“লাট সাহেব, উঠে বাজারে যান। ঘরে কিচ্ছুটি নেই”, মিলির চিৎকারে শামীম ধড়মড়িয়ে উঠে বিছানা থেকে।
“এই বৃষ্টির মধ্যে কি করে বাজারে যাবো?”
“বাজারে না গেলে খাবে কি? বন্ধের দিনে হরেক আইটেম না হলে তো আপনার আবার চলবেনা”
“২টো খিচুড়ি করে দাওনা? বৃষ্টি তো খিচুড়ি খাওয়ার সময় ”
“খিচুড়ি করতেও তো ডাল লাগবে, নুন লাগবে। বাসায় কিচ্ছু নেই”
“কিচ্ছু নেই?”
মিলি জবাব না দিয়ে মুখ ঝামটা মেরে চলে যায়।
ভোর থেকেই কুকুর বেড়াল বৃষ্টি হচ্ছে। বিয়ের আগে কত রোমান্টিক কথা হতো বৃষ্টি নিয়ে। আর এখন বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েই খালাস। নিজের ওপর এ বড় অবিচার বলে মনে হয় শামীমের।
রান্নাঘর থেকে হাড়ি পাতিলের ঠোকাঠুকির ঝমঝম শব্দ আসছে। শামীম বুঝতে পারে মিলির মেজাজ খারাপ। মেজাজ খারাপ হলে সে হাড়িপাতিল পিটিয়ে নিজের মেজাজের জানান দেয়। বাইরের বৃষ্টি হওয়া বা বাজার শেষ হয়ে যাওয়াটা তো শামীমের দোষ না। কাল অফিস থেকে আসার সময় বলে দিলেই ও বাজার করে আনতো।
“কি হয়েছে! হাড়িপাতিল পেটাচ্ছ কেন?”
“পেটাচ্ছি কোথায়? ধুচ্ছি, দেখতে পাচ্ছনা?”
“তুমি ধুচ্ছ কেন? মতির মা আসে নাই?”
“সে তো আরেক নবাব। আকাশ থেকে এক ফোটা পানি পড়লেই কামাই দিবে। কপাল আমার। ইউনিভার্সিটি গ্রেজুয়েট হয়ে আমার হাঁড়িকুড়ি মাজা লাগছে তোমার সংসারের”
“সংসারটা আমার একার? হাঁড়িকুড়ি মাজবেনা তো কি করবে?”
“কেন আমি চাকরি খুঁজলে চাকরি পাবোনা ভেবেছো? তোমার চাইতে ভালো চাকরি পাবো। পাও তো মাসের শেষে ২টা ফুটো পয়সা!”
শামীমের খুব আত্মসম্মানে লাগে ওর বেতন নিয়ে খোটা দিলে। কিছু কড়া কথা বলতে যাচ্ছিলো এমন সময় পাশের রুম থেকে খোকা আকাশ ফাটিয়ে কেঁদে উঠলো
“বাচ্চাটাকেও একটু দেখতে পারেনা। সব আমাকেই করা লাগবে।”, দ্রুত হাত ধুয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে মিলি চেঁচায়।
শামীম মিলির পেছন পেছন যায়। বাবু খেলার চলে খাট থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছে।
“একটু সাবধানে রাখতে পারোনা?”
“বাবুকে দেখলে রান্নাঘর কে সামলাবে? নিজে তো নাক ডেকে ঘুমিয়ে উঠলে ১০টা পর্যন্ত! যাও এখান থেকে। তোমাকে সহ্য হচ্ছেনা”
“তা হবে কেন ? আমি তো আর আকাশের মতো কোটি কোটি টাকা কামাই না।”
আকাশ মিলির বিশ্ববিদ্দ্যালয়ের বন্ধু। ওকে নিয়ে খোঁচা মিলির একদমই সহ্য হয় না।
“কি বললে তুমি?”
“ঠিকই তো বললাম। ওর কোটি কোটি টাকা। ওই তো তোমাকে মোটা টাকার চাকরির লোভ দেখিয়েছিল। আমি তো কিছু বুঝিনা কি কারণে তোমাকে চাকরি দিতে চায়? আমি বাবুর মতো দুধ খাইনা”
“তোমার সাহস তো কম না! তুমি একটা ইতর। তোমার সাথে থাকা সম্ভব না।”, মিলি বাবুকে রেখে তার ব্যাগ গোছানো শুরু করে।
“কোথায় যাচ্ছ?”
