পরে সব শেষ।

যে কথা সে কাজ "আবারও Break up!

বিকালে কল দিয়ে সুজনা আবারও বকাঝকা।

কারণ একটাই " আমি কেন তখন তার রাগ ভাঙ্গালাম না "

সরি টরি বলে সম্পর্ক আবারও সোনা! বেবি। জান! বাবু তে রূপান্তর করলাম!

এভাবে দিনে দুই-তিন বার ভাঙ্গে আর গড়ে আমার ভালোবাসা।

একদিন পহেলা বৈশাখে সুজনাকে নিয়ে ঢাবি'তে গেলাম গুরু জেমস এর কনসার্ট দেখতে। যেতে দেরি হওয়াতে সামনে জায়গা পাইনি। একদিকে আমি সাইজে ছোট অন্যদিকে পিছনে। জেমসকে পিছন থেকে দেখা কোন রকমে সম্ভব না। তাই রাগ করে সুজনাকে বললাম চল বাসায় চলে যায় কারণ আমি যাকে দেখতে আসছি তাকে দেখতে পাচ্ছি না। বাল! সুজনা কোনরকম চিন্তা বুদ্ধি ছাড়া আমাকে কোলে নিয়ে বলতে লাগল, এখন দেখতেছো।

আশেপাশের মানুষগুলো সবাই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আর আমি মূহুর্তে জেমস কে দেখা ভুলে গিয়ে আমার মোটুকে দেখতে লাগলাম!

লেখক: Morshed Uddin Raj

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।