কলেজের ভেতর পায়চারীর সময় এক মেয়ে,
- ভাইয়া,ভাইয়া?
- হ্যাঁ বলো,
- ভাইয়া, একটা হেল্প করবেন?
- কীরকম?
- ভাইয়া, আমি এই কাগজগুলো কোথায় জমা দিবো বুঝতে পারছি না৷ আপনি কি বলতে পারবেন?
কাগজগুলো দেখে বুঝতে পারলাম নতুন ভর্তি গুলোর একটা।
আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বললাম- ওই যে, বিল্ডিং আছে না? ওখানকার হলরুমে এই কাগজগুলো জমা নিচ্ছে।
আমি চলে যাবো এমন সময় মেয়েটা- ভাইয়া,আমি তো হলরুম চিনি না,কলেজে এই প্রথম আসলাম। আপনি যদি সঙ্গে যেতেন, সমস্যা হতো কী?
- সমস্যা তো অনেক। ওখানে যাও, যাকে বলবে সেই হলরুম চিনে দিবে।
- আমি অচেনা কারো সাথে কথা বলি না।
- আমাকে চিনো?
- না।
- তাহলে আমার সাথে কথা বলছো কেনো? যতসব আজাইরা ঢঙ।
- আপনাকে দেখে চেনা মনে হলো তাই? ভাইয়া, রাগ করলেন কী?
- না। আমার সাথে সাথে চলো।
- আচ্ছা,ভাইয়া।
একটু বিরক্তি নিয়ে হলরুমের দিকে হাটতে শুরু করলাম মেয়েটার সাথে।মেয়েটা হাটতে হাটতে আবারো বলে- ভাইয়া, রাগ করছেন কী?
- বললাম তো একবার রাগ করিনি।
- তা ভাইয়া, আপনি কোন ক্লাসে?
- অনার্স ফাইনাল ইয়ার৷
- ওহ।
প্রায় কাছাকাছি এলে বলি,
- তা তোমার নাম কী?
- জান্নাতুন। আপনার কী নাম ভাইয়া?
- জোবায়ের। তোমার বাসা কই?
- পশ্চিম চকরাম।
- তোমার বাবার নাম কি শরিফুল?
- হ্যাঁ, ডাক নাম।আপনি কি করে জানলেন?
- তোমার মা'র নাম রেনু?
- হ্যাঁ কিন্তু আপনি কি করে জানলেন,ভাইয়া?
- তাহলে এখন থেকে আমাকে চাচা বলতে শুরু করো।
- কেনো?
- কারণ তোমার বাবা আমার ভাই হয়,আর তোমার মা ভাবী। তাহলে আমি তোমার চাচাই হচ্ছি তাই না?
- কেমন করে কী? আপনি আমাকে চিনেন?
হলরুমের সামনে দাড়িয়ে বললাম- এটাই হলরুম, ওই দেখো তোমার মতো অনেকেই কাগজপত্র জমা দিচ্ছে। এখন তাহলে আসি হ্যাঁ?
মেয়েটা অবাক চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে পারে না। কারণ আমি ততক্ষণে তার নাগালের বাইরে চলে আসি। নাভিশ্বাস ফেলে মনে মনে হেসে উঠলাম আর মুখে মিকে হাসি রেখে নিজেকে নিজে বললাম- মেয়েটা বেশিই ভাইয়া, ভাইয়া করছিলো। তার আইডির বদৌলতে বাবা-মার নাম জেনে ভালোই বোকা বানালাম।
'কি আর করবো সিঙ্গেল ছেলেদের কোনো মেয়ে এসে ভাইয়া বলে ডাকলে ডাইরেক্ট কলিজায় এসে লাগে।'
- আংকেল, আংকেল একটু শুনুন।
আমি ক্যাম্পাস ছেড়ে বের হচ্ছিলাম এমন সময় এমন ডাক শুনে কি জানি মনে হলো। কিন্তু আংকেল বয়সী আমি না ভেবে দিব্যি হেটে চললাম। কাকে উদ্দেশ্য করে ডাকছে সেটা পরিষ্কার না। কিন্তু ধীরে ধীরে ডাকটা একদম আমার কাছাকাছি আসতে আসতে সামনে চলে আসে। একটা মেয়ে আমাকে বলছে- আংকেল, আপনাকে কখন থেকে ডাকছি শুনতেই পাচ্ছেন না?
