বাসায় চা চক্র চলছে। পাশের বাসার এক দাদু আসায় আড্ডাটা ভালোই জমেছে। পাশেই বসে আলোচনা শুনছিলো ছোট্ট ছেলে জোভান। জোভান এবার ক্লাস থ্রিতে উঠেছে। জোভানের কাছেই তার বাবা বসেছিলো। যদিও সে তার বাবাকে ভীষণ ভয় পায়।
তখন মাগরিব পেড়িয়ে এশার সময়। টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক খুব ভালো করেই শোনা যাচ্ছে। সবার মত জোভানকেও এক কাপ চা দেওয়া হয়েছে। ছোট্ট জোভান কি এত গরম চা খেতে পারবে? সে অপেক্ষা করছে কখন চা ঠান্ডা হবে। জোভানের যেন তর সইছে না। দ্রুত ঠান্ডা করার জন্য একটা খাতা দিয়ে চায়ের উপর বাতাস দিতে লাগলো। কিন্তু অসতর্কতার কারণে খাতার আঘাতে সমস্ত চা তার পেটের উপর পরে যায়।
একটু ভাবুন তো! উত্তপ্ত গরম চা যদি জোভানের মত ছোট্ট বাচ্চার গায়ে পড়ে তাহলে সে কী করবে? গরমের তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করবে, চিৎকার করবে, কান্না করবে। তার বাবা-মা তাকে শুশ্রূষা করবে, সান্ত্বনা দিবে, ডাক্তারের পরামর্শ নিবে; কপালে আদরের চুমু খেয়ে বলবে:- এইতো বাবা, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে!
কিন্তু জোভানের ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। তাৎক্ষণিক সে তার গায়ের পাতলা টিশার্ট সড়িয়ে দেখে গরমের তীব্রতায় পেটের কিছু চামড়া গলে খসে যাচ্ছে। চারপাশে আরো অনেক যায়গায় গরমে ফোস্কা পড়ছে। তারপরও জোভান ব্যাথায় চিৎকার করেনি, যন্ত্রণায় কান্না করেনি। সে তার বাবাকে জল্লাদের মত ভয় পায়। ছোট্ট জোভান জানে, যদি বাবা তার এই বোকামি দেখে তাহলে বাবা তাকে আরো মারবে! কিন্তু বাবা তো তার একদম নিকটেই! এতক্ষণে হয়ত তিনি সব বুঝে গেছেন। আজ তার রক্ষা নেই! এখন সে কী করবে? বাবা থেকে বাঁচতে হলে দৌড়ে পালানো ছাড়া গতি নেই।
সে তখনই উঠে নীরবে দৌড় দিলো, ঘর থেকে পালাতে হবে। যেভাবেই হোক বাবার আড়াল হতে হবে। কিন্তু বাহিরে রাতের অন্ধকার দেখে তার মন কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলো। অন্ধকারে নাকি ভূতপ্রেত চলাফেরা করে। জোভান ভূতকে প্রচণ্ড ভয় পায়। সন্ধ্যার পর থেকে সে একা কখনো বের হয় না। যদি ভূত তার ঘাড় মটকে দেয়! বাহিরে কোনো প্রয়োজন হলে মাকে সাথে নিয়ে যায়। এখন যে সে একা একা ঘর থেকে বের হচ্ছে! যদি তার সামনে ভূত এসে দাঁড়ায়, তখন? এত ভাববার সময় নেই। জোভান ভূতের ভয়ে থামলো না। এক দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে উঠানের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ভূতপ্রেতের চেয়ে বাবার ভয়টা বেশি চেপে গেছে।
তারপরও জোভানের রক্ষা হলো না। পিছু পিছু বাবাও ছুটে এসেছে। এসেছে মা, ভাই-বোন সহ প্রতিবেশী দাদুও। বাবা এসেই দু হাত দিয়ে জোভানের গলা ধরে এক ধাক্কায় শূণ্যে ধরে রাখলো। রাগে কটমট করছে বাবার চেহারা। বাবার ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে জোভানের অন্তর কাঁপছে।
জোভানের গায়ে উত্তপ্ত চায়ের যন্ত্রণা নেই, গলায় কান্না-চিৎকার নেই, চোখে ব্যথার অশ্রু নেই। শূণ্যে ঝুলে ঝুলে সে ভাবছে— পেটের কিছু চামড়া খসে গেছে, কোথাও ফোস্কা পরেছে। আচ্ছা, ফোস্কা হয়ে ওঠা চামড়াগুলোও কি খসে গেছে?
লেখক:- জুবায়ের আহমাদ শরীফ
৩০/৫/২১ বা, মস, স ৯:৩৩
Comments (0)