একদিন অফিসে থাকা অবস্থায় দুই বার কল দিয়েছিলো আমার বেডমেট। কল না ধরার কারণে শাস্তি সরূপ ওর অগোছালো চুলগুলো চিরুনি করে দিতে হয়েছিলো।
আরেকদিন ওর সাথে ঝগড়া করে অফিসে আসলাম। অফিসে বসে একটু ফ্রী টাইমে ফেসবুকের টাইমলাইন ঘাঁটছিলাম। হঠাৎ একটা পোস্ট চোখে পড়লো। পোস্টটা ছিলো এমন "বুদ্ধিমানরা বউ পিটায় না, অফিস থেকে ফেরার পথে দুই কেজি গুঁড়া মাছ কিনে নেয়"। পোস্টটা ভালোই লেগেছিলো। আমিও তাই করলাম। যখন মাছ কিনতেছিলাম তখন ও কল দিয়েছিলো আর আমি রিসিভ করে বললাম মাছের বাজারে। ও ঠিক আছে বলে লাইন কেটে দিলো।
গুঁড়া মাছ নিয়ে বাসায় ফিরছিলাম আর মিট-মিট করে হাসতেছিলাম। আজ বুঝবা পাখি কত ধানে কত চাল। বাসায় ফিরে দেখি ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে ব্যন্ডেজ করা। জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে। ও বলল, তরকারি কাঁটার সময় আঙুল কেঁটে গেছে। সে দোষ সম্পূর্ণ আমার। কারণ আমি অফিসে যাওয়ার সময় ঝগড়া করে গিয়েছি তাই নাকি এমনটা হয়েছে। রাতের রান্নাও করেনি। নিজের উপর খুব রাগ হলো। কি আর করার, ফান্দে পড়ে গেলাম।
বসে বসে সেই দুই কেজি গুঁড়া মাছ পরিস্কার করলাম, রান্না করলাম ও ফ্রিজে রাখলাম। ওর জন্য গর্ত খুঁড়ে সেই গর্তে নিজেই পড়লাম। মনে হলো আমি একা পড়লাম না, সাথে যা ছিলো সব নিয়ে পড়লাম। গুঁড়া মাছের ব্যপারটা ও বুঝতে পেরেছিলো আর তাই যখন আমি ওগুলো পরিস্কার করছিলাম তখন ও মিট-মিট করে হাসছিলো, তখন আমার শরীর রাগে জ্বলছিলো। মনে মনে পোস্ট দাতাকে খুঁজছিলাম। লোকটাকে পেলে এই গুঁড়া মাছ ওকে দিয়েই পরিস্কার করাতাম।
রান্না শেষে জিজ্ঞাস করলাম, খাইয়ে দিব? হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। এক প্লেটে খাবার নিয়ে নিজেও খেলাম আর ওকেও খাইয়ে দিলাম। খাওয়া শেষ আঙুলের ব্যন্ডেজটা খুলে ফেলল। দেখলাম ওর হাতে কিছুই হয়নি। আমার চোখ কপালে উঠলো। রাগে শরীরটা জ্বলতে শুরু করলো। ও বলল, এই যে মিস্টার কেমন দিলাম? এই বলে নাচতে শুরু করলো সাথে সাথে গান, ওগো শ্যাম.....
