আমরা ছোট বেলায় দেখেছি, গ্রামের লোকজন অসুস্থ হলে হাতুরে ডাক্তার দেখাতো, তখনও তো লোকজনের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতো!
সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে যেত, জ্বর হলে কাঁথা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে থাকতো, পান্থা, গরম সব খাবারই খেতো, কোন সমস্যা হতো না।
তারপরও কষ্ট করে নিঃশ্বাস নিতো, সারা রাত অসুবিধা হতো, নানাবিধ অসুখে ভুগতো, শরীর খুব দূর্বল হতো।
কথা বলতে কষ্ট হতো, হাঁপাতে হাঁপাতে কথা বলতো কিন্ত, অক্সিজেন সিলিন্ডারের কথা ভাবতো না এমনকি, মাথাও আসেতো না।
তাছাড়া যে কেউ অসুস্থ হলে অক্সিজেন লেবেল কত তাও জানার কোন উপায় ছিল না, অক্সিজেন লেবেল কি, কত আছে তাও জানতো কিনা তা ঘুণাক্ষরেও জানান চেষ্টা করতো না।
হার্টের সমস্যা হয়েছে, ব্লকেজ এসেছে, প্রচণ্ড অ্যাসিড হয়ে বুক আটকে গেছে, তাও বুঝতে পারতো না, তবে গ্রামের লোকজনের অসুখ বিসুখ কম হতো।
ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাঃস নিতে পারছিলোনা, মারাত্মক পেটের যন্ত্রণা বা বুকের ব্যথায় যেন দম নিতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু অক্সিমিটার নামক এই যন্ত্র ছিল না - তাই তাদের স্নায়ুর চাপ বাড়াতে পারেনি, শ্বাসকষ্টকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে পারেনি।
তখন মানুষের স্নায়ুর জোর ছিল প্রকট, এইসব কষ্ট নিয়েও পরিবারের সাথে কথা বলতো, টিভি দেখতো আত্মবিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করতো সব ঠিক হয়ে যাবে।
অনেক কষ্ট পাবার পরও ব্যথা সেরে যেতো, বিভিন্ন টোটকা চিকিৎসা দিয়ে , বন্ধ নাক খুলে যেতো, যন্ত্রণা সেরে যেতো, শরীরের ঘাম জুড়িয়ে যেতো, চাঙ্গা হয়ে আবার উঠে দাঁড়াতো।
সে সময় প্রাণ খুলে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারতো, কেউ বাধা বাধা হয়ে দাঁড়াতো না, তখন একে অপরকে খুব বিশ্বাস করতো।
একটা ভাইরাস নাক মুখ দিয়ে ঢুকে গেলে নাকি শ্বাস নিতে কষ্ট শুরু হয়ে যাবে, এটা ছিল চিন্তার বাহিরে, শ্বাসকষ্ট দূর করতে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগবে, এমন মেডিকেল সাইন্সও জানা ছিল না।
আধুনিক যুগে আজ চিন্তাশক্তি চালিত হয় মিডিয়ার দ্বারা, প্রভাবিত হয় পারিপার্শ্বিক প্যানিক দ্বারা, আজ অক্সিমিটার আছে, কিন্তু মানুষের স্নায়ুর জোর নেই! তখন অক্সিমিটার ছিল না, কিন্তু মানুষের স্নায়ুর জোর বেশী ছিল।
এখন আমাদের চারপাশে প্রচুর বাতাস, এই বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে, পরিবেশ দূষণ অতি মাত্রায়, যা ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে অক্ষম, খাবার দাবার ফরমালিনযুক্ত, পানির ভিটামিন উপাদান কমে গেছে।
আজকের ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল, সাথে পারিপার্শ্বিক প্যাণিকের হাওয়া - এক ভয়ঙ্কর ট্র্যাপ, তাই অবশ্যই ভালো মানবিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে জরুরি বিষয়।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় স্মরণাপন্ন থাকাটা ভীষণ জরুরী, কারণ জ্বর কাশির কারণ হতেও পারে অন্য কিছু ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কিছু রোগেরও সংকেতও আসতে পারে।
একেবারে শুরুতেই RT- PCR টেস্ট এর ট্র্যাপে ঢুকে মনে মনে অক্সিজেন ঘাটতির কল্পনা করা যায় না, ভালো ভাবে ডায়গনসিস করানো হয় না - যাতে আসল রোগ চাপা পড়ে যায়।
আজকে জানা অজানার তথ্য পাওয়া যায় ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সব কিছুই জানা যায়, সারা বিশ্ব আজ সবার হাতের নাগালে, চিকিৎসা ব্যবস্থাও আধুনিক হয়েছে।
ছোট রোগ, বড় রোগ, সব রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাও আধুনিক হয়েছে এবং গ্রাম ও শহরের মধ্যে আজ তেমন পার্থক্য নাই, কিন্তু ছোট একটি ভাইরাসজনিত রোগ আজ সারা বিশ্বকে চোখ রাংগিয়ে এগিয়ে চলছে।
বিশ্বের নামিদামি দেশ এই ভাইরাসকে দূর করতে অক্লান্ত চেষ্টা করছে, কিছু সফলতাও এসেছে, বাকিটুকু ঠিক হয়ে যাবে,, একদিন এই চোখ ভাইরাসটি পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে, এটাই আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা।
এখন গ্রামের মানুষও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অভ্যস্থ হয়েছে, চিকিৎসা সেবাও মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে, যে কোন খবর গ্রামের লোকজন ও তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারে।
আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এই ছোট্ট ভাইরাসটি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে, মানুষ অন্তত একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারে, মানুষের জীবন যাপন স্বাভাবিক হবে।
লেখকঃ Md Harun Rashid Akon
Comments (0)