চুল আঁচড়াতে গিয়ে মোহনা খেয়াল করলো অনেকগুলো কালো চুলের মাঝে একটা সাদা চুল উঁকি দিচ্ছে। ফুরফুরে মেজাজ টা মুহূর্তেই খারাপ হয়ে গেলো তার। কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। তাহলে কি বার্ধক্য এসে গেলো।
চেহারার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো অল্প অল্প ভাজ পড়তে শুরু করেছে। কয়েক বছর পর এগুলি আরো বেশি স্পষ্ট হবে। চিরুনি টা হাতে নিয়ে আয়নার ওই পাশে থাকা আরেকটা মোহনার দিকে তাকিয়ে মুর্তির মত বসে রইলো সে।
অরুপ জিজ্ঞেস করলো,
-কি হয়েছে মোহনা? একটু আগের উজ্জ্বল মুখ টা এমন অন্ধকারে ঢেকে গেলো কেন?
-কই? কিছু নাতো।
-আচ্ছা।
মোহনা ঘুরে দাঁড়িয়ে চুলে খোপা করে নিলো।
.
অরুপ সবসময় বলতো 'তোমার চুল গুলি একদম মেঘের মত।'
ওর শাশুড়ী মা একবার যখন মজা করে বলেছিলো, 'বউমা, তুমি তো আমার ছেলেকে তোমার আঁচলে বেধে রেখেছো।'
অরুপ তখন ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলেছিলো, 'মায়ের কথা একদম বিশ্বাস করবে না। আমি তোমার আঁচলে না, চুলে বাধা পড়েছি।'
.
পরেরদিন অরুপের ডাকে কিছুটা চমকে উঠে মোহনা। মোহনাকে এরকম চমকাতে দেখে জিজ্ঞেস করলো
-এভাবে চমকালে কেন?
-তুমি হঠাৎ ডাকলে তো। তাই।
-হাতে কি?
মোহনা হাতে রাখা চুলের কলপ টা লুকিয়ে বলল
-কিছুনা।
.
অরুপ বুঝতে পারছে মোহনার চিন্তা হচ্ছে। ওর শরীরে বার্ধক্যের ছাপ ও হয়ত মেনে নিতে পারছে না। সেদিন হঠাৎ সাদা চুল দেখে অনেকক্ষণ আয়নার দিকে তাকিয়ে ছিলো। অরুপের মাথার অনেক চুলেও পাক ধরেছে। বার্ধক্য যে এসে পড়ছে সেটার জানান দিচ্ছে।
অরুপ মোহনাকে হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে আসলো।
অরুপ মোহনার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার চুল গুলি এমন খোপা করে রেখো নাতো। কি সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে। চুল গুলিকে একটু অক্সিজেন নিতে দাও।
মোহনা তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
মোহনাকে এমন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অরুপ নিজেই মোহনার চুল গুলি খুলে দিলো।
-মোহনা তোমার আমার বলা একটা কথা মনে আছে??
-কি??
-আমরা দুজন একসাথে বুড়ো আর বুড়ি হবো। এই দেখো আমার চুলে পাক ধরে গেছে। আমি তো বুড়ো হচ্ছি। আর তুমি কিনা বুড়ি হতেই চাচ্ছো না।
এই বলে উচ্চস্বরে হাসতে থাকে অরুপ। মোহনার মুখেও এক চিলতে হাসি এসে যায়।
সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হয়ে এলো। এক ফালি সোনালি রোদ দুজনের মুখের উপরে এসে পড়েছে।
.
Comments (0)