Search

অনুগল্পঃ মায়া

  • Share this:

বিড়ালদের অসহ্য বিরক্তি আর সহ্য হচ্ছে না জাকির সাহেবের। এই বুড়ো বয়সে সারাটা দিন মিউ মিউ করে জ্বালাচ্ছে। তার উপর ঘর বাড়ির অবস্থা রাখে না। আজীবন শুনে এসেছেন বিড়াল প্রকাশ্যে পায়খানা করে না। এই কাজটি করে তারা নাকি মাটি চাপা দিয়ে দেয়। কিন্তু এখন দেখছেন সব উলটো। বিড়াল পায়খানা করছে সোফায়, বিছানায়। গিন্নির কাছে রোজ গালি খেতে হয় এনিয়ে। কারণ গিন্নির রোজকার আদেশ বিড়ালগুলোকে কোথাও ফেলে আসার। যেটা আজকাল করে আর করে উঠতে পারছেন না।

আজ আর উপায় নেই। গিন্নি কাজের মহিলার সাথে মিলে সব কটা বিড়ালকে বস্তাবন্দি করেছে। দূরে কোথাও নিয়ে গিয়ে ফেলে আসতেই হবে। আজ আবার খুব গরম পড়েছে। আষাঢ় মাসের ভ্যাঁপসা গরম। রোজ দুপুরে ভাতঘুমের অভ্যেস আছে জাকির সাহেবের। আজ আর ঘুমানো হবে না। বিড়ালগুলোকে কোথাও ফেলে আসতে হবে। নাহলে গিন্নির থেকে রেহাই নেই।

একটা হুড রিক্সা নিলেন। বস্তা ভর্তি বেড়াল নিলেন সঙ্গে। গিন্নির নির্দেশ একটু দূরে গিয়ে ফেলে আসতে। আর অলিগলি ঘুরে যেতে। যেন বিড়ালগুলো কনফিউসড হয়ে ফিরে আসতে না পারে। জন্তু জানোয়ারদের নাকি অলৌকিক শক্তি থাকে। দূরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে আসলেও রাস্তা চিনে ঠিক পৌছে যায় বাড়ি। গিন্নি আরো বলেছে, বস্তাটা ফেলার সময় অবশ্যই যেন বস্তার মুখ খুলে দেয়। নাহলে বস্তায় বন্দি থেকে মরে যাবে বিড়ালগুলো। বিড়ালকে বেঁধে রেখে খেতে না দিয়ে মেরে ফেলা মহিলার জাহান্নামী হওয়ার গল্প শুনেছেন অনেক জালসায়।

জাকির সাহেব রিক্সায় বসে অলিগলি ঘুরে যেতে লাগলেন। শিব্রাম চক্রবর্তীর একটা গল্প মনে পড়ে গেল উনার। সেই গল্পের নায়ক অলিগলি ঘুরে বিড়াল ফেলতে গিয়ে শেষে নিজেই বাড়ির রাস্তা ফুলে যায়। তারপর বিড়ালের পেছন পেছন বেচারাকে বাড়ি ফিরতে হয়। গল্পটা মনে করে আপন মনেই হেসে উঠলেন।

দুপুরের ভ্যাপসা গরম আর মাথার উপর রেগে থাকা সুর্যের তাপ সহ্য করে এই গলি অই গলি হয়ে একটা মাঠে আসলেন জাকির সাহেব। দেরি না করে মাঠের কোনে একটা গাছের নিচে বস্তার মুখ খুলে রেখে দিলেন। তারপর রিক্সাওয়ালাকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি চল। আর এখানে দাঁড়ানো যাবে না। বিড়ালগুলো দেখলে আবার আমাদের পিছু নেবে’।

রিক্সাওয়ালা প্যাডেলে জোর দিয়ে একটু একটু করে এগিয়ে চললেন। জাকির সাহেব রিক্সার হুডের কাপড় সরিয়ে দেখলেন বিড়ালগুলো একটা একটা করে বস্তা থেকে বের হচ্ছে । বের হয়ে এদিক ওদিক দেখছে। মায়াও লাগছে। কিন্তু কী আর করার! বিড়ালের এত জ্বালা তো সহ্য করা যাচ্ছে না।

একটু দূরে যেতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হল। বর্ষাকালের এই এক সমস্যা। কখন বৃষ্টি শুরু হবে বলা যায় না। এত বৃষ্টি হচ্ছে যে হুড রিক্সাতেও ভিজে জুবুথুবু হয়ে গেলেন জাকির সাহেব। উনার মনে পড়লো বিড়ালগুলোর কথা। মনটা আনচান করতে লাগলো। বস্তা থেকে সবাই বের হতে পেরেছে কিনা, এখনও ওখানেই আছে নাকি কারো বাড়িতে ঢুকেছে, নাকি অপেক্ষা করছে তার। এসব চিন্তায় মনটা অস্থির হয়ে উঠলো।

শেষে আর থাকতে না পেরে রিক্সাওয়ালাকে বললেন, ‘আরেকবার চলো সেই মাঠে’।

ওখানে গিয়ে দেখলেন বস্তাটা আছে। কিন্তু একটাও বিড়াল নেই। আসেপাশে একটু খোঁজাখুঁজি করলেন। কয়েকটা ঝোপঝাড়েও দেখলেন। কিন্তু কোথাও পেলেন না। মনটা খারাপ হয়ে গেল।

বৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিন বৃষ্টি ভালো লাগে জাকির সাহেবের। কিন্তু আজকের বৃষ্টি যেন মনখারাপী বৃষ্টি। বাড়ি পৌছে গেলেন। মন খুব খারাপ। বিড়ালগুলোর কথা মনে পড়ছে। যত বদমাশি করে জ্বালাতো, বাড়িতে থাকতো তো ভালোই লাগতো। ওদের বদমাসি দেখেই বেলা কেটে যেত। বুড়ো বয়সে এমনিতেই তেমন কাজ নেই, আর সময়ও কাটে না। বিড়ালরাই মাতিয়ে রাখতো সারাটা দিন।

মন খারাপ নিয়েই ঘরে ঢুকলেন জাকির সাহেব। আর ঘরে ঢুকেই দেখলেন মিউ মিউ করে বেড়ালগুলো খেলছে। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। হতবম্ভ হয়ে দেখেই থাকলেন। হেঁশেল থেকে গিন্নির আওয়াজ কানে আসলো, ‘মিনসে কোন কাজের নয়। সামান্য একটা কাজও করতে পারলো না’। জাকির বাবু হাসতে লাগলেন। আজ গিন্নির বকা শুনতেও খুব ভালো লাগছে উনার।

 

সেখ ফরিদ আলম

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।