ভালো করে লক্ষ্য করেও মেয়েটাকে চিনতে পারলাম না। তবে দেখা দেখা মনে হলো। আমি জবাবে বললাম- আমাকে ডাকছিলে?
- হুম, আংকেল, আপনাকে। কেমন আছেন?
- ভালো, কিন্তু আমি তোমাকে চিনতে পারছি না। আর আমি তোমার আংকেল হলাম কবে?
- এই কি, এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ভূলে গেলেন? আমি জান্নাতুন।
- কোন জান্নাতুন?
- এতো তাড়াতাড়ি ভূলে গেলেন? ওই যে, কলেজে ভর্তির সময় আপনার সাথে দেখা হয়েছিলো। আমি চিনতে পারছিলাম না, আপনি হলরুম চিনিয়ে দিলেন। মনে পড়ছে?
- ওহ তুমি! কেমন আছো?
- ভালো।
- কোন বিভাগে ভর্তি হলে?
- সাইন্স।
- ভালো। ভালো করে পড় কেমন? আমার একটু কাজ আছে। আসি।
- কোথায় যাবেন আংকেল?
কিছু মেয়ে আর ছেলে যাচ্ছিলো পাশ দিয়ে তখন এই আংকেল ডাক শুনে তারা মিকে হাসি হেসে চলে গেলো। না অবস্থা বেগতিক৷ নিজের জালে দেখি নিজেই ফাঁসছি, গভীরভাবে ফেসে যাই তার আগে এখান থেকে বিদায় নিতে হবে।
জবাবে বললাম- বাজারে যাবো। আসি হ্যাঁ?
- আমিও যাবো আংকেল।
- কোথায় যাবে? আর প্রথমে এই আংকেল ডাকা বন্ধ করো।
- কেনো? আপনিই না বলেছিলেন আপনি আমার চাচা হন, তাই তো আংকেল বলে ডাকছি। মন খারাপ করছেন?
- কী হই বলেছিলাম?
- চাচা।
- তাহলে চাচা বলো, আংকেল কেনো বলছো?
- আংকেল বললে কি সমস্যা?
- আংকেল ডাকে সেই মধুরতা নেই, যেই মধুরতা চাচা ডাকে থাকে। এবার বুঝছো? আসি।
আমি চলে আসতে যাবো এমন সময় মেয়েটা গম্ভীর কন্ঠে বলে- ঢপ দিয়া বন্ধ করেন, ভাইয়া।
মেয়েটার মুখে আবার ভাইয়া ডাক শুনে একরকম হতভম্ব হলাম। মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম- কি বললে?
- বললাম, কারো অসহায়ত্ব নিয়ে খেলেন না, যেমনটা আমার সাথে খেলেছেন?
- কিরকম?
- আপনি সেদিন কেনো বলেছিলেন,আপনি আমার চাচা হন?
- কেনো যুক্তি পছন্দ হয়নি?
- আপনার সম্পর্কে সবকিছু জেনে বাবা-মাকে বললাম, বাবা-মা অনেক চিন্তা করেও আপনার সাথে কোনো সম্পর্ক খুঁজে পেলো না। মিথ্যে কেনো বলেছিলেন,সেটা বলুন এখন?
- কার কাছ থেকে আমার সম্পর্কে জেনেছিলে?
