মাসুদ এখন ভালো হয়ে গিয়েছে।বিআরটিএ তে চাকরি করলে সে কখনই ভালো হতে পারবে না।তাই সে বিআরটিএ এর চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।সেই চাকরি ছেড়ে সে এখন এদেশের বড় একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট এ৷ চাকরি নিয়েছে।মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট এর হেড সে।
দুই দিন আগের ঘটনা।মাসুদ খুবই চিন্তিত তার ই-কমার্স সাইটকে নিয়ে।তাদের প্রতিপক্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারারাজের লোগো এখন জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের গায়ে।সে হিসেবে তার কোম্পানির প্রচার নেই বললেই চলে।নিজেকে প্রশ্ন করলো সে,"কি করছি আমি!"
দুই দিন ভাবার পর মাসুস তার মার্কেটিং টিমকে নিয়ে মিটিং এ বসলো।
মিটিং শুরু হলো।
মাসুদ বললো,"প্রথম কথা হলো,আমরা কি করতেছি?এভাবে মার্কেটিং হয় না।নতুন কিছু করতে হবে বুঝলা।কারো মাথায় নতুন কোন আইডিয়া?"
টাকলু মাথার এক ভদ্রলোক হাত উচিয়ে বললেন,"স্যার,টিভিতে রান্নার শো স্পন্সর করলে কেমন হয়?"
মাসুদ নাক সিটকিয়ে বললো,"আমার ছোট বাচ্চাও এর থেকে ভালো বুদ্ধি দিতে পারবে আমাকে।আপনি কেন এখানে আছেন!আর কারো মাথায় কোন আইডিয়া!"
সবাই চুপ করে বসে রইলো।কেউ কোন কথা বললো না।মিটিং রুমে প্রায় ১০মিনিট পিন পতন নিরবতা।
মাসুদ গভীর স্বরে বললো,"তোমরা আমাকে আর ভালো হতে দিলে না!আমাকেই কিছু একটা করতে হবে নয়তো কোম্পানি পথে বসবে।"
মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট এর জুনিয়র অফিসার হিয়া মাসুদের প্রতি দুর্বল।কারন বিআরটিএ তে চাকরিকালীন সময়ে হিয়ার ফিটনেস বিহীন স্কুটারকে লাইন্সেস পাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলো মাসুদ।
যাই হোক,মাসুদ যখনই বললো যে তাকেই কিছু একটা করতে হবে তখনই হিয়া বললো,"কি করবেন স্যার?"
মাসুদ বললো"সারপ্রাইজ।সানডে সারপ্রাইজ।"
যাই হোক,এর পর দিনই স্যোশাল মিডিয়া তোলপাড় হয়ে গেলো।এক সেলিব্রিটি দম্পতি নাকি একে অপরকে সারপ্রাইজ দিবে।একজন সারপ্রাইজ দিবে এইটা লিখে স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করলো আর তার সাবেক বউ এইটা লিখে স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করলো যে সে নাকি সেই সারপ্রাইজের অপেক্ষায় আছে।আহা,কি আলোচনাই না হইলো সেটা নিয়া।বাপ রে বাপ।
দুই দিন পর,মাসুদ মার্কেটিং টিমের সবাইরে ডাকলো।গভীর গলায় বললো,"একটা গুড নিউজ আছে,একজন সাবেক সেলিব্রিটি দম্পতি আমাদের কোম্পানীর প্রমোশনে লাইভে আসবে।উনারা লাইভে আসবেন রবিবারে সন্ধ্যায় আমাদের স্যোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল গুলোতে।যততাড়াতাড়ি পারো এই নিউজটা আমাদের সকল স্যোশাল সাইটে ছড়িয়ে দাও।"
হিয়া আবার বললো,"স্যার,আমাদের রাইভাল কোম্পানি তো জাতীয় দলের প্সন্সরশিপ নিয়া ফেলছে।আপনি যে এই সাবেক দম্পতিদের দিয়া আমাদের কোম্পানির প্রমোশন করাচ্ছেন এতে কি লাভ হবে আদৌ?"