শুতে গেলেও ওর সাথে শোবার জায়গা নিয়ে হতো যুদ্ধ। এটা প্রায় রাতেই হতো! আমি যেখানে শুবো ওর সেখানেই শুতে হবে। আমিও নাছোড়বান্দা জায়গা থেকে সরতে রাজি না। তারপর শুরু হতো জায়গা নিয়ে যুদ্ধ৷ যুদ্ধ হলেও, আমি সবসময় চাইতাম ও জয়ী হোক। ওর যুদ্ধ জয়ের হাসিটা আমি মিছ করতে চাইতাম না। মশারি টানানো নিয়েও ছিলাম ঝামেলায়। আমার আগেই খেয়ে শুয়ে পড়তো। তারপর আর কারেন্টের শক দিয়েও ওকে উঠানো যেতো না। এই মশারি টানানোর মত কঠিন কাজ পৃথিবীতে আর একটা আছে বলে আমার মনে হতো না।
আজও চার বার কল করেছে ধরতে পারিনি। তারপর কল দিলাম কয়েক বার রিসিভ হলো না। আল্লাহ জানে আজ কপালে কি আছে! বাসায় যেতে ভয় ভয় লাগছে। তারপরেও বাসাটা যেহেতু আমার তাহলে তো যেতেই হবে। মনে সাহস সঞ্চয় করলাম। বাসার কলিং বেলটা বাজাতেই দরজাটা খুলে আস-সালামু আলাইকুম বলে সালাম দিলো। আমি তো অবাক! ভাবলাম ওকে জ্বিনে ধরলো নাতো! এভাবে সালাম দেয়না তো কখনো! রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। আমি ওয়া আলাইকুমুস সালাম বলে রুমে প্রবেশ করলাম। কাচ্চি বিরিয়ানির ঘ্রাণ আমার নাক ছুঁয়ে গেলো। আহ্ কি ঘ্রাণ! ঘ্রাণেই অর্ধ ভোজন।
আমি কাপড় ছেড়ে ফ্রেস হলাম। টেবিলে খুব সুন্দর করেই খাবার সাজিয়ে রাখা আছে। আমি খেতে বসলাম। আমার প্লেটে আগেই খাবার রাখা ছিলো। আমি ওকে বললাম, ঘটনা কি? আজ এতো আয়োজন? আমি তো ভয়ে ছিলাম, কল ধরতে পারলাম না, কি জানি আছে কপালে! ও বলল, তোমার অফিসে ব্যস্ততা থাকতেই পারে, আমি কিছু মনে করিনি। ওর কথা শুনে ভালোই লাগলো। যাক এতো দিনে সুবুদ্ধি উদয় হলো তাহলে!
আমি ওকে খাইয়ে দিতে চাইলাম কিন্তু ও কোন ভাবেই রাজি হচ্ছিলো না। আমি রহস্যের গন্ধ পেলাম। ও অন্য একটি প্লেটে খাবার নিলো। দুজনেই খাওয়া শুরু করলাম। আমি খেতে খেতে ওকে বললাম, আমার রুম থেকে ফোনটা নিয়ে এসো। ও খাবার রেখে রুমে চলে গেলো ফোন আনতে। এই ফাঁকে আমার প্লেটের অর্ধেক খারার ওর প্লেটে দিয়ে দিলাম। আর ওর অর্ধেক আমি নিয়ে নিলাম। একটু পর ও ফোন নিয়ে আসলো। আবার দু'জনে খাওয়া শুরু করলাম।
খাওয়া শেষ করার পাঁচ মিনিট পরই আমার পেটে কিট-কিট করা শুরু হলো। বুঝলাম টয়লেটে যেতে হবে। আমি টয়লেটে গেলাম। ও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শব্দ করে হাসতে শুরু করলো আর বলতে শুরু করলো, কেমন লাগে মিস্টার হিরো আলম? আমার বুঝতে বাকি রইলো না। আমিও মিট-মিট করে হাসতে থাকলাম টয়লেটে বসে। আর মনে মনে বললাম, অপেক্ষা করো হিরো আলমের হিরোইন! ওমা! একটু পরেই দরজায় খটখটানি। ও বলতে শুরু করলো, তারাতারি বের হও! এই শয়তান মোবাইল নিতে পাঠিয়ে কি করছ? আমি একটু দেরি করলাম ইচ্ছা করেই। ও দরজায় থাপড়ানো শুরু করলো। আমি দরজা খুলে বের হলাম। আমাকে ঠেলে টয়লেটে ঢুকে পড়লো। আমি টয়লেটের সামনে দাঁড়িয়ে হাসতে শুরু করলাম। বললাম, কেমন দিলাম! হিরো আলমের হিরোইন? ওমা! আমার আবার প্রকৃতির ডাক আসলো। আমি তখন টয়লেটের দরজা নক করতে শুরু করলাম। এবার ও বের হতে দেরি করতে শুরু করলো।
রাত দু'টা পর্যন্ত এক জন দরজার সামনে আরেক জন টয়লেটের ভিতরে। এভাবেই কাটলো। তারপর দু'জনেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। রাজ্যের সমস্ত ঘুম আমাদের চোখ জুড়ে নেমে আসলো। আর এভাবেই চলতে থাকলো আমাদের "টম এন্ড জেরি লাইফ"।
রাজিবুল
Comments (0)