Search

ছোটগল্পঃ ঘর জামাই

  • Share this:

–‘মাইনষে তোমারে ঘর জামাই কয়,’ বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সুমি। আমি সুমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,– ঘর জামাই বললে দোষের কি, জামাই তো আর বাগানে থাকার জিনিস না, ঘরেই থাকবে, তো ঘর জামাই থাকলে দোষের কি কও? আইজ যদি এই জামাই বাগানে থাকতো, তাইলে দেখতা সবাই বাগান জামাই বলতো, সুতরাং মানুষ বলবেই, এটা তাদের কাজ, ওদের কথায় কান দিয়ে কানের পর্দা লুজ করার কোনো দরকার আছে জান?

হাত দিয়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সুমি বললো,–জীবনে আর কিছু না হোক, পাম দিতে ভালোই পারো।

টান দিয়ে বুকের উপ্রে এনে মুখের উপ্রে একটা চুমু দিয়ে বললাম,– আহা ময়না পাখি, তোমাকে কোনো ভাবেই আমার পাম্প দেবার কোনো বস্তু মনে হয়না, তুমি তো আমার কলিজার টুকরা, যেটা তোমার পাম মনে হয় সেটা প্রকৃতপক্ষে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

: তোমার লজ্জা করেনা?

: লজ্জা কিসের, তুমি যদি আমার জান পাখি হও, তোমার বাড়ি কি আমার বাড়ি না?

‘শয়তান একটা, কথায় কেউ পারবে না তোমার সাথে,’ বলে সুমি চলে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই হাত ধরে আবারও টেনে বুকে নিয়ে আসতেই দূরে দাড়িয়ে নানি বললো,– পিরিত উতলাইয়া পড়তাছে দেখি একেবারে, পাব্লিক প্লেসে ওভার রোমান্টিক সিনের দরকার নাই সোনামনিরা, ঘরে যাও।

সুমি লজ্জা পেয়ে দৌড়ে ঘরে চলে গেলো।

বিয়ের পরে থেকেই শ্বশুরবাড়ি আছি, আসেপাশে প্রতিবেশীরা যদি কখনো ঘর জামাই বলে কটুক্তি করে, আমি হেসে বলি,– আমার শ্বশুরের ঘরে আমি থাকলে তোমার জ্বলে কেন, বেশি জ্বললে তোমার ঘরে গিয়ে উঠবো কিন্তু, তখন জামাই আদর দিতে গিয়ে পয়সা খরচা হবে মনে রেখো।

এভাবে হেসে উড়িয়ে দেই এসব বিষয়।

বিকেলে বান্ধবীদের আসরে সুমি বহু কথা শুনেছে আমার সম্পর্কে, বান্ধবীরা বলছে,– বিয়ের পরে যদি বাপের বাড়িতেই থাকতে হবে, তাহলে বিয়ে করলি কেন? নিজের সংসার হবে, মনের মতো সংসার সাজাবি, তা না করে জামাইকে ঘরজামাই করে বাপেরবাড়ি পড়ে আছিস।

আর একজন বান্ধবী বলছে,– আরে সংসার সাজাবে কী, কাজ কাম নাই, বেকার স্বামীদের ঘরজামাই থাকা ছাড়া আর উপায় কী।

সবমিলিয়ে রেগে তেলেবেগুন সুমি, ভীষণ ক্ষেপেছে আমার ওপর।

রাতে ঘরে ফিরে একটা হাসি দিয়ে সুমির হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলাম। সুমি সিঙ্গারা খুব পছন্দ করে, তাই প্রায় দিন সিঙ্গারা নিয়ে আসি প্যাকেটে করে। প্যাকেটটা ছুড়ে ফেলে দিলো সুমি!

হঠাৎ এমন ব্যবহারে আমি ভীষণ অবাক হলাম, এরকম কিছু সুমির কাছ থেকে কোনদিন কল্পনায়'ও আশা করিনি।

চোখে জল টলমল করে উঠলো আমার নিজের অজান্তেই । ভালোবাসার মানুষটার দেয়া অল্প আঘাত'ও শতগুণ হয়ে কলিজায় আঘাত করে।

এবার সুমি উচ্চস্বরে বলতে লাগলো,– নিজের বাড়িতে বউকে রাখার ক্ষমতা না থাকলে বিয়ে করতে বলছে কে? শ্বশুরবাড়ি ঘরজামাই থাকতে লজ্জা করেনা, লজ্জা শরম থাকলে তো, নিষ্কর্মা একটা, বেহায়া, নির্লজ্জ একটা জুটেছে কপালে।