- আপনি যাওয়ার পর। হঠাৎ আবার যখন আপনাকে কলেজে দেখতে পাই তখন নতুন বান্ধবীদের দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে জানতে চাইলে তাদের মধ্যে একজন বলে সে আপনাকে চিনে। তারপর নাম ঠিকানা সবই বললো। কিন্তু আপনার কথার সাথে কোনো মিলই পেলাম না।
- কীরকম মিল?
- আপনি চাচা হওয়ার সাথে। এখন বলেন, আপনি মিথ্যে কেনো বলেছিলেন, ভাইয়া?
- এইটুকুর জন্য আমার এত সময় নষ্ট করলে? আর আমাকে উপাধিও দিয়ে দিলে?
- হ্যাঁ এখন বলুন ভাইয়া।
- আবার ভাইয়া? এই ভাইয়া ডাকাটা আমার পছন্দ হচ্ছিলো না দেখে তোমার সাথে মজা করেছিলাম।
- ভাইয়া কত সুন্দর ডাক, আর এটা শুনতে আপনার ভালো লাগে না?
- সে মুহূর্তে ভালো লাগে নাই তাই ওইরকম করেছিলাম। মন খারাপ করো না ওটা নিয়ে। আমি তো এ বিষয়টা ভূলেই গেছিলাম কিন্তু তুমি এখনো মনে রেখেছো ভেবে একটু অবাকই হলাম। এসব মজা ভেবে ভূলে যাও,কেমন? ভালো থেকো।
- কেনো আমাকে পছন্দ হয়েছিলো?
- কথা বাড়ানোর ইচ্ছে নেই। আসি।
- তার মানে আমাকে পছন্দ হয়েছিলো।
- আরে না। তোমাকে কি করে বুঝাই? বিটলা বুঝো?
- মানে?
- যে বেশিই দুষ্টামি করে আর ঘাড়ত্যাড়া তাকে বিটলা বলে। আমিও তেমনই। বিটলামি স্বভাব আগে থেকেই তো তাই যার সাথে পারি একটু বিটলামি করি। তোমার সাথেও করেছিলাম। এ নিয়ে মন খারাপ করে থাকো না৷ তোমাকে পছন্দের কথা আদৌ সত্যি না৷ তোমার মতো অহরহ মেয়ের সাথে মজা করি তাই বলে তাদের পছন্দ করি তা না। একটাকেই সামলাতে পারি না আর একজন?
- আপনার গালর্ফ্রেন্ড নেই আমি জানি।
- কে বললো?
- আপনার সম্পর্কে সব খোঁজ নেয়া শেষ।
- ভালো তো৷ খোঁজ নিতেই থাকো। আর সামান্য কথার জেরে এতো কথা কেনো তুলছো বুঝতে পারছি না। মাফ চাচ্ছি ওকে, মাফ করে দিও। এখন আসি, কেমন?
- আপনাকে ভালোবাসি তাই।
- কিহ!
মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলি- নেশা তুমি করছো না আমি? বুঝতে পারছি না।
- আপনি নেশাও করেন?
- এই মাত্র গাঁজা খেয়ে আসলাম কিন্তু পিনিক পেলাম না। মনে হচ্ছে, পিনিকটা তুমি পাইছো। যার কারণে উল্টাপাল্টা বকে যাচ্ছো।
- কি সব ফালতু কথা বলছেন?
- ফালতু কথা আমি না তুমি বলছো। চেনা নেই জানা নেই হুট করে এসে বলে ভালোবাসি, আর আমি বিশ্বাস করলাম তাই তো?
