Search

ছোটগল্পঃ আড়ালে ভালোবাসা

  • Share this:

আজকে আমার আর নাবিলার বিচার কার্য সম্পাদন করা হবে। আমাদের দোষ হলো আমাদের প্রেম ভালোবাসা।

উঠোনে একটু দূরে দূরে দুটি চেয়ারে বাসানো হয়েছে আমাকে আর নাবিলাকে, আর আমাদের চারপাশে ঘিরে বসে আছে আমার আর নাবিলার পরিবারের সম্মানিত সদস্যগণ।

নাবিলার খালু নাবিলাকে বললো,– তাইলে ঘটনা কি সত্যি নাবিলা?

নাবিলা একবার সবার দিকে তাকিয়ে, এবং আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে মিনমিন করে বললো,– মুই কি কমু!

নাবিলার মামা রেগে বললো,– মুই কি কমু মানে, তুমিই তো বললা ঐ ছেলে তোমার সর্বনাশ করছে। তা কি সর্বনাশ করছে?

নাবিলা আবার মিনমিন করে বললো,– সে আমাকে আইলাভিউ বলসে।

উপস্থিত সবার ঠোঁটে হাসি উঁকি দিয়ে আবার প্রস্থান। আমি তো অবাক! ভর সমাজে নাবিলা আমার প্রেস্টিজের ভুনা করে বিতরণ করবে নাকি!

এবার আমার মামা কড়া মেজাজে বললো,– ঘটনা কি সত্যি?

আমিও সবার ওপর নজর বুলিয়ে মাথা নিচু করে বললাম,– মুই কি কমু!

মামা ঝাড়ি মেরে বললো,– মুই কি কমু মানে! আইলাভিউ বলসো তুমি, জবাব কি হিরো আলম দেবে!

আমি আবার বললাম,– মুই কি কমু!

এবার সবাই এমন ভাবে চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালো যে সেই গরমে আমার সিদ্ধ হবার উপক্রম।

নাবিলার খালু আবার বললো,– নাবিলা আর কোনো অভিযোগ?

নাবিলা আবার মিনমিন করে বললো,– সে মোরে ধোকা দিছে!

এবার আব্বা ধমক দিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো,– ঘটনা কি সত্য?

আমি আম্মার দিকে তাকিয়ে আম্মারে চোখের ইশারায় আমাকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে আব্বার প্রশ্নের জবাবে বললা,– মুই কি কমু!

বড়ো চাচাতো ভাই সদরুল হাল্কার উপ্রে ঝাড়ি মেরে আমাকে বললো,– কানের উপ্রে একটা দেলেই মুই কি কমু ছুইট্টা যাইবেআনে তোমার, তখন তুমিই সব বলবায়ানে মনু।

এই সদরুল আবার নাবিলার চাচাতো বোন তাসমীমের পেছনে ঘুরঘুর করে, সুতরাং নাবিলার সাথে মোর একটা হেস্তনেস্ত হলেই তাসমীম আমার শালিতে রুপান্তরিত হইবে। সেই ভরসায় সদরুলের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,– ভাই হইয়া ভাইয়ের সাথে ভিলেনগিরী, তোরে যদি ছ্যাঁকা না খওয়াই তাইলে মোর নাম আবীর না।

সদরুল আমার মনের ভাষা চোখের ভাষা বুঝতে পেরে সাইলেন্ট মুডে গেলো।

আব্বা সদরুলকে বললো,– সবকিছু মিলিয়ে তোর কি মনে হয় সদরুল?

সদরুল একবার আমার দিকে, একবার নাবিলার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে আব্বার প্রশ্নের জবাবে বললো,– মুই কি কমু! আগে বিষয়ডা ভালো কইররা বোঝতে হইবে কাক্কু।

হঠাৎ করে সদরুলের বাঘের গর্জন বিড়ালে পরিনত হওয়ায় আব্বা অবাক হয়ে আড়চোখে সদরুলের দিকে চেয়ে রইলো।

মামা আবার আমাকে বললো,– নাবিলার অভিযোগ কি সত্যি?

আমি আবার বললাম,– মুই কি কমু।

‘ মুই কি কমু ’ শুনে নাবিলা ক্ষেপে গিয়ে বললো,– মুই কি কমু মানে! আচ্ছা তাইলে মুই বলি, এইযে ডজন ডজন চিঠি দেয়া, আইলাভিউ বলা, ফুল দেয়া, এগুলো কার কাজ, কি জন্য দিছিলেন!

নাবিলা লিস্ট ধরে যেভাবে কি কি দিছি তার হিসেব দিচ্ছে, তাতে আমার পরাণের পানি অলরেডি বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে। আর কিছু বললেই সর্বনাশ। কারণ একদিন নাবিলারে একটা চুম্মা'ও দিছিলাম।

সবাই বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার ইচ্ছে হচ্ছে মাটি চিড়ে ঢুকে যাই।

নাবিলা আবার বললো,– আরও কিছু বলবো?

‘ মুই কি কমু ’ বলতে গিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলাম কারণ এই কথা বের হলেই নাবিলা মোর ইজ্জত নাঙ্গা করে ছাড়বে। বললাম,– না থাউক, আর কিছু বলা লাগবে না।

নাবিলা বললো,– আমি আপনাকে ভালোবাসি জানেন না! আবার বেয়াইন পেয়ে তার পিছনে ঘুরঘুর ফুরফুর কিসের? বেয়াইন নাকি আপনার চোখে দেখা পৃথিবীর স্রেষ্ঠ সুন্দরী, এপর্যন্ত কয়জন সুন্দরী দেখছেন।

সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, যেন আমি জোড়া খুনের আসামি! সবার চোখ যেন আমাকে প্রশ্ন করছে,– এগুলা কি?

আমি মনে মনে সবার প্রশ্নের জবাবে বলছি,– মুই কি কমু।

আসলে বেয়াইনকে ওসব বলার কারণ হলো এগুলো দেখে যেন নাবিলার জ্বলে, ওরে রাগাইতে আমার ভালো লাগে খুব।

কিন্তু নাবিলাকে জ্বালাইতে গিয়ে উল্টো নাবিলা আমার মান ইজ্জত জ্বালিয়ে ছাই করে ভর সমাজে উড়াচ্ছে।

সদরুল এতক্ষণে সবার সামনে আমাকে বললো,– ভাব দেইক্কা তো মনে হয় দুইজন দুইজনকে ম্যালা ভালোবাসো, তোমরা কি একে অপরকে আপন কইররা পাইতে চাও সোনামণিরা?

সদরুলের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

আমি লজ্জায় শেষ, মিনমিন করে বললাম,– মুই কি কমু।

আব্বা হেসে হেসে বললো,– তোমার যা বলার বিয়ের পরে বলবায়ানে, আগামী সপ্তাহে তোগো দুইডার বিয়ে।

এই সিদ্ধান্তে সবাই খুশি। সবাই ধীরে ধীরে চলে গেল। নাবিলা কাছে এসে ভাব নিয়ে বললো,– কি এখন আপনার অনুভূতি কি?

আড় চোখে নাবিলার দিকে তাকিয়ে বললাম,– যা করার বলার তুমিই তো সব বললা, মুই কি কমু!

নাবিলা মিষ্টি হেসে বললো,– তুমি কি কবা তা বিয়ের পরে রিমান্ডে নিয়া বের করমু। আগে হোক আমাদের বিয়ে।

তারপর আমাদের বিবাহ হইলো। সুখী সংসার। এই সংসারে সব চললেও এহন আর “ মুই কি কমু ” কথা চলেনা। ভুলেও যদি ও কথা মুখ থেকে বের হয় তাহলে নাবিলা গাট্টি গোল করে বাবার বাড়ি যাবার ভয় দেখায়।

তবে আমাদের এই মিষ্টি খুনসুটির পেছনে যেটা আছে সেটা হলো দুজনের প্রতি দুজনের সীমাহীন ভালোবাসা। সামনে মিষ্টি ঝগড়াঝাটির আড়ালে কেবলই ভালোবাসা।

সমাপ্ত।

 

আবীর হোসেন।

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।