ভাই আমি ওরে না পাইলে মইরা যামু।আমার যেমনেই হোক ওরে পাইতে হবে।
- তো কি হইছে! তোর ফ্যামিলিরে ওর বাসায় পাঠা। আন্টি তো বলল যাবে।তাহলে সমস্যা কই?
- ভাই, আম্মুরে পাঠাইলে নাকি ওর আম্মু অপমান করবে। ভাই আল্লাহ কসম আমি আমার মারে পাঠাইতাম যদি শুধু অনন্যা বলতো আমার মারে অপমান করার পরেও ও আমারই হইবো। ও বলছে ফ্যামিলি না মানলে সব শেষ।
- হ্যা, সেটাও ঠিক বলছিস। সেদিন আমাকে যা বললো। তুই নাকি ওর পায়ের যোগ্যতাও রাখোস না। উনার মেয়েকে ঢাকায় বাড়িওয়ালা বা সরকারি চাকুরী ওয়ালা ছাড়া বিয়ে দিবে না।গাজাখোর নেশাখোর হলেও সমস্যা নেই। বাড়িওয়ালা হলেই হলো। তোরও বেটা দোষ আছে। তুই কেন বলতে গেলি তোর সরকারি চাকরি আছে। এখন মিথ্যা বলছোস, ঠ্যালা সামলা।
- ভাই, আমি সত্যি বুঝি নাই অনন্যা আমাকে ছেড়ে দিবে। আমি এটা যে মিথ্যা আগেই বলে দিছিলাম। অনন্যা তখন বলছিলো সব ঠিক করে নিবে আর ও আমাকে ছাড়বে না। কিন্তু এখন ও রিলেশন রাখতে চায় না। আমি ভাই মইরা যামু। আমি ওরে ছাড়া বাচুম না। আমার ওরে লাগবেই।
- শোন পাগলামি করিস না৷ অনন্যা তোরে ছেড়ে দিছে। আর তুই কইতাছোস ওরে ছাড়া মইরা যাবি৷
- ভাই অয় আমারে ভালোবাসে।
- চুপ আমারে হাসাইস না। ভালোবাসলে আবার ছাইড়া দেয়! ফ্যামিলির দোহাই দিয়া। তুই কি একদিন চাকুরি বাকরি করবি না? তুইও তো বিয়া করবি। তর বউ কি তখন না খেয়ে থাকবে? তোরও বাচ্চা কাচ্চা হবে। এসব মরা টরার চিন্তা বাদ দে৷ আর ওরেও বাদ দে। তুই আরো সুন্দর মেয়ে পাবি। তোর আম্মু আব্বুর কথা চিন্তা কর।
- না ভাই বাদ দেয়া যাইবো না।আমি ওরে পাই নাই মানে আমি মইরা যামু।
- শান তূই আমার কথাও শুনবি না?
- না আসিফ ভাই।
- আচ্ছা চল। তর মরতে আমিও সাহায্য করি।
অনন্যা ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখছিলো। তখনই আসিফ ভাই শানের মোবাইল থেকে কয়েকটা ছবি সেন্ট করলো অনন্যার মেসেঞ্জারে। ম্যাসেজ টা দেখেও ভিডিও দেখার পর সিন করলো। ছবি গুলা দেখে অনন্যার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো এমন অবস্থা। গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছে শান। জিহবা বের করা ছবি টা দেখে অনন্যার হাত থেকে মোবাইল টা পরে গেলো। কিছুক্ষণ কিছুই বুঝতে পারলো না কি করবে। ফোন টা হাতে নিয়ে কল দিলো শানের নাম্বারে। কল ধরলো শানের বোন।
- হ্যালো! শান কই?
- কেনো ভাইরে মাইরাও কি আপনার শান্তি হয় নাই? আমার ভাই আর নাই। এখন শান্তিতে থাকেন আপনের মা আর আপনে। কম অপমান করছেন আমার ভাইরে? আপনের মা তো মানেই নাই। আপনের পায়ে ধরার পরেও আপনে আমার ভাইরে ছাইড়া দিছেন। এবার সুখে থাকেন। কান্না করতে করতে এসব বললো শানের বোন। কল টা কেটে দিলো।
এসব শুনে অনন্যার মুখ থেকে নিঃশ্বাস বের হতেও কষ্ট হচ্ছিলো। ছেলেটা সত্যি সত্যি মারা গেলো। ভাবালাম মজা করে বলে। কতজনই তো বলে এসব কথা। তাই বলে ফাঁসি দিয়ে মরে যাবে। না আমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবো না।
৩ মাস পর......