- সত্যি বলছি,বিশ্বাস করুন৷
- ধূর! ফালতু সময় নষ্ট করছি৷ তোমার যা বাসাবাসির বাসো আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমি এসব ভাবতে চাই না।
- আপনি ঠিকই ভাবেন,কিন্তু বলতে চান না।
- এ কোন ঝামেলায় পড়লাম? শোনো তোমাকে শেষবারের মতো বুঝাচ্ছি, কারণ আর বুঝানোর জন্য আমাকে পাবে না। তুমি আমার অনেক ছোট হবে, বোন হিসেবে তোমাকে যথেষ্ট স্নেহ করি বিধায় তোমার উপর ক্ষেপতেও পারছি না। নাহলে এরকম কথা কেউ বললে, তাকে ঝাড়তে ঝাড়তে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম। এসব আজে-বাজে ধারণা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। দরকার পড়লে তোমার বাবা-মার সাথে কথা বলে সত্যি সত্যি চাচা হয়ে যাচ্ছি তবুও এসব বাজে চিন্তা মাথায় নিয়ো না। পড়ালেখা করতে এসেছো, মনোযোগ দিয়ে করো। এসব টাইমপাস করার সময় আরো অনেক পাবে।
- আমি দেখতে খুবই খারাপ, তাই এমনটা বলছেন তাই না?
- খারাপের সাথে সাথ নয়। যেটা হওয়ার কথা না, সেটা হতে দিতে নেই৷ চমৎকার সুন্দরী তুমি। তোমাকে আমার পছন্দ হইছে বোন। এই ভাইয়াকে, ভাই মনে করে চলো এটাই ভালো হবে। কোনো সাহায্য লাগলে বলো, যতদিন আছি ততদিন নাহয় সাহায্য করার চেষ্টা করে যাবো।
- কিন্তু আপনার কথা ভাবতে ভাবতে অজান্তেই ভালো লেগেছে, আপনাকে।
- ভালো লেগেছে, কথা বলো আড্ডা দাও। কিন্তু আজেবাজে কথা বলো না৷ আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে, আমাকে যেতে হবে।
- শুনুন তো!
মেয়েটাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম। মনে মনে ভাবলাম, আচ্ছা বিপদে পড়লাম তো। না এখন এসব চিন্তা মাথায় নেয়া যাবে না। এসব বিষয় নিয়ে যতোই ভাববো ততই নিজে নিজে ফেঁসে যাবো। তাই এসব ভাবা বাদ দিয়ে নিত্যনতুন কাজে ব্যস্ত হয়ে থাকলাম৷ কিছুদিন তাকে নিয়ে ভাবতে মন বাধ্য করলেও এক সময় বিষয়টা ভূলে যাই।
হঠাৎ একদিন রাতে বাজারে সময় কাটাচ্ছিলাম এ সময় অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠে সালাম দেয়। সালামের উত্তর দিয়ে বললাম- জ্বি,
- আমি জান্নাতুন।
- কে?
- আমি জান্নাতুন, কলেজে যার সাথে আপনার দেখা হয়,কথাও হয়েছে দুবার।
- অনেক মেয়ের সাথেই তো কথা বলি। তুমি কে?
- আমাকে চিনতে পারছেন না? আমি জান্নাতুন।
- কোন জান্নাতুন?
- কত জান্নাতুন কে চিনেন আপনি?
- চিনি বেশ কয়েকজনকে।
- যে মেয়েকে চাচা ডাকতে বলেছিলেন, সেই জান্নাতুন আমি।
- ওহ হ্যাঁ, বলো।
- কি করছেন?
- সিগারেট ফুঁকছি।
- আপনি এসবও খান?
- কি বলবে সেটা বলো।
- আপনাকে আর কলেজে দেখতে পাই না৷ তাই ফোন দিলাম।
- নাম্বারটা পেলে কোথায়?
- যেভাবে পেয়েছি, পেয়েছি এতো ভাবতে হবে না আপনাকে।
- ওকে।
ফোন কেটে দিলাম। আবার ফোন আসলো, ফোন রিসিভ করে বললাম- আবার ফোন দিয়েছো কেনো?
- কেটে দিলেন কেনো?
