সে বলল তাকে ভুলে যেতে, ঠিক আছে আমিও রাজি কিন্তু আমার ও শর্ত আছে ।
জানতে চাইলো,কী শর্ত?
আমি আর সবার মতো বলবো না যে ভালোবাসার অধিকার দাও অথবা একা ভালোবেসে যাবার জন্য সামান্য করুণা দাও মনের কোনে ব্লা ব্লা। আমি আমার ভালোবাসার প্রতিদান চাই, হ্যা ঠিক শুনেছেন প্রতিদান এখন বলবেন যে প্রতিদান কিসের? ভালোবাসা তো নিঃস্বার্থ? হ্যা ভালবাসা নিঃস্বার্থ আর এটা আমি মানতে বাধ্য তবে ভালোবাসার যোগ্য যে সবাই নয় তা আমি আপনাকে মানাতে আপ্রাণ চেষ্টায় মগ্ন,
রসিকতা বাদ দিয়ে সে আমার ভালোবাসার মূল্য জানতে চাইলো।
আমিও আজ তাকে ছাড়ছি না ,
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বারান্দায় পড়ন্ত বৃষ্টির দিকে চেয়ে বলতে লাগলাম তো বলেন কত দাম দিতে পারবেন আমার ভালোবাসার? কত আছে আপনার কাছে?
সে একটু নড়েচড়ে বসলো কেননা এমন সিরিয়াস সময়ে কেউ ই এমন ডিল করবে না যেখানে আমি বিনা দ্বিধায় কথাগুলো বললাম।
সে একটু প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই তাকে প্রাধান্য না দিয়ে আমি চায়ের কাপটিতে চুমুক দিয়ে আবার ও বলতে শুরু করলাম , আপনার সাথে আমার সম্পর্ক ঠিক ৪ বছরের এমনই কোনো বৈশাখের আগমনের দিনগুলির কোনো এক দিনে আপনার আমার পথচলা শুরু হয়েছিল যাইহোক আপনার তো মনে নেই, তার দিকে চেয়ে দেখলাম যে সে আমার চোখে চোখ রাখতে পারছেন না, সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে আমি আবার বলতে শুরু করলাম,
তো ফিরিয়ে দিন আমাকে, এবার সে আমার দিকে চোখ রাখলো আমি তার চোখে পানির উপস্থিতি স্পষ্ট দেখতে পারছিলাম তবুও বললাম,কি হলো দিন ?
এবার সে গম্ভীর গলায় বললো,কি?
কি মানে কি? আমার সেই ৪ বছরের ৪টা বৈশাখ আমার চাই, আমাকে তা ফেরত দিন,
সে আবার ও গম্ভীর কন্ঠে বলল, রসিকতা কেন করছো? তা কি সম্ভব?
কেন নয়?? যদি কথা দিয়ে একটা মানুষ পিছুপা হতে পারে তাহলে এগুলো ও সম্ভব !!
সে কান্না ভরা চোখে বললো,পাগলামি করো না তো !!
-আচ্ছা বাদ দিলাম এটা কিন্তু মনে আছে কি যে আমি সিলেট মেডিকেল এ চান্স পেয়েছিলাম? শুধু আপনার জন্য যেতে পারিনি, তাহলে আমাকে এখন সেখানে ভর্তি করানোর প্রস্তুতি নেন !!?
সে বলল , তুমি যান যে যেসব সম্ভব নয় তবুও কেন করছো এমন ?
আপনি আমার কাছে এখনও জানতে চাইছেন?
এবার সে চোখের পানি ছেরে দিয়ে বলল, হ্যা জানতে চাইছি!!
কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি যেটার যোগ্য আপনি কখনো ছি....
কথাটা শেষ হতে না হতেই ও আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল,,, আমি এবং ক্যামেরা হাতে দাঁড়ানো রাফি সহ কলেজ ক্যাম্পাস এর সবাই ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম বোকার মতো করে, কারণ ও এতটাও ইমোশনাল না ।
ঠিক সেই মুহূর্তে স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে পিছন থেকে রাইসা বলে উঠলো কিরে নষ্ট করলি কেন মোমেন্টটাকে ? আবার খাটনি করা লাগবে (বিরক্তি নিয়েই কথাটি বললো রাইসা )
কিন্তু সে দিকে তার কোনো ধ্যান নেই, সে আমাকে জড়িয়ে কাদতেই আছে, সবাই পাগলটার অবস্থা বুঝে তাকে সান্ত্বনা দিলো তার পর যেয়ে সে স্থির হলো,
চোখ মুছে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ছেড়ে যাবে নাতো?
আমি কিছু না বলে নিঃশ্বব্দে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে অপলকে ওর চোখের দিকে চেয়ে থাকলাম যেই চোখে আছে আমার জন্য অপেক্ষা , আমার জন্য ভালোবাসা আমাকে হারানোর ভয়
পরিশিষ্ট : কলেজের সোনালী দিনের কথা বলতে বলতে কবে যে তার চোখে আবারো লোনা জল এসেছে তা খেয়াল করিনি তবে মানুষটা আমায় বড্ড বেশীই ভালোবাসে।
আজ ত্রিশ বছর পর হঠাৎ করেই কলেজ জীবনের লেখা সেই "রেড ডায়েরী" টা হাতে পরলো। অম্লমধুর সম্পর্কে কি দারুণ কেটেছে জীবনটা তার সাথে কথাটি ভাবতে ভাবতেই দেখি আমার হাতটা তার হাতে আবদ্ধ হয়ে গেছে এতক্ষণে!!
সমাপ্ত
কলমে - Suraiya Sharmila
Comments (0)