আমার বিয়ের বয়স প্রায় বছর খানেকের মতো হতে চলল।
কিন্তু এই এক বছরেই আমার বর মশাইয়ের উপর আমি চরম আকারে বিরক্ত।
কারণ তিনি প্রচুর পরিমাণে বই পড়ে। আর তার বই পড়ার তিব্রতা এত বেশি যে সে মাঝে মাঝে ভুলেই যায় তার একটা বউ আছে।
বিয়ের পর সবাই কত জায়গায় ঘুরতে যায়, আর আমি বরের সাথে যতবার ঘুরতে গিয়েছি সে আমায় হয়ত বই মেলায়,না হলে বইয়ের দোকানে নিয়ে গেছে।
ঘুম থেকে উঠে বই,অফিস থেকে এসে বই, ঘুমাতে গেলে বই সারা বাড়ি ভর্তি বই।মাঝে মাঝে মনে হয় বাড়িতে না কোনো লাইব্রেরিতে আছি।
সেদিন নীল সাদা মিশেলে শাড়ি পড়েছিলাম,দেখা তো দূর বর পড়ার চোটে খেয়াল ই করেনি,আমিও বলি নি।
তাই রাগে তরকারিতে বেশি করে লবণ মরিচ দিয়ে রান্না করেছি।কিন্তু বর থ্রিলার উপন্যাস পড়তে পড়তে খেয়ে উঠে চলে গেল টের পর্যন্ত পেল না।
নাহ আর সহ্য করা যাচ্ছে না,
কোন কিছু না বলেই টেবিলের উপর ছোট একটা চিঠি লিখে বাবার বাড়ি চলে আসলাম।
এই লোকের সাথে আর থাকব না,সে থাকুক তার বই নিয়ে।
বাবার বাড়িতে এসেছি পুরো একরাত একদিন হয়েছে।বিকালে ছাঁদে বসে আছি,আর রাগে নিজের চুল নিজে ছিঁড়ছি লোকটা আমার কোনো খোঁজ খবর পর্যন্ত নিলো না।আমিও নিবো না।
কিন্তু হঠাৎ চেনা কণ্ঠস্বরে আমার ধ্যান ভাঙলো।পিছনে ফিরে দেখি আমার বর মহাশয় দাঁড়িয়ে আছেন।চুল গুলো উসকোখুসকো, চোখদুটো টকটকে লাল।দেখে মনে হচ্ছে ছোট খাটো একটা ঝড় গিয়েছে।
আচমকাই সে বলে উঠল, বাড়ি চলো
তার মুখ টা দেখে খারাপ লাগলেও প্রকাশ করলাম না,মনে মনে ভাবলাম কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দেব।
কিন্তু এবারেও আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই,নিজেই বলতে শুরু করল
-------- ছোট বেলা থেকেই আমার তেমন কোনো বন্ধু ছিল না, তাই অবসর সময় টা বই পড়েই কাটাতাম, এরপর থেকে বইয়ের প্রতি নেশা চলে আসল।প্রচুর বই পড়তাম,
তবে এটা বলা ঠিক না আমি তোমায় খেয়াল করি না,
সেদিন যে তুমি নীল শাড়ি পড়েছিলে আমি ঠিক ই দেখছিলাম।তোমায় হিমুর রুপার মতো লাগছিল।ইচ্ছে করছিল,একটা বেলি ফুলের মালা খোঁপায় জড়িয়ে দিই।তুমি যদি রাগ করো তাই দিই নি।
তারপর তরকারিতে ঝাল লবণ বেশি হয়েছিল, এটাও বুঝেছিলাম। রান্নায় ভুল ধরলে যদি রাগ করো তাই বলিনি।
কিন্তু কাল আমি বাইরে যাবার পর যখন রাগ করে এ বাড়িতে চলে আসলে তারপর থেকে আজকে পর্যন্ত আমি একটা বইয়ের অক্ষর ও পড়িনি। তুমি যদি চাও আমি আর বই পড়ব না তাও বাসায় চলো। তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না।
পরশিষ্টঃ
আমি সেদিন বিকালেই তার সাথে বাড়ি ফিরে এসেছি তবে দুটি শর্তে
১. এরপর আমি যতবার নীল শাড়ি পড়ব ততবারই আমায় বেলী ফুলের মালা এনে দিতে হবে।
২. আর কোনো থ্রিলার উপন্যাস পড়া যাবেনা,রোম্যান্টিক প্রেমের উপন্যাস পড়তে হবে এবং জোরে পড়তে হবে যেন আমি শুনতে পাই।
# রোম্যান্টিক প্রেমের উপন্যাস
Ononna Fariya
Comments (0)