- তুমিই তো বললে ভাবাভাবি বাদ দিতে।
- আমি ওই মিন করিনি।
- যেটাই করো, আমার কিচ্ছু যায় আসে না৷ কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো৷
- আমার কথা ভেবেছিলেন?
- কী বিষয়ে?
- আপনাকে পছন্দ করি সেটা।
- তো করো, এতে ভাবার কি আছে?
- ভালোবাসার কথাটা?
- আমি ওসব মাথায় নিই না কোনদিন। তাই কারো কথা ভাবিনা৷ আর তোমাকে ভূলেই গেছিলাম, তাহলে ভাববো কখন?
- আমি এতো খারাপ, যে একবারও ভাবেন নাই?
- শোনো, বারবার এক কথা তুললে কিন্তু এবার রেগে যাবো৷ তুমি ভালো না খারাপ আমি কি করে জানবো? আমি কি তোমার সাথে কখনো সময় কাটিয়েছি বা ঘুরেছি যে তোমার সম্পর্কে আমি জানবো। তবে তোমার ব্যবহারে মনে হচ্ছে তুমি শুধু খারাপ না, বেশিই খারাপ আমার চেয়েও।
- আপনি এমনটা বলতে পারলেন? আপনার কি ক্ষতি করেছিলাম বলেন তো?
- করোনি তবে করবে। তোমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে আমার মাঝে নেই। তাই ভালো হয়, আমাকে আর বিরক্ত করো না। রাখি।
- শোনেন তো।
- কী?
- আপনি কলেজে আসেন না কেনো?
- আমার মাস্টার্স কমপ্লিট তাই আর যেতে হয় না।
- যব করছেন?
- তোমার খোঁজদাতা কিছু বলেনি?
- না তো।
- আমি এখন চট্টগ্রামে থাকি।
- কেনো?
- এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। রাখি।
- কি করছেন ওখানে?
- কি করবো চাকরি?
- কি চাকরি?
- বেশিই কথা বলছো, তোমার সাথে সারারাত গল্প করার মতো সময় আমার নেই৷ বায়!
- প্লিজ,ফোন কাটবেন না। আপনি বাড়িতে আসবেন কবে?
- সেটা জেনে কি করবে?
- প্লিজ! শুধু বলেন কবে আসবেন?
- ঠিক নেই৷
- তবুও।
- দুইমাস পর।
- কতদিনের জন্য আর কত তারিখে?
- যাবো সাতদিনের জন্য৷ তারিখ ঠিক নেই। মাসের শেষ দিকে যেতে পারি।
- ধন্যবাদ ভাইয়া৷
- হইছে, এবার ফোন রাখি।
- কিছু সময় কথা বললে কি এমন হয়?
- হয়, সময় নষ্ট৷ বায়!
- বায়!
ফোনটা কেটে দিয়ে হাফছেড়ে বাঁচলাম। না মেয়েটা বেশিই বাড়াবাড়ি করছে৷ নাম্বারটা ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দিলাম। মেয়েটাকে একটা কথা মিথ্যা বলা হয়েছে যে আমি চট্টগ্রামে থাকি৷ যব করি সত্যি কিন্তু নিজ জেলাতেই থাকছি৷ তবে চট্টগ্রামে এসেছি একটা কাজে, সেটা শেষ হলে আবার ব্যাক করবো।
.
একমাস পর,
বাবা-মা জোর করতে শুরু করলো বিয়ে করা নিয়ে।যে বাবা-মা নিজেই বলতো আগে সেটেল হও তারপর ভাবা যাবে। সে বাবা-মা'ই বিয়েতে জোর করছে দেখে একটু অবাক হলাম। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে- বিয়ের বয়স হইছে, তাই বিয়ে করতে হবে। এতো দিন বেকার ছিলে, এখন চাকরিও করছো। তাহলে আবার দেরী করবে কিসের জন্য।
- বিয়ে করার ইচ্ছে এখন নেই৷ যখন ছিলো তখন তো দিলে না, এখন আদর দেখাতে আসছো? আমার সন্দেহ হচ্ছে কিছু না কিছু গোলমাল নিশ্চয় আছে৷ আসল ঘটনাটা বলো তো। তারপর ভাববো,
তখন মা বলে- একটা বাড়ি থেকে সমন্ধ এসেছে তোমার জন্য। খুব ভদ্র পরিবার,আর মেয়েটাও খুব নম্র ভদ্র। এমন মেয়ে সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
- তুমি কি করে বুঝলে মেয়েটা নম্র-ভদ্র?