ঘরের সবাই এসে আমাদের রুমের সামনে জড়ো হয়েছে ইতিমধ্যে। সুমির বাবা ধমক দিয়ে বলল,–কী বলছিস এইসব সুমি, চুপ কর একদম।

আমি শ্বশুরকে বললাম,– আব্বা আপনার একটা ছেলে আছে? এই বয়সে আপনার বাজারঘাট, কাজ বাজ করা সম্ভব? আমি যতটুকু সম্ভব আপনার ছেলের শূন্যস্থান পুরণের চেষ্টা করেছি। আব্বা আম্মা একত্রে এক্সিডেন্ট করে মারা যাবার পরে আব্বার পেনশনের টাকা আমি পাচ্ছি, ব্যাঙ্কে আব্বা আমার জন্য টাকা রেখে গেছে, আমার শেয়ারের ব্যবসা আছে হয়তো এটা জানাইনি সুমিকে, তাহলে আমি নিষ্কর্মা কীভাবে? যখন ইচ্ছা আমি নতুন বাড়িঘর করতে পারি। ইচ্ছা করলে সুমিকে নিয়ে আমি আমাদের পুরনো বাড়িতেই থাকতে পারি, কিন্তু সেখানে মা-বাবা নেই। আপনারা তো সবই জানেন।

তারপর আমি সুমিকে বললাম,– আমার ঘর জামাই থাকার কারণ শুনবা, সেই ছোটবেলা থেকে মা-বাবা হারিয়ে দাদার বাড়িতে বড়ো হয়েছি, বিয়ের পরে তোমার বাড়িতে তোমার মা-বাবার আদর স্নেহের মাঝেই আবার খুঁজে পেয়েছি মা-বাবাকে, মা-বাবার শূন্যতা তারা পূর্ণ করেছে, এই জন্য লোকের কথা শুনেও এখানে পড়ে আছি। শুধু তোমাকে নিয়ে একটা সংসার চাইনি, চেয়েছি একটা সংসারে তুমি আমি এবং মা-বাবা থাকবে, একটা সুখী পরিবার, একটা পূর্ণ পরিবার দরকার আমার। ঠিক আছে আমি এখন চলে যাচ্ছি, এই বাড়ির আশেপাশেই জমি কিনে নতুন বাড়ি করবো যত দ্রুত সম্ভব।

তারপর আমি আমার জামাকাপড় ব্যাগ ভরতে শুরু করলাম, সুমি একপাশে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।

জামা কাপড় ব্যাগভর্তি করে সুমির হাত ধরে বললাম,– চলো এবার।

সুমি অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে রইলো।

আমি বললাম,– তুমি কি ভেবেছো তোমায় ছেড়ে একলা চলে যাবো, সেটা সম্ভব নয়, আমি গাছতলায় থাকলে তুমিও আমার সাথে থাকবা। আমাকে মশায় কামড়ালে তুমি মশা তাড়াবা, তুমি তো আমার কলিজা।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে সুমি হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে বললো,– আমার ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করে দাও, তোমার কোথাও যেতে হবেনা, এখানেই থাকবো আমরা।

আমি সুমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,– তোমার ভুল হবে কেন, তুমি আমার লক্ষী বউ, না বুঝে বলেছো হয়তো। সমস্যা নেই, আমরা এখানেই থাকবো, কিন্তু এই বাড়ির আসেপাশে নতুন বাড়ি করে রাখবো।

শুয়ে পড়লাম বিছানায়, সুমি পাশে শুয়ে কেঁচোর মতো মোড়ামুড়ি করছে। আমি বললাম,– কি ব্যাপার, ভ্যাক্সিন দিয়ে শান্ত করতে হবে নাকি সুন্দরী?

সুমি বললো,–ভ্যাক্সিন ফ্যাক্সিন পরে আমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরো।

ধরলাম।

এবার বললো,– সত্যি রাগ করোনি তো?

বললাম,– একদম না।

সুমি বললো,– তাইলে আদর করে দাও এখন।

বললাম,– আজ বিরতি, কালকে হবে।

সুমি মিষ্টি হেসে আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললো,– বাকীর নাম ফাঁকি, আদর করে দিবা নাকি সারারাত ঘরের বাইরে থাকতে চাও মিস্টার ঘরজামাই?

আমি সুমির কপালে একটা চুমু খেয়ে বললাম,– লাইট অফ করে আসো, বাইরে থাকার দরকার নাই, ঘরেই থাকুক ঘরজামাই।

 

ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।