Search

অনুগল্পঃ হ্যাপি এনিভার্সারি

  • Share this:

রুপা ঠিক করেছে সে বাপের বাড়ি চলে যাবে। অভির আজকের ব্যাপারটা খুব বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। যে ছেলের এনিভার্সারির কথা মনে থাকে না তার সাথে আর যাই হোক সংসার করা সম্ভব না। গল্প উপন্যাসে এরকম উদাসীন স্বামীর দেখা মেলে। এখন দেখা যাচ্ছে রিয়্যাল লাইফেও এরকম গাধা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবা যায়!

.

এখন বাজে সন্ধ্যা ছয়টা। ঘড়িতে টাইম দেখলে অভির প্রতি রাগটা আরও বাড়ে। কালকে থেকে রুপা অভিকে কত হাজারবার বোঝাতে চেষ্টা করেছে আজকে একটা বিশেষ দিন। অভি মনেই করতে পারে নাই। গাধা দেখতে হলে চিড়িয়াখানায় যেতে হবে না। তাদের বাসায়েই আছে।

.

রুপার ব্যাগ পত্র গোছানো শেষ। একটু পরেই বেড়িয়ে পড়বে সে। অভিকে ফোন দিয়ে টাটা বাই বাই টাইপ দু চারটা কথা বলবে। অভি মনে মনে অনেক কষ্ট পাবে। কষ্ট পেলে পাক। যত কষ্ট তত মজা। এরকম গাধা টাইপের মানুষের কষ্টই পাওয়া উচিৎ। দুই বছর হল বিয়ে হয়েছে, তবুও যদি মনে না থাকে তাকে আর কি করা যায়!

.

রুপা হুট করে চলেও যেতে পারছে না। বাসায় খাবার কিছু নেই। যা রান্না করেছিল রাগে সব নিজে খেয়ে ফেলেছে। অভি অফিস থেকে এসে কি খাবে? ওর তো অনেক ক্ষুধা পায় অফিস থেকে ফিরেই। না! এতটা নির্দয় হওয়া উচিৎ না। রুপা ডাল ভাত রান্না করল। গাধার জন্য এর বেশি কষ্ট করা উচিৎ না। গাধার শাস্তি।

.

এখন বাজে আটটা। আরে কি আজব। এখনো অভি ফেরে না। রুপা বাসায় যাবে যাবে করেও যাচ্ছে না। গাধাটা ভাত একায় নিয়ে খেতে পারে না। তার জন্য সবকিছু রেডি করে রাখতে হয়। ঠাণ্ডা হলেও খেতে পারে না। নিজে যে একটু গরম করে খাবে সেটাও করবে না। দেখা যাবে গরম করার ভয়ে না খেয়েই আছে সারারাত। এভাবে বাসায় চলে যাওয়া ঠিক হবে না। রান্নাগুলোও নষ্ট হবে। রুপা নিজেকে বুঝাল,অভির জন্য না। ভাত যেন নষ্ট না হয় সেজন্য সে বাপের বাড়ি যাচ্ছে না। কালকে বুয়া আসলেই চলে যাবে সে।

.

-অভি! কোথায় তুমি?

-আছি। কোথাও একটা আছি।

-ভণিতা করবা না একদম। বাসায় ফিরবা কখন?

-এইতো আসছি। আর দুই কদম।

-আশ্চর্য। রাত কটা বাজে দেখেছ? আজকে যত পার দেরী করে ফের। কাল থেকে আমি আর থাকছি না।

-কেন কেন? যাচ্ছ কোথায়?

-বাবার বাসায় যাব

-সাময়িক নাকি দীর্ঘস্থায়ী?

-দীর্ঘস্থায়ী!

-ব্যাপার তাহলে গুরুতর। আচ্ছা গেট খোল। সামনাসামনি বসে আলাপ করি।

.

রুপা অবাক হয়ে শুনতে পেল কলিংবেল বাজছে। সে দরজা খুলে দেখল অভি পাঁচটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এদেরকে ফুটপাত থেকে এনেছে অভি । সবার গায়ে সুন্দর সুন্দর জামাকাপড়। অভি বলল, 'এতক্ষণ লাগে খুলতে! কখন থেকে প্রসাবের চাপ দিছে। ওই তোরা সবাই চুপ করে আছিস কেন? কি শিখাইছিলাম বলতে!'

.

সবাই যে যার মত করে 'হ্যাপি এনিভার্সারি' বলে উঠল। শুনে রুপা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না। অভি দেখল রুপার চোখ ছল ছল। এইরকম সিচুয়েশনে রুপার সামনে থাকা যাবে না। সে দৌঁড়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।

.

বাথরুম থেকে বের হয়ে অভি দেখল রুপা বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আরে রুপাও দেখি বাচ্চা হয়ে গেছে। আজকে রুপাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আজকে না। রোজই সুন্দর লাগে। সেভাবে খেয়াল করা হয় না। এত সৌন্দর্য একবারে সহ্য করতে পারে না অভি। তার থেকে ভাল রোজ রোজ একটু একটু করে সৌন্দর্য উপভোগ করা।

.

অভি গলা কেশে বলল, 'এই জন্যই দেরী হয়েছিল ম্যাডাম। এদের বাপ মাকে রাজি করাতে হয়েছে। তাহাদের জামা কাপড় কিনিয়া দিতে হইছে। কত ঝামেলা!'

রুপা অভির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। অভিওও মুচকি হাসল। এই হাসির মাঝেই বুকের গভীরে লুকিয়ে রাখা এক রাশ কষ্ট খুব কৌশলে গোপন করে ফেলল দুজন। তারা দুজনই জানে তারা কোনদিন বাবা মা হতে পারবে না। তবুও ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি দিয়েই দুজন দুজনকে সাহস দিয়ে যায় রোজ রোজ, আছি তো একসাথে।

.

 

রাসেল_আহমেদ

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।