- মেয়েটা রোজ আসে, আমার সাথে গল্প করে যায়?
- এখানে আসে মানে? তোমার কোনো আত্মীয়-স্বজনদের কেউ না তো?
- আরে না। তুমি যখন থাকো না তখন আসে। রান্নাবান্নার কাজে সাহায্য করে, গল্প করে আবার চলে যায়।
- মেয়েটা কে?
- মেয়েটা ডাক নাম আঁখি।
- থাকে কোথায়?
- এই তো কলোনিতে।
- একবার মেয়েটাকে দেখায়ও তো।
- দাড়াও মোবাইলে ছবি আছে নিয়ে আসছি।
মোবাইল এনে ছবি দেখালে, চিনতে একটু কষ্ট হলেও বুঝতে পারলাম এটা জান্নাতুন৷ পানি গড়তে গড়তে যে এতো দূর গড়ে যাবে ভাবতে পারি নাই। তাই মাকে বললাম- ওর ফোন নাম্বারটা দাও তো কথা বলতে হবে৷
- পছন্দ হয়েছে তাহলে৷ এখন তাদের জানিয়ে দিই এটা।
- না,এখন না। আর ওর নাম তো জান্নাতুন৷ তোমাদের মিথ্যে কেনো বললো?
- আমি জানি ওর ভালো নাম জান্নাতুন৷ ডাক নাম আঁখি।
- ওহ, নাম্বারটা দাও তো৷ মেয়েটাকে শিক্ষা দিতে হবে।
- কী করবে?
- কিছু না৷
- একটা জিনিস মনে রেখো, মেয়েটাকে আমাদের সবার ভালো লেগেছে, এতো ভালো মেয়ে আগে দেখিনি। তোমার জন্য যদি সে কাঁদে বা মন খারাপ করে তাহলে তোমার খবর আছে।
- আচ্ছা, কাঁদাবো না৷ কিছু কথা বলবো, তারপর তোমাদের মতামত জানিয়ে দিবো নে৷
মা নাম্বার দিলে রাতে ফোন করলাম। ফোন রিসিভ করে মিষ্টি কন্ঠে সালাম দিয়ে বলে- কেমন আছেন?
সালামের জবাব দিয়ে বললাম- ভালো আর থাকতে দিচ্ছো কোথায়?
- কেনো, আমি কি করলাম?
- কি করলে জানো না?
- কীসের কথা বলছেন?
- তুমি নাকি আমাকে বিয়ে করতে চাও, সমন্ধ নাকি পাঠিয়েছো?
- হ্যাঁ।
- কেনো?
- আপনাকে আমার ভীষণ পছন্দ। তাই আপনি অন্যকারো হওয়ার আগে আপনাকে আমার করে নিতে চাই। কেনো আপনি রাজি না?
- পাগলামি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
- কেনো, কী পাগলামি করলাম?
- আমার সাথে এ যাবৎ দু বার সামনা-সামনি কথা বলেছো৷ যা জেনেছো সব অন্যের মুখে। এতেই আমার উপর এত ভরসা পেয়ে গেলে। বেশি তাড়াহুড়া করে ফেললে না?