মাসুদ খানিকটা মুচকি হেসে বললো,"খালি উনারা একবার লাইভে আসুক,এর পর বুঝবা আমি কেন উনাদের দিয়া প্রমোশন করাচ্ছি।"
হিয়া আবার প্রশ্ন করলো,"আচ্ছা স্যার,উনারা কি ফ্রি তে আসতেছেন প্রমোশন করতে?"
মাসুদ খানিকটা রেগে গিয়ে বললো,"তুমি মার্কেটিং এ কেন আসছো চাকরি করতে?আমরা কি জনসেবা করতেছি যে উনারা ফ্রিতে আমাদের প্রমোশন করবে?স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশি টাকা নিসে।উনারা যে সেলিব্রিটি কাপল উনারা জানে।তুমি খালি দেখো উনারা লাইভের আসার পরে কি আগুনই না লাগে।"
"অবশেষে এক হচ্ছেন কি হাতসান-থিমিলা?"
"কি সারপ্রাইজ দিচ্ছেন হাতসান,থিমিলাকে?"
এই রকক ডজনখানেক মুখোরোচক শিরোনামে নাম করা কয়েকটি টিভি চ্যানেলে রিপোর্ট প্রকাশ করা হলো।ইউটিউব,ফেসবুক,টুইটার সবখানেই শুধু "কি সারপ্রাইজ দিবে হাতসান,থিমিলাকে!" এই এক কথা।
প্রমোশন শেষ।এর পরের দিনের ঘটনা,স্যোশাল মিডিয়ার ওয়ালে ওয়ালে শুধুই,
"ধরো যদি হটাৎ সন্ধে,তোমার দেখা আমার সঙ্গে!" এই গান বাজতেছে।
প্রমোশনে আসার পর সাবেক স্বামী তার সাবেক বউয়ের কথা গুলো স্ক্রীনে চোখ রেখে শুনতে পারে নি।হয়তো উনি কষ্ট পেয়েছিলেন,কিছু একটা হয়তো উনার মনে পড়ে গিয়েছিলো।
কথা হলো এই যে উনি কষ্ট পেলেন,এটা উনি ইচ্ছে করেই পেয়েছেন আর এর জন্য উনি পর্যাপ্ত পরিমান অর্থও পেয়েছেন।যাই হোক,পাবলিক খেয়েছে, একদম গো-গ্রাসে গিলেছে সব কিছু।
পরদিন,মাসুদের অফিসের সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানো হচ্ছে।হিয়া অফিসে ঢুকতেই একজন অফিস স্টাফ হিয়ার হাতে একটা কালো জাম ধরিয়ে দিলো।হিয়া সেই কালোজাম খেতে খেতে মাসুদের রুমে গিয়ে তাকে কংগ্রেচুলেশনস জানালো।আর বললো,"স্যার,স্যোশাল মিডিয়াতে তো মানুষ পুরো ইমোশনাল হয়ে গেছে।আমি নিজেও হয়ে গেছিলাম,পরে আপনার কথা মনে পড়লো।আপনি যে উনাদের কতগুলো টাকা দিলেন সেটা মনে হতেই কেমন যেন আমার সব ইমোশন উবে গেলো।"
মাসুদ খানিকটা গম্ভীর গলায় বললো,"উনাদের টাকার প্রয়োজন আর আমাদের প্রমোশনের,মানুষের ইমোশনাল হওয়াটা তাদের ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত।যাই হোক এখন তুমি আরেকটা কালো জাম খাও,এই নাও।"
হিয়া খানিকটা ন্যাকামো করে বললো,"স্যার,একটু খাইয়ে দিবেন প্লিজ?"
মাসুদ বললো,"এদিকে আসো,হা করো।"
হিয়া চোখ বন্ধ করে হা করে তার খোলা মুখটা মাসুদের দিকে নিয়ে গেলো।
ঠাস করে একটা চড় বসে গেলো হিয়ার গালে।হিয়া গালে হাত দিয়ে তিক্ত দৃষ্টিতে মাসুদের দিকে তাকিয়ে আছে।
মাসুদ খানিকটা সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললো,"মাসুদ আর আগের মতো নেই,ভালো হয়ে গিয়েছে।"
লিখাঃপ্রীতম মজুমদার
Comments (0)