অফিসে কাজ করে বসের থেকে ছুটি নিয়ে বাসে করে মেছে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এই ব্যস্ত শহরে জ্যামের কারনে আটকে যেতে হলো। বাসে বসেই জানালা দিয়ে বাইরের দিগন্তটাকে দেখছিলাম। প্রচুর রোদ বাইরে। রোদের আলোতে বাসের পাশে অনেকটা ছায়া পড়েছে। তখনি এক মহিলা ফুটপাতের রোদের মাঝে এসে দাড়ালো। কোলে এক ফুটফুটে বাচ্চা। আমি মহিলার দিকে খুব একটা খেয়াল করলাম না। কারন বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে আমি অবাক। বাচ্চাটির প্রতি কেমন করে জানি এক মায়ায় জড়িয়ে পরলাম। বাচ্চাটি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তবে রোদের কারনে বাচ্চাটির খুব সমস্যা হচ্ছিল সেটা তার মাও বুঝতে পারলো। তখন মহিলাটি এই বাসের ছায়ার পাশে এসে দাড়ালো। পাশে এসে দাড়াতেই, আমি মহিলার দিকে তাকিয়ে অনেকটা ঘাবড়ে গেলাম। মহিলাটি ছিলো আমার তানহা। সে এখন এক বাচ্চার মা। অনেক খুশি লাগছে এতদিন পর তার মুখটা আবার দেখতে পেয়ে। আমি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এদিক ওদিক তাকাতেই সেও আমাকে দেখল।
তবে চিনতে পারলো না মনে হয়। একটু পরে আবারও আমাকে দেখল। এবার কিছুক্ষন চেয়ে থাকলো। তাকে একটু ভুরু কুচকাতে দেখলাম। মনে হয় তার একটু চেনা চেনা লাগছে, তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না। হঠাৎ বাস ছেড়ে দিলো। সামনে এগিয়ে চলছে বাস। ছায়াটা তানহার থেকে সরে গেল। আরে ধুর, আমি কোনো চিন্তা না করেই বাস থেকে নেমে এলাম। তানহা ততোক্ষনে আবারও ফুটপাতে উঠে গেছে। জ্যামটা ছেড়ে দিতেই চারপাশের সবকিছুই গতিশীল হয়ে গেল। শুধু দুটো মানুষ দাড়িয়ে আছে স্থির হয়ে। ফুটপাতের রাস্তার পাশে কারও জন্য হয়ত অপেক্ষা করছে। আমি তানহা সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আমার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো তানহা। আমি তার চোখ থেকে আমার দৃষ্টি ফেরাতেই পারছি না। একটু পর সে আমাকে ভালোভাবে দেখে নিলো। মনে হচ্ছে এখন চিনতে পেরেছে। আমি একটু হাসলাম তার দিকে তাকিয়ে থেকে।
আমি পকেট থেকে রুমালটা বের করে বাচ্চাটির মাথায় দিলাম। তানহা কেমন যেন অবাক হয়ে গেল। আমি বাচ্চাটা কোলে নিলাম। ও কিছুই বলছে না। ও মুখে হাত দিয়ে আছে। হয়ত কান্না আটকানো সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
আমি ওকে বললাম,
'কেমন আছিস?
'ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
আমি একটু স্টাইল করেই বললাম,
'আরে আমি তো বিন্দাস আছি। যেমনটা চেয়েছিলাম আরকি। জব করবো বন্ধুদের সাথে মাস্তি করবো আর ব্যাচেলর থাকবো। তেমনটাই আছি বলতে গেলে আমি ওয়াও।
তারপর আরও বললাম,
'বিয়েতে দাওয়াত দিতে পারতি। তোর বিয়ে, আমার একটা হোক তো থাকেই। তাই না?
তানহা মাথা নিচু করে আছে।
আমি আবার জিজ্ঞাস করলাম,
'এখানে কোথায় থাকিস?
ও বললো,
'এই তো উত্তরায় থাকি। আসলে ওর (বাবুকে দেখিয়ে) বাবার নিতে আশার কথা ছিল। আজকে আসতে দেরি করছে।
আমি বললাম,
'বাবুর বাবা কি করে? মাল্টিন্যাশনালে জব করে নাকি কোনো শিল্পপতি?
ও এবার একটু হাসলো। বললো,
' ও একটা ভার্সিটির শিক্ষক।
'তোর তো খুব ইচ্ছে ছিলো ভার্সিটির শিক্ষক হবি।
ও একটু মোলিন মুখে বললো,
'সব ইচ্ছাই কি মানুষের পুরন হয়।
আমি মৃদু হেসে দিয়ে বললাম।
'হুম সেটাই সব ইচ্ছাই কি আর মানুষের পুরন হয়।
তানহা আর কিছু বললো না। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
'সেই যে ভার্সিটির ছুটিতে গেলি তারপর তোর আর দেখাই পেলাম না। জানিস তকে অনেক খুজেছি কিন্তু তকে খুজে পায়নি।
তানহা অনেক্ষন চুপ থেকে বললো,
'আমাকে অনেক ভালোবাসিস তাই না?
'সেটা তো তুই ছাড়া ভালো আর কেউ জানে না।
তানহা মৃদু হেসে দিয়ে বললো,
'ভার্সাটি ছুটি হবার পর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে শুনি বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আমি বাবাকে অনেক বুঝিয়েছি" আমি এখন বিয়ে করবো না। কিন্তু বাবা আমার কথা শুনেইনি। তোর সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। বাবা আমার ফোনটা লুকিয়ে রাখে। সিদ্ধান্ত নিলাম" বাসা থেকে পালিয়ে তোর কাছে আসবো কিন্তু আমি পারিনি। কিন্তু বিশ্বাস কর তাহসান" এই যে জন্মদাতার উপর যে দায়িত্ব এই দায়িত্ব ছেড়ে তোর কাছে আসতে পারিনি। তকে ধোকা দিতে চাইনি রে। আমি বড় নিরুপায় ছিলাম।
তানহা আর কিছু বলতে পারলো না। ওর চোখে অঝোরে পানি পড়ছে।
'তানহা ওখানে দাড়িয়ে থেকে কি করছো? রিক্সা পেয়েছি তাড়াতারি এসো?
তানহা কে ইশারা করে কথাটা বললো একটা লোক।
রিক্সা নিয়ে দাড়িয়ে আছে লোকটা। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না লোকটা কে? তানহার জন্য অপেক্ষা করে আছে। তানহা নিজেকে সামলে নিয়ে পিছনে ফিরে ইশারায় বলল, আসতেছি।
তানহা আমাকে বললো,
'জানি তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস। আমি না তোকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি রে। আমাকে ক্ষমা করে দিস। তোর সাথে কাটানো সময় এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়াই। আমি একটুও ভালো নাই রে। ভালো থাকিস তাহসান।.....
আমি স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছি। কোনো কথা বলতে পাড়ছিনা। আমার কোল থেকে ওর বাচ্ছাকে নিয়ে সামনের দিকে হাটতে লাগলো। ও আমার দিকে বার বার ফিরে তাকাচ্ছে। ও মুখ ফুটে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না। হয়তো বলতে চাচ্ছে
"তোকে আর এই জনমে পাওয়া হলো না।
"ইট পাথরের শহরে ভালোবাসাটা আটকে পড়ে আছে" চাইলেও আর বের হতে পাড়ছিনা। "তোকে ছাড়া এই শহরটাকে অনুভুতিহীন মনে হয়। "পারলেও পালিয়ে যেতে পারি না।
"সমাপ্ত"
.
লেখা> তাহসান আহমেদ
Comments (0)