স্যার যখন ক্লাসে রোল কল করছিলেন তখন আমি একটা টিকটিকির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। টিকটিকিটা কি অদ্ভুতভাবে একটা মশা ধরে খপ করে গিলে খেল। টিকটিকির মশা খাওয়ার দৃশ্যে যখন আমি বিভোর সেসময় স্যার বললেন,
-রোল নাম্বার, থ্রি।
স্যারের কন্ঠ আমার কানে যায় না। আমি চুপ হয়ে থাকি। একটু পর দেখলাম ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে উঠলেন। পরে দেখলাম আদোমুল স্যার নিশির কাছে এগিয়ে গেল। এরপর একটা মোটা কাঠের স্কেল দিয়ে স্যার নিশির হাতের তালুতে ঠাস ঠাস করে মারলেন । এরপর বললেন,
-তুই রাসেলের নাম প্রেজেন্ট করলি ক্যান ?
তুই কি রাসেল ?
.
নিশি স্যারের কথায় কোন প্রকার জবাব দেয় না। নিশি নামের এই মেয়েটা আমাকে অনেক দিন থেকে ফলো করে আসছে। এই ব্যাপারটা প্রথম-প্রথম আমার নজরে আসলেও পরে ব্যাপারটা জানাজানি হতে খুব বেশি সময় লাগে নি। আমি অবশ্য নিশিকে বলেছি- আমার পেছনে ঘুরে সময় নষ্ট করো না। আমার এইসব ভাল লাগে না। কিন্তু নিশি তা কিছুতেই বুঝে উঠে না।
.
এত তো কিছুদিন আগের ঘটনাটাই বলি,সেদিন আমার জন্মদিন ছিল। জন্মদিনে আমি আমার ক্লাসের সবাইকে ইনভাইট করলাম। শুধু করলাম না, নিশিকে। ভাবছিলাম নিশিকে যেহেতু ইনভাইট করি নাই তাই সে হয়ত আসবে না। কিন্তু আমার মনের ভাবনা ভুল প্রমানিত করে নিশি এলো। মজার ব্যাপার হলো নিশি নিজ থেকে আসেনি-আমাকেই ওকে নিয়ে আসতে হয়েছে।
.
আমি নিশির বাসায় যেতেই চাচ্ছিলাম না। কিন্তু আম্মু এসে যখন বললো,
-নিশির আব্বু কল করেছিল, মেয়েটা কান্নাকাটি করছে,ওকে দাওয়াত দেওনি কেন ?
-নিশিকে আমার ভাল লাগে না, আম্মু।
-কেন ভাল লাগে না, নিশি তোমার কি ক্ষতি করছে ?
-ও সারাক্ষন আমার পিছনে আঠার মত লেগে থাকে।
-আচ্ছা নিশি আসলে ওকে বারন করে দিব। সে যেন তোমাকে আর ফলো না করে। এখন যাও, ড্রাইভার নিচে অপেক্ষা করছে।
-আমি যাব না আম্মু ?
-যাও,নিশি আসলে আমি ওকে বুঝিয়ে বলব।
.
নিশির বাড়িতে গিয়ে দেখি কেঁদেকেটে সে অস্থির হয়ে আছে । আমাকে দেখামাত্রই সে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। জন্মদিনে সে আমাকে অনেকগুলো উপহার দিয়েছিল। আমার সেই উপহার গুলো এখনো আছে। আমি আম্মুকে বলেছিলাম,নিশির উপহার আমি নেব না। কিন্তু আমার কথা শুনে কান্নাজুড়ে দিল। তাই বাধ্য হয়ে ওর উপহার গুলো আমাকে নিতেই হলো।
.
এভাবে দিন যতোই যাচ্ছে নিশি আমাকে ততোই বিরক্ত করে ছাড়ছে । ওকে এখন আমি আর কিছুই বলি না। বলতে, বলতে নিজেই বিরক্ত হয়ে গেছি। ইদানীং সে আমার মোবাইলে অপ্রয়োজনে কল করে শুধু শুধু বক-বক করতে থাকে । আমি ওকে বলি,আর কল করবে না। কিন্তু তারপরো সে আমাকেই জ্বালাবেই। মেয়েটার লাজলজ্জা কিছুই নেই দেখছি। একটা মানুষ কিভাবে এত ছ্যাঁচড়া হতে পারে ?
.
৮ বছর পরের কথা।
নিশি আর আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়ে গেছে। আমি কখনোই ভাবতে পারি নিশির মত একটা জিদ্দি মেয়েকেই আমি বিয়ে করব । কিন্তু আমার অন্য কোন উপায় ছিল না। এই ৮ বছরে নিশি আমাকে শিখিয়েছে মানুষকে কিভাবে ভালবাসতে হয়। মানুষের মনে কিভাবে ভালবাসার সৃষ্টি করতে হয়। নিশির মতো অনেক মেয়েই আছে-যারা মানুষকে ভালোবাসার অস্বাভাবিক ক্ষমতা নিয়ে দুনিয়ায় আসে । এদের ভালবাসার কাছে নিজেকে বার বার পরাজয় বরন করে নিতে হয় ।
.
রাসেল আহমেদ
Comments (0)