বেশ বড়লোক ঘরের ছেলের সাথেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো অনন্যার। ৬ দিন পরেই বিয়ে৷ কিন্তু অনন্যার এখনো মন খারাপ হয়। কিছুক্ষণের জন্য শানের মৃত্যু টা মিথ্যা মনে হয়েছিলো। কিন্তু অনন্যা শানের সাথের যতজন কে চিনে তাদের কে জিজ্ঞাসা করে। তারচেয়ে বড় কথা আসিফ ভাই তো মিথ্যা বলবে না কোনোদিন। যাক মানুষ তো আজীবন আর থাকে না। এভাবে কয়দিন আমিও মন খারাপ করে থাকবো। আল্লাহ শানকে মাফ করুক। বিয়ে টা হয়ে গেলে এতটা আর মনে পড়বে না ওর কথা। ধুমধাম করে বিয়ে হচ্ছে অনন্যার। একমাত্র মেয়ে হবেই না কেনো। বাবা মা খুশি, অনন্যাও খুশি। এটাই তো সে চেয়েছিলো। কত মানুষ এসেছে তার বিয়েতে। ১০০ জন নাকি আরো বেশি? গুনতে গুনতে হঠাৎ শানকে হয়তো দেখতে পেলো। গুনার জন্য ঠিক মতো দেখতে পারলো না। হয়তো চোখের ভুল ছিলো।
.
-তারপর কেমন দেখলি বউএর সাজে?
-জি আসিফ ভাই, খুশিই দেখলাম। যাক ও খুশি থাকুক। খুশি থাকার জন্যেই তো আমাকে ছেড়ে বড়লোক কাউকে বিয়ে করলো। বড়লোক মানুষের বউরা হয়তো সুখেই থাকে। তারা তো টাকা দিয়া সুখ কিনে। আমিও খুশি। মা বাবার দেখাশুনা করতে পারতেছি। তোমার কথায় দোকান টা দেয়ায় ভালই ব্যাবসা হচ্ছে আমার। সাথে আল্লাহকে যতটুকু পারি ডাকা তো হয়ই। ভালো আছি আমি। সেদিন তোমার কথা গুলা না শুনলে হয়তো আমার বাবা মা এখনো কষ্টে দিন কাটাতো আমাকে হারিয়ে। আর আমিও জাহান্নামে।
- হ্যা সেদিন যদি ফটোশপের ছবি এডিটের বুদ্ধিটা না দিতাম। আজকে হয়তো মরে ভুত হয়ে থাকতি। তর বন্ধুরাও ভালভাবে অনন্যাকে বলতে পারছে। আর তোর ভাবির অভিনয় টা তো ছিলো সেই লেভেলের। তোর বোনের অভিনয় টা ভাল ভাবেই করেছে।
- হ্যা ভাই, তোমাকে ধন্যবাদ।
- ধন্যবাদের কিছু নেই। জীবনে বাঁচার মানে টা বুঝতে পারছোস সেটাই অনেক কিছু। কেউ মরে গেলো কিছুই আটকে থাকে না। সেটা বুঝানোর জন্যই আমি এমন টা করতে বললাম। তুই মরে গেলে কে ই বা কয়দিন মনে রাখতো? উল্টা তর বাবা মায়ের কষ্ট। মানসম্মান তো যেতোই সাথে তোকে হারাইতো। মরে যাওয়াই সর্বোত্তম সমাধান নয়। সেজন্যই তো আল্লাহ কোরআনে বলেছেন 'হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলগণের সঙ্গে আছেন।’ তার মানে আমাদের সবারই ধৈর্য রাখা উচিত আল্লাহ ভাল সময় আনবেন। আল্লাহ এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উনি কাউকে নিরাশ করেন না।
শান ভেবেছিলো অনন্যা কে বলে দিবে সে এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু কি দরকার? অনন্যা তো ভালই আছে। আমার মরে যাওয়ার খবর টা শুনে আমার বাসায় তো আসতে পারতো। আমি বেঁচে থেকেও ওর কাছে মরে যাওয়ার মতন। তবে এখন আর শান যে মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে সেটা নিয়া আফসোস হয় না। আর এদিকে অনন্যা সুখে নেই এমন টা হয়নি। অনন্যাও সুখে আছে। কে জানে এই সুখে থাকার মাঝেও কোনো দুঃখ হয়তো মাঝে মাঝে অনন্যাকেও হতাশায় ভোগায়।
লেখন- Sajeb Ahmed
Comments (0)