- আচ্ছা, আপনি একবার ভাবুন তো, আপনার জন্য মেয়ে দেখা হলে একজনকে তো পছন্দ করবেন৷ তার সম্পর্কে আপনি বিয়ের আগে কিছুই জানতে পারবেন না, আর মেয়েটাও কিছু জানতে পারবে না। তবুও বিয়ে হবে, এটাকে তাহলে তো তাড়াহুড়া বলতে পারেন না, তাই না?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম- প্লানিং ভালোই সাজাতে পারো দেখছি। তোমাকে যতটা সহজ-সরল ভেবেছিলাম ততটা না৷
- কেমন?
- বুদ্ধিমান সাথে চালাক৷
- তাই? আপনার এমন কেনো মনে হচ্ছে?
- কারণটা খুব সোজা৷ তুমি আমার কাছে কোনো সাড়া না পেয়ে সোজা দূর্বল জায়গায় আঘাত করেছো, মানে আমার পরিবারকে নিজের বশে করে নিয়েছো। তা তোমার বাবা-মা রাজি হলেন কি করে?
- রাজি করিয়েছি অনেক কষ্টে।
- তার মানে তাদের কোনো ইচ্ছেই নেই এ বিয়ে দিতে?
- না তা হবে কেনো? বাবা-মা মনে করেছিলো আমি প্রেম করে বিয়ে করতে চাচ্ছি তাই প্রথমে না করে দিয়েছিলো। যখন সবকিছু বুঝিয়ে বললাম তখন আর রাজি না হয়ে থাকতে পারেনি।
- কী বুঝাইছিলে?
- অনেক কিছু।
- কিরকম?
- আপনার সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছিলাম আর যাচাই করতে বলেছিলাম৷ পরে তারা খোঁজ নিয়ে দেখে আসলেই আপনি ভালো ছেলে তখন বিয়েতে রাজি হয়।
- আমার সম্পর্কে সত্যিই খোঁজ-খবর নিয়েছিলো?
- কেনো বলুন তো?
- কারণ আমি জানি আমি কতটা খারাপ। যে, সিগারেট খায়, নেশা করে আড্ডাবাজিতে মেতে থাকে আর অবাধ্যের মতো জীবন-যাপন করে সে অন্তত ভালো হতে পারে না। তোমার আর তোমার পরিবারের খোঁজ নেয়ায় কিছু কমতি আছে। তারপর ভাবো কেমন?
- আমি সবকিছু জেনেই রাজি হয়েছি। আপনার এমন জীবন-যাপনের কারণ নিঃসঙ্গতা। আমি এলে সেটা কেটে যাবে। এখন শাসন-বারণ করার কেউ নেই তাই এমন উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছেন যদিও আপনি মন থেকে খুব ভালো। তবে আমি আসলে এসব বাজে অভ্যাস আর থাকবে না, শাসন-বারণ করার জন্য আমি থাকবো তখন৷
- ফিউচার প্লান ভালোই সাজিয়েছো। তা গেম খেলছো না তো?
- কীসের গেম?
- একদিন তোমাকে অপদস্থ করেছিলাম সেটারই প্রতিশোধ নিতে এসব করছো না তো?
- না, না আপনি বুঝতে ভূল করছেন৷ আর সামান্য বিষয়ে প্রতিশোধ নিতে আপনাকে বিয়ে করতে হবে কেনো? প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিজের বিপদ, পরিবারের বিপদ ডেকে আনবো নাকি৷ এসব কিছুই না। আপনার কথা ভাবতে ভাবতে আসলে আপনার প্রেমে পড়ে গেছি। আর বিশ্বাস করেন এটাই আমার প্রথম কাউকে ভালোবাসা। আমি সবসময় এসব বিষয় এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু আপনাকে দেখার পর আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি বিধায় এতোকিছু করা। ওই যে বলে না, স্যুলমেট। আপনাকে দেখে মনে হয়েছিলো আপনি আমার খুব চেনা যেনো নিজেরই কেউ একজন।
- তোমার কি মনে হয়, আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে?
- চেষ্টা করবো৷
- এটাই শুনতে চেয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, তোমাকেও প্রথম দেখায় পছন্দ হয়েছিলো বিধায় এমনটা করেছিলাম সরি হ্যাঁ?
- না, আমি বুঝতে পেরেছিলাম সরি বলতে হবে না৷
- বিয়ের পর এই সরিই থাকবে বলার মতো। তাই এখন থেকেই প্রাক্টিস করে নিচ্ছি।
মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠলো।
- কন্ঠের সাথে হাসিটাও খুব সুন্দর।
- তাই?
- হুম। রেডি থেকো।
- কেনো?
- কিছুদিন পর, একবারে তোমায় নিয়ে চলে আসবো।
মেয়েটা লজ্জা পেয়ে আর কিছু বললো না।
বিয়ের পর যেমন শুনেছিলাম তারচেয়ে নম্র-ভদ্র মেয়ে বের হলো। খুবই শান্ত শিষ্ট, লাজুক আর মিশুক টাইপের মেয়ে। আদর-যত্ন কোনো কিছুর কমতি রাখেনি এ পযর্ন্ত। বিয়ের কয়েক বছর হয়ে গেলো ভালোবাসা এখনো একটুও কমেনি ভেবে নিজে নিজেই হতবাক হয়ে যাই। সম্পর্কটা একরকম পাগলামি থেকেই রুপ নেয়, সফলও হয়। তবে সবাই খুশিই ছিলো এ সম্পর্ক নিয়ে এখনো আছে। এগুলো ভাবতেই আপনমনে হেসে উঠি। যতবার মনে করি ততবার।
.
- কি এতো মনোযোগ দিয়ে পড়ছো?
আচমকায় কথাটা শুনলেও জান্নাতুন স্থির হয়ে মুখে অমলিন হাসি রেখে বলে- তেমন কিছু না।
- হাসছিলে মানে জোকস পড়ছিলে?
- না। তোমার 'ইচ্ছে ডাইরী'
জোবায়ের সাহেব একটু হেসে বলে- ওটা কয়েক বছর আগে লিখেছিলাম আর কিছুদিন আগে চোখে পড়ায় কিছু লিখেছিলাম৷ কি লিখেছিলাম সেটাও ভূলে গেছি।
- আচ্ছা একটা কথা বলবে,তুমি আসলেই ভূলে যাও,না অভিনয় করো?
- যেটা মনে করো।
- তার মানে অভিনয় করো। কেনো?
- কারণ এতে অনেক অঘটন থেকে বাঁচা যায়।
- তুমি আর পাল্টাবে না৷ ডাইরীর কথা শুনে আবারো আগের মতো কথা বলছো।
- আমি তো আগের মতোই আছি শুধু কিছু পরিবর্তন হয়েছে ব্যস।
- আচ্ছা, ঠিক আছে৷ ফ্রেশ হয়ে নাও, খাবার রেডি করে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভাগ্যিস ডাইরীটা ছিলো বিধায় সহজেই সময়টা কেটে গেলো। আর দেরী করো না৷
জোবায়ের সাহেব ফ্রেশ হতে গেলে, জান্নাতুন এদিকে ডাইরীটাতে হাত বুলিয়ে আপনমনে হেসে উঠে কারণ তাদের মিলনের স্বাক্ষী এখন এই ডাইরীটা।
মানুষ অনেক স্মৃতি সময়ের সাথে ভূলে যায়, ব্যস্ততার কারণে অনেক স্মৃতি ঢাকা পড়ে যায়৷ জান্নাতুন আর জোবায়ের সাহেবের বেলায়ও একই জিনিসই ঘটবে কিন্তু তাদেরকে স্মৃতি রোমন্থন করিয়ে দিতে সাহায্য করবে এই 'ইচ্ছে ডাইরী'টাই।
.
(সমাপ্ত)
.
জে,আর জোবায়ের রহমান
Comments (0)