“জাহান্নামে।”
“এই বৃষ্টির মধ্যে যাবে? বাবুর নিউমোনিয়া লাগবে! আসবে কবে?”
“আসবোনা। তোমার মতো নপুংসকের সাথে থাকবোনা। ছোটোলোক কোথাকার।”
বাবুকে রাজু কোলে নিয়ে মিলির কর্মকান্ড দেখছিলো। যাওয়ার আগে মিলি রাজুর কোল থেকে বাবুকে ছো মেরে নিয়ে গেলো। আর দরজাটা এতো জোরে লাগলো যে পাশের ফ্ল্যাটের মানুষ দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলো ব্যাপারটা কি।
ততক্ষনে বৃষ্টি থেমে রোদ উঠেছে। শামীম বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লো উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরির জন্যে। দুপুরে ভাবলো একটা সিনেমা দেখলে সময়টা ভালো কেটে যাবে। বসুন্ধরা শপিং মলে গিয়ে খাবার নিয়ে খেতে বসেছে এমন সময় অফিসের জুনিয়র রুনুর আবির্ভাব।
“শামীম ভাই একা একা কি করছেন এখানে?”
“বৌ বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে রাগ করে।”
“আহারে। সিনেমা দেখতে এসেছেন নাকি?”
“হা। নতুন যে মার্ভেল মুভিটা বেরিয়েছে সেটা দেখবো।”
“চলুন একসাথে দেখি। আপনার কাছে অনেক ট্রিট পাওনা আমার”, আল্লাদি রুনু বলে
সকালের ঝগড়ার কথা মনে পরে গেলো শামীমের। রুনুর সাথে মুভি দেখেছে জানলে মিলি প্রচন্ড রাগ করবে। কিন্তু রুনুর সাথে মুভি দেখার লোভটাও সারাদিনের শ্রান্তির পর প্রচন্ড লোভনীয় লাগে শামীমের কাছে। তাছাড়া মিলি তো জানতে পারছেনা। অন্য সময় হলে শামীম রাজি হতো না কিন্তু আজ সকালের ঘটনার কারণেই শামীম রাজি হয়ে গেলো। শামীমকে মিলি নপুংসক বলেছে। সেটার শোধ তোলাটা নিজের আত্মসম্মানের জন্যে আবশ্যক।
সিনেমার হল ঘুটঘুটে অন্ধকার। রুনু হাতাকাটা ব্লাউস পরে এসেছে। পাশাপাশি বসে রুনুর হাতের সাথে শামীমের হাত লেগে যাচ্ছিলো। রুনু কোনো নিষেধ করছেনা। বরং নিজেও নড়েচড়ে শামীমকে উৎসাহ দিচ্ছে বলে শামীমের মনে হলো। রুনুর গায়ের গন্ধেও যেন একটা মাদকতা অনুভব করে শামীম। ওর মন চাইছিলো রুনুর গায়ে হাত জড়িয়ে বসতে। ওকে চুমু খেতে।
কিন্তু হঠাৎ মিলির মুখটা শামীমের সামনে যেন সিনেমার পর্দায় ভেসে উঠলো। শামীম বুঝতে পারলো ওকে এখন থেকে যেভাবেই হোক চলে যেতে হবে। শামীম ওর ফোন বের করে উত্তেজিত ভাবে কথা বলার ভান করে খানিকক্ষণ।
“রুনু একটা ইমার্জেন্সি কল এসেছে। তুমি মুভিটা শেষ কর। আমি গেলাম।”, রুনুকে হতভম্ব অবস্থায় রেখে শামীম হল থেকে বেরিয়ে আসে।
বাসায় ফিরে দরজার লকে চাবি ঘুরাতে গিয়ে শামীম খেয়াল করে দরজার লক খোলা। শামীমদের বাসার দরজা খুললেই ডাইনিং রুম। দরজা খুলেই শামীম অবাক হয়ে যায়। মিলি খাবার টেবিলে অনেক পদের খাবার সাজিয়ে বসে আছে। মিলি সাজগোজ করে খাবার নিয়ে শামীমের জন্যে অপেক্ষা করছে।
মিলিকে শামীমের কাছে পরীর মতো সুন্দর লাগে। এতো ভালো আগে কখনো লাগেনি শামীমের। মিলির চোখে জল ছলছল করছে। ছলছল চোখেই মিলিকে প্রচন্ড মায়াবী লাগে।
আরেফিন
Comments (0)