Search

গল্প- ভয়

  • Share this:

'ভাই, ঐ বিল্ডিংয়ের ছাদে ভুলেও রাত তিনটার পর তাকাবেন না।'

কথাটা আমাকে বলেছিলো সিয়াম। ও আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। নতুন ফ্ল্যাটে ওঠার পরই ওর সাথে আমার পরিচয় হয়। খুব মিশুক ছেলে। প্রতিদিন বিকেলে ছাদে গেলেই ওর সাথে দেখা হয়, গল্প হয়। একদিন গল্প করতে করতেই কথাটা বলেছিলো আমাকে।

ও যে বিল্ডিংটা দেখিয়েছে, সেটা আমার রুমের জানালা দিয়ে খুব সুন্দরভাবে দেখা যায়‌। আমি রাত জাগি। রাত তিনটার পরও অনেকবার তাকিয়েছি ওটার দিকে। কিছুই দেখি নাই। সিয়াম যে তখন একটা চাপা মারছে, খুব ভালো মতোই বুঝতে পারছি। তাও আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'কেন? কি আছে ঐ বিল্ডিংয়ে?'

'ঐটার ছাদ থেকে এক মেয়ে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো রাত তিনটার সময়। এখন নাকি ঠিক ঐ সময় মাঝেমাঝেই মেয়েটাকে ছাদে দেখা যায়।'

আমি হেসে ফেললাম। 'আচ্ছা, তাই? আমার খুব ভূত দেখার শখ। এখন থেকে প্রতিদিন রাত তিনটার দিকে ঐ বিল্ডিংয়ের দিকে তাকায় থাকবো।'

আমি সত্যি সত্যি প্রতিদিন রাত তিনটায় বিল্ডিংটার দিকে তাকায় থাকতাম। ফলাফল শূন্য। কিচ্ছু দেখি নাই। শেষে বিরক্ত হয়ে তাকানো বন্ধ করে দিয়েছি। এরমধ্যে তখন আমার ইন্টার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ভূত-পেত্নি দেখার ইচ্ছা তখন এমনেও নাই।

ফিজিক্স এক্সামের দুইদিন আগে, বিকেলে ভালোমতো ঘুমিয়ে রাত জেগে পড়ার জন্য তৈরি হয়েছি। এরমধ্যেই খবর আসছে, ভাবির আব্বা অসুস্থ। আব্বা, আম্মা, ভাইয়া, ভাবি সবাই হাসপাতালে গেলেন। আমি বাসায় একা। সমস্যা নাই, রাতে এমন বাসায় একা থাকার অভ্যাস আছে আমার। ফ্রিজ থেকে আইসক্রিমের বক্স নামিয়ে খেতে খেতে ফিজিক্সের ম্যাথ করছি। এরমধ্যেই ঐ জানালায় চোখ গেলো।

দেখলাম, বিল্ডিংটার ছাদে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপার না, কোনো মেয়ে উঠতেই পারে ছাদে। আমি একটা ম্যাথ শেষ করে আবার ঐদিকে তাকালাম। দেখলাম, মেয়েটা দাঁড়ায় আছে আগের মতো। কিন্তু এবার আমার দিকে তাকায় আছে।

হঠাৎ মেয়েটা লাফ দিলো বিল্ডিং থেকে। আমি দৌড়ে গিয়ে জানলা দিয়ে নিচে তাকালাম। নাই, মেয়েটার লাশ বা কিছুই নাই। আমার তখন খুব ভয় লাগলো। জানালার থাই গ্লাস লাগায় দিলাম, পর্দা ফেলায় দিলাম। আব্বুর কাছে ফোন দিয়ে বললাম, ভয় লাগছে। আব্বুরা তখনই রওনা দিলো। হাসপাতাল থেকে বাসায় আসতে বিশ মিনিটের মতো লাগে।

ফোনটা রাখতেই কারেন্ট চলে গেলো হঠাৎ। আমাদের নতুন বাসায় তখনো আইপিএস লাগানো হয় নাই, পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে গেলো। এসময়ই শুনলাম, জানলায় বাইরে থেকে কেউ বাড়ি দিচ্ছে জোরে জোরে।

আমাদের বাড়ি পাঁচতলার ওপর। জানলায় বাইরে থেকে কাউকে বাড়ি দিতে হলে ওকে শূন্যে ভেসে থাকতে হবে। আমি পাথরের মতো জমে গেছি, নড়ার শক্তিও নাই। বাড়ির শব্দ বাড়ছে, বাড়ছে। এরপর হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেলো শব্দটা।

আমি কোনোরকমে বিছানায় বসলাম। তখনই মনে পড়লো, আব্বুদের রুমের সাথের বারান্দাটাও ঐ বিল্ডিংয়ের দিকেই। আর বারান্দার দরজাও খোলা।

ততক্ষণে আব্বুদের রুমে পায়ের আওয়াজ শুরু হয়েছে। কেউ হাঁটছে ঐ রুমে। হঠাৎ বেড়ে গেলো শব্দটা, কেউ যেন দৌড়ায় আসতে লাগলো আমার রুমের দিকে।

ভাগ্য ভালো, তখনই পাওয়ার চলে আসলো। আর কলিংবেলও বেজে উঠলো। আব্বুরা চলে আসছে।

আমার কথা কেউই বিশ্বাস করলো না। সবাই হাসতে লাগলো। ভাইয়া বললো, 'পড়া বাদ দিয়ে ঘুমাচ্ছিলি নাকি? এসব আজেবাজে স্বপ্ন দেখসোস?'

আমি জোর দিয়ে বললাম, সব সত্যি।

আমার কথা মিথ্যা প্রমাণ করতেই ভাইয়া গেলো আমার রুমে। জানলায় পর্দা টানানো ছিলো, পর্দা সরালো। এরপর চিৎকার করে সরে গেলো পিছে। জানলার বাইরের দিকে, থাই গ্লাসে রক্তাক্ত হাতের ছাপ।

এমন জায়গায় হাতের ছাপগুলো, যেখানে হাত রাখতে হলে শূন্যে ভাসতে হয়।

 

লেখা- সোয়েব বাশার

তারিখ- ০৮/৫/২০২১

(এক পর্বের গল্প)

Tags:

About author
আমি গল্প এবং বই প্রেমিক একজন মানুষ। গল্প এবং বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। যেখানেই যে গল্প অথবা কাহিনী খুজে পাই সেগুলো সংগ্রহ করি এবং আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও কয়েকটি গল্প লিখেছি তবে সেগুলোর সংখ্যাটা খুবই সামান্য।