Search

অশরীরী

  • Share this:

-রমু, এই রমু দরজাটা খুলো, আমি এসেছি।

কারো ডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেলো মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখলাম রাত ১১:৩০টা। উফফ,মনে পড়লো বাবুর আব্বু আসার সময় হয়েছে। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম, দরজা খুলতেই দেখলাম বাবুর আব্বু মানে তৌকির আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম,

-আজ এত রাত হলো বাড়ি ফিরতে?

-তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছি তাই একটু দেরি হয়েছে। এখন এসো আমার সঙ্গে সারপ্রাইজ দেখবে না তোমার?

-কিন্তু, বাবু তো ঘুমাচ্ছে ওকে কিভাবে একলা রেখে যাই!

-কিছু হবে না, দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দাও। আমরা যাবো আর আসবো।

-তা না হয় দিলাম, তুমি ফ্রেশ হবে না?

-না লাগবে না, চলো তুমি।

কি আর করার দরজা বাইরে থেকে লক করে চললাম হাসানের পিছু পিছু। আমাদের এরিয়া খানিকটা গ্রামের মতো তবে শহরের ছোঁয়ায় ভরপুর।

আজ যেন আকাশে জোছনার মেলা বসেছে। পুরো আকাশ পরিষ্কার কালো মেঘের দেখা নেই। মাঝে কিছু সাদা মেঘ শিমুল তুলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। কিছু তারা মিটিমিটি জ্বলছে।অনেকক্ষণ হাঁটার পরও যখন গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারলাম না তখন তৌকিরকে বললাম,

- আর কতক্ষণ লাগবে পৌঁছাতে?বাবু কিন্তু, ঘুম থেকে জেগে গেলে প্রচুর কাঁদবে।

-এই তো আমরা চলে এসেছি সামনে তাকিয়ে দেখো।

সামনে তাকাতেই দেখতে পেলাম একটি মাঝারী নদী যা আমাদের এলাকা ঘেঁষে মেঘনার মোহনায় গিয়ে মিশে গেছে।

কি যে চমৎকার লাগছিলো বলে বুঝাতে পারবো না! রাতের আকাশ, চারদিকে জোছনার আলো ঠিকরে পড়ছে,সেই জোছনার আলো যেন নদীর পানিতে মিশে এক অনন্য সৃষ্টি তৈরি করেছে।নদীর পানিগুলো ডায়মন্ডের মতো চকচক করছে।

তৌকির আমাকে ডাক দিতেই আকাশ-নদী মিলে যেই চমৎকার দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে তা দেখা হতে বিরতি নিলাম।

আমি এগিয়ে তৌকিরের সামনে দাঁড়ালাম। তৌকির তার পাশে আমাকে বসতে ইশারা করলো। আমিও বসে পড়লাম। সে হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি তাকিয়ে আছি সামনে নদীর দিকে। চারপাশে বাতাসের কি শোঁ শোঁ আওয়াজ!

- তোমাকে শাড়ী অবস্থায় কিন্তু বেশ চমৎকার লাগে। তোমার সাথে সময় কাটাতে পারি না তাই একটু সময় বের করে চলে আসলাম এখানে। আমার সারপ্রাইজ তোমার ভালো লেগেছে তো?

-হুম, অনেক ভালো লেগেছে। আজ বহুদিন পর একটু বিশুদ্ধ পরিবেশের সানিধ্যে পেলাম।

চলো তৌকির বাড়িতে ফিরে যাই নয়তো বাবু ঘুম থেকে জেগে উঠবে।

-আহ এমন তাড়াহুড়ো করছো কেন?

বলেই আমার খুব ঘনিষ্ঠে এসে পড়লো তৌকির। আমার ঘাড়ের চুল সড়িয়ে মুখ ডুবানোর আগেই। কে যেন বলে উঠলো?

-এই মাইয়া এত রাইতে এই নদীর সামনে কি করো? পাগল টাগল নি!

-না চাচা আমি একা আসিনি আমার স্বামীর সঙ্গে এসেছি এই যে ও আমার স্বামী তৌকির।

ওমা তৌকির গেলো কোথায়? এইখানে তো ছিলো।এরইমাঝে মোবাইলে কল এলো, তৌকির কল করেছে, ও আবার কোথায় গেলো যে ওর আমাকে কল দেয়ার প্রয়োজন হলো!

-হ্যালো, হ্যা তৌকির বলো, কোথায় তুমি? আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য তাড়াতাড়ি এসো।

-তুমি জানো না আমি কোথায়!আমার আজ অফিস থেকে ফিরতে লেইট হবে। খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ো।

-কিন্তু, তুমি না একটু আগে বাড়িতে ফিরলে না মানে?

-কি সব বলো রমু আমি এখনও একটু পানি খাওয়ার ফুরসত পেলাম না আর তুমি বাড়িতে যাওয়ার কথা বলছো।রাখছি এখন ঘুমিয়ে পড়ো।আমি বাড়িতে ফিরলে কল করবো তোমায় এরপর দরজা খুলে দিও।

এরইমাঝে চাচার কথা শুনতে পেলাম উনি বলছেন,

-কো তোমার স্বামী? মিছা কতা কউনের জায়গা পাও না বাইত যাও তরতরি এই জায়গা ভালো না।

আমি ভাবতে লাগলাম,

তাহলে, কে সে? যে আমাকে বাড়ি থেকে এখান পর্যন্ত নিয়ে এলো? অশরীরী কিছু নয়তো!

#সমাপ্ত

Tahmina